admin
প্রকাশ: ২০১৭-০৮-৩০ ০৪:৪৮:৪৭ || আপডেট: ২০১৭-০৮-৩০ ০৪:৪৮:৪৭
ডাঃ মুহাম্মদ ওমর ফারুক : প্রথমে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি,কারন চরিত্র গুলো আমাদেরই লোহাগাড়ার পরিচিতজনের।এই চরিত্র গুলো প্রকাশে আমার কোন অসৎ উদ্দেশ্য ছিলনা।
চরিত্র একঃ ছিল তিনি চট্টগ্রাম শহরের খুব বড় ব্যবসায়ী,শারীরিক গঠন ও চালচলনগুলো ছিল খুব সুন্দর এক কথায় সবারই অনুকরণীয়।যুব সমাজের অহংকার ছিল তিনি।তার পরিচয়টি ছিল সব চেয়ে বেশি তার ব্যবহৃত গাড়ির পরিচয়ে।সদা হাস্যোজ্জল ও পরোপকারী মানুষ ছিল তিনি।ওনাকে দেখলে এখনো সাধারণ মানুষের নিজের অজান্তে দীর্ঘনিঃস্বাস চলে আসে তার এই করুন পরিনতির জন্য।যিনি শত শত পরিবারের অভাব দুর করেছে নিজের পকেটের টাকা দিয়েছিল,কিন্তু আজ তারই পরিবার অভাবে নিমর্জিত।শত শত ছেলে মেয়ের লেখা-পড়ার সাহায্যে যিনি এগিয়ে এসেছিল,তারই সন্তান এখন টাকার অভাবে লেখা-পড়া বঞ্চিত।যার কাছ থেকে টাকা নিয়ে বন্ধু-বান্ধব চলত,তিনি আজ ৫টাকার জন্য মানুষের কাছে হাতপাতে।যার পোশাক আশাক ছিল সাধারনের মানুষের অনুকরণীয়,তিনি আজ ছিড়া কাপড়ে ভবঘুর।কারন আজ তিনি নিঃস্ব, বড্ড একা ও ক্লান্ত।
চরিত্র দুইঃ দক্ষিণ চট্টলার সুপ্রসিদ্ধ পীর পরিবারের সন্তান,সুদর্শন চেহেরার অধিকারী ছিল।আমাদের সাথে বন্ধু সুলভ আলাপ ছিল তার।লেখা পড়ায়ও খুব মেধাবী ছিল সে।তার বিপদগামী চরিত্র(বদ অভ্যাস) দেখে অভিভাবকগন তাকে বিয়ে করাইয়া দেয় ,এক বা দুই সন্তানের বাবাও সে।দাম্পত্য কলহ প্রায় লেগেই আছে শুনলাম।বউ অনেক বার বদঅভ্যাস পরিবর্তণ না করার কারনে বাপের বাড়ি চলে গিয়েছিল।সাময়িক পরিবর্তণের পর আবারও এখই রূপ।পৈত্রিক ভাবে অনেক সম্পদ পেয়েছিল সে,এখন শুধু বিক্রি করে করে চলে। মাঝে মধ্যে ভবঘুরের মত ময়লা কাপড়ে স্টেশনের আশে-পাশে দেখা যায়।দেখলে খুবই খারাপ লাগে।হাজার হোক বন্ধু ছিল সে আমার কোন দিন।
চরিত্র তিনঃ জন্মসুত্রে বড় লোকের ছেলে,মা-বাবার একমাত্র ছেলে হিসাবে যথেষ্ট আদরে বেড়ে ওঠেছিল সে।মা-বাবা জীবিত থাকা অবস্থায় খারাপ বন্ধুদের সাথে মিশেই অধঃপতনটি শুরু হয়।এরই মাঝে মা-বাবা মৃত্যু ও বিয়ে-শাদি করে ৪সন্তানের জনক হয় সে।কিন্তু অভ্যাসের কোন পরিবর্তন হয়নি,বরং ক্রমান্নয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। এই বদ অভ্যাসের প্রভাবে সংসারে অশান্তি,টাকা-পয়সার অভাব,অনেক জায়গা জমি বিক্রি করে পেলে সে।এর মধ্যে উক্ত বদ অভ্যাসের প্রভাবে পায়ের এক আঙ্গুলে গ্যাংগ্রিন দেখা দেয়।ডাক্তার দেখালে ডাক্তারের প্রথম কথা ছিল তার লালন করা বদ অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে,প্রথম কয়েক সপ্তাহ ত্যাগ করে কিছুটা সুস্থ হলে আবারও আগের অভ্যাসে ফিরে আসে।এবার গ্যাংগ্রিনও ক্রমান্নয়ে পায়ের উপরের দিকে বৃদ্ধি পেতে থাকে ।আমি নিজেও কয়েক বার চিকিৎসা করেছিলাম,কিন্তু অভ্যাস পরিবর্তন না করাতে ব্যর্থ হই। গ্রাংগ্রিনের যন্ত্রনায় সারা রাত কাটত নির্ঘুম।রোগ যন্ত্রনার কাতরে আশে-পাশের লোকও ঘুমাতে পারত না।পরে ডাক্তারের সিদ্ধান্তে পায়ের হাটু পর্যন্ত কেটে ফেলা হয় এবং কিছু দিনের জন্য বদ অভ্যাস থেকেও বিরত থাকে সে ।কিন্তু সময়টা বেশি দিন পার হয়নি আবারো পুরানো বদ অভ্যাস শুরু করে সে এবং এক বছরের মধ্যে মৃত্যু বরন করে সে। আজ তার পরিবার পরিজন বেচে আছে খুবই দূঃখ কষ্টে।
শেষ কথাঃ উপরে আমি যে তিনটি চরিত্র তুলে ধরেছি,এগুলো আমাদের খুবই পরিচিত চরিত্র।এই রকম হাজারো চরিত্র সৃষ্টি হচ্ছে আজ আমাদের চার-পাশে।আসুন আমরা এই ধরনের অনাকাঙ্কিত চরিত্র গুলো থেকে নিজেকে হেফাজত করি এবং অন্যকে হেফাজতের জন্য উৎসাহ যোগায়।
উল্লেখ্যঃ আমি উপরের তিন চরিত্রের যে ভয়ানক দিকটি প্রকাশ করতে চেয়েছি তা হল “মাদক”।সুতরাং সাবধান থাকুন এবং অন্যকেও সাবধান করুন।।
লেখকঃ
ডাঃ মুহাম্মদ ওমর ফারুক (হোমিওপ্যাথ)
মাদক বিরোধী সংগঠক।