admin
প্রকাশ: ২০১৭-০৮-১৭ ১৪:২৩:৪৭ || আপডেট: ২০১৭-০৮-১৭ ১৪:২৩:৪৭
বীর কণ্ঠ : বিদ্যালয়ে ছাত্রীদের নিয়ে গায়ে হলুদের আয়োজক রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার মহিশালবাড়ী মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হায়দার আলীর অপসারণ দাবি করেছে এলাকাবাসী। এ ঘটনায় জড়িত অন্যদের শাস্তিরও দাবি জানান তারা।
এ নিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল হয়। পরে বিদ্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করেন এলাকাবাসী। সেখান থেকে মিছিল নিয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার দফতরেও যান তারা। দোষীদের শাস্তি দাবিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন বিক্ষুদ্ধ এলাকাবাসী।
গত ১০ আগস্ট দুপুরে ক্লাস বন্ধ করে ছাত্রীদের নিয়ে বিদ্যালয়ে ঘটনা করে গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান করা হয় সহকারী গ্রন্থাগারিক মো. ইব্রাহিমের। প্রধান শিক্ষকের উদ্যোগে এ আয়োজনে অংশ নেন বিদ্যালয়ের অন্য শিক্ষকরাও।
ওই দিন বিকেলে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক হায়দার আলী ও সহকারী শিক্ষক মিজানুর রহমান তাদের ফেসবুকে গায়ে হলুদের তিনটি ছবি শেয়ার করেন। এ নিয়ে পরদিন জাগো নিউজে খবর প্রকাশিত হয়। সে খবর ভাইরাল হলে এলাকায় দেখা দেয় উত্তেজনা। পরে গায়ে হলুদের ছবিগুলো সরিয়ে নেন শিক্ষকরা।
পরদিনই ওই এলাকার বাসেদ আলীর মেয়ে নাজনিনেন সঙ্গে বিয়ে হয়েছে সহকারী গ্রন্থাগারিক মো. ইব্রাহিমের। সহকারী গ্রন্থাগারিক ইব্রাহিমের বাড়ি বিদ্যালয়ের পাশেই। এ আয়োজন নিয়ে তিনি বিব্রত জানালেও কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এদিকে, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হায়দার আলীর বিরুদ্ধে জমছে অভিযোগের পাহাড়। সাংবাদিক পরিচয় দেয়ায় উপজেলা শিক্ষা দফতর এসব অভিযোগ আমলে নিচ্ছে না। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে যোগসাজশ করে তিনি চালিয়ে যাচ্ছেন অনিয়ম।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, বিদ্যালয়ের নৈশ্য প্রহরী শামীম আহমেদকে দিয়ে বিদ্যালয়ে মাদক ব্যবসা করান প্রধান শিক্ষক। থানা পুলিশের তালিকায় নামও রয়েছে নৈশ্য প্রহরীর। এর আগে মাদকের মামলায় একবার গ্রেফতারও হন তিনি। পুলিশকে ম্যানেজ করে বিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরেই চলছে অবৈধ এ কারবার।
কয়েকজন অভিভাবক নাম প্রকাশ না করে জানান, নৈশ্য প্রহরী শামীম প্রধান শিক্ষকের আস্থাভাজন। তারা একই এলাকার বাসিন্দা। প্রধান শিক্ষকের প্রশ্রয়ে শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের সাথে প্রায় অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন তিনি। অভিযোগ দিয়েও প্রতিকার মেলে না।
বিষয়টি স্বীকার করেছেন বিদ্যালয়টির কয়েকজন শিক্ষক। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষক বলেন, কেবল ছাত্রী-অভিভাবকই নয় শিক্ষকদের সঙ্গেও চরম অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন নৈশ্য প্রহরী। জেনেও প্রধান শিক্ষক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেন না। কেনো ওই নৈশ্য প্রহরী বহাল তবিয়তে সে প্রশ্ন তাদেরও।
এ বিষয়ে কয়েক দফা যোগাযোগ করে প্রধান শিক্ষক হায়দার আলীর মুঠোফোনে সংযোগ পাওয়া যায়নি।
জানতে চাইলে উপজেলা শিক্ষা অফিসার সামশুল কবির বলেন, গণমাধ্যমে গায়ে হলুদের খবর প্রকাশিত হয়েছে। শিক্ষকদের ফেসবুকে ছবিও তিনি দেখেছেন। পরে বিদ্যালয়ে গিয়ে ঘটনার পুরোপুরি সত্যতা তিনি পাননি। এ সময় প্রধান শিক্ষকের সাথে তার যোগসাজশের অভিযোগ অস্বীকার করেন শিক্ষা কর্মকর্তা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিদ নেওয়াজ বলেন, মিছিল নিয়ে এলাকাবাসী তার দফতরে এসেছিলেন দোষীদের শাস্তির দাবিতে। তিনি জানিয়েছেন, লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবেন। সে অভিযোগও দেবে বলে জানিয়েছে এলাকাবাসী।
এদিকে, এখনও বিদ্যালয়ে গায়ে হলুদের খবর জানে না বলে জানিয়েছেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম।
তিনি বলেন, দোষীদের শাস্তি দাবিতে এলাকাবাসীর বিক্ষোভের খবরও তিনি জানে না। বিষয়টি গণমাধ্যমে এলেও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা কেনো তাকে জানাননি খতিয়ে দেখবেন। এ নিয়ে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা।