চট্টগ্রাম, , শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

admin

হিলফুল ফুজুলঃ মক্কা থেকে লোহাগাড়া

প্রকাশ: ২০১৭-০৮-৩১ ১১:৩৪:৪০ || আপডেট: ২০১৭-০৮-৩১ ১১:৩৪:৪০

 

এম. হোছাইন মেহেদী:  সামর্থ্যানুযায়ী আর্ত-মানবতার সেবায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো সবার কর্তব্য।  তাইতো বলা হয়—” মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য।”

মানবতার এই মহতী সেবায় লোহাগাড়ার কিছু ভাই নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে যাচ্ছেন, যার সর্বশেষ নজির ক্যান্সার আক্রান্ত মেধাবী শিক্ষার্থী তৈয়বুল হাসান।

এটা আমাদের জন্য খুশির খবর যে, অসহায়দের সুচিকিৎসা ও সেবার জন্য লোহাগাড়ায়ও “হিলফুল ফুজুল” নামে একটি প্লাটফর্ম গঠিত হচ্ছে।

আশা করি দল-মত নির্বিশেষে, সকল বির্তকের উর্ধ্বে উঠে এই প্লাটফর্মের সহযোগী হবেন সবাই।

যুবক বয়সে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কর্তৃক গঠিত “হিলফুল ফুজুল” সংগঠন সম্পর্কে আমাদের  সবার কম বেশি ধারণা আছে। তবুও এ সম্পর্কে একটু চোখ বুলিয়ে নিই।

 

হিলফুল ফুজুলঃ

হিলফ উল ফুজুল বা হলফ-উল-ফুযুল (আরবি: حلف الفضول‎) এক সংঘ বিশেষ। এই শব্দটির অর্থ হল কল্যাণের শপথ (হলফ অর্থ শপথ ও ফুযুল বা ফযিলত মানে মঙ্গল)। এটি যিলকদ মাসে প্রতিষ্ঠিত হয়। এই সংঘ আরব যুবক তথা মানবতার মুক্তির দূত হযরত মুহাম্মদ(সঃ) প্রতিষ্ঠা করেন। এই সংঘ পবিত্র মক্কা শহরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ইসলাম পুর্বযুগে এই সংঘ প্রতিষ্ঠা করেন। এই সংগঠনের কাজ ছিল পীড়িতদের সাহায্যদান, দুঃস্থদের আশ্রয়দান ও অসহায়দের সহায়তা করা। এই সংগঠনের প্রভাবে মক্কায় অনেক বিপর্যয় থেকে রেহাই পায়। কাবাঘরের কালোপাথর পুনঃপ্রতিষ্ঠার সময়ও এই সংঘ ভুমিকা নেয়।

 

হিলফুুল ফুজুল প্রতিষ্ঠার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস ও কারণঃ

 

‘হিলফুল ফুজুল’ যার অর্থ হচ্ছে ‘শান্তি সংগঠন’। রাসূল (সাঃ) ১৪ বছরে পা দিলেন। হঠাত্‍ করে মক্কার কুরাইশ ও কায়েস এই দুই গোত্রের মধ্যে কোনো একটা ব্যাপার নিয়ে লড়াই বেঁধে গেলো। এরকমটি প্রায়ই হতো। আর লড়াই একবার শুরু হলে তার জের চলতো বহুদিন ধরে।

তুুচ্ছ বিষয় নিয়ে ঝগড়া-মারামারি করার জন্য উভয় গোত্রের লোকেরাই তৈরী হলো। নিজেদের সেনাদল এগিয়ে দিলো। কিশোর নবীও চাচা আবু তালিবের সাথে এই লড়াইয়ে শরীক হলেন। কিশোর নবী হলেন কিশোর সেনা। তবে এই লড়াইয়ে তিনি কাউকে একটিও আঘাত করেননি। শুধুমাত্র দুশমনরা তাঁর চাচা আবু তালিবকে লক্ষ্য করে যে তীর ছুঁড়েছিলো, তিনি সেই তীর ঠেকিয়ে তাঁকে রক্ষা করেছিলেন। ৪ দিন পর্যন্ত এই লড়াই চলে। শেষে কুরাইশরা যখন বিজয় লাভ করে, তখন উভয় গোত্রের মধ্যেই একটা মিটমাট হয়ে যায়। এই যুদ্ধকে বলা হয় ‘ফেজারের শেষ যুদ্ধ’। এর আগে ‘ফেজারে’ আরো ৩টি যুদ্ধ হয়েছিলো। ‘ফেজার লড়াই’ যখন শেষ হলো, তখন মক্কার সব গোত্রের লোকেরা একত্র হয়ে একটি আলোচনা সভায় বসলো, যাতে ভবিষ্যতে আর এমনটি না হয়। আমাদের কিশোর নবীও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। রাসূল (সাঃ)-এর চাচা ‘জোবায়ের বিন আবদুল মুত্তালিব’ বনী হাশেম ও বনী তামিম গোত্রের সকল তরুণ ও যুবককে ঐ সভায় একত্রিত করেন। সভাটি অনুষ্ঠিত হয়েছিলো, হযরত আয়েশা (রাঃ)-এর চাচাতো ভাই ‘আবদুল্লাহ্ বিন জুদয়ানের’ বাড়িতে। রাসূল (সাঃ)-এর পরামর্শ মাফিক সবাই একমত হয়ে, মিলে-মিশে থাকা তথা শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে একটা ‘একরার নামা’ বা ‘অঙ্গীকার পত্র’ প্রস্তাব করেন। এই ‘অঙ্গীকার পত্রে’ ফজল বিন ওয়াদা, ফজল বিন ফুজালা এবং ফজল ফুজাইল বিন হারেছ নামক মক্কার ৩ গোত্রপতি স্বাক্ষর করেন। তাঁদের এই কল্যাণ চুক্তির অনুকরণে রাসূল (সাঃ) পরবর্তীতে তাঁদেরই নামানুসারে নতুন এক সামাজিক যুব সংগঠন গড়ে তোলেন, যার নামকরণ করা হয়েছিলো ‘হিলফুল ফুজুল’।

 

রাসূল (সাঃ)-এর বয়স তখন ২০ বছরের কম নয়। দুনিয়ার প্রথম ‘শান্তি সংগঠন’-তিনিই ছিলেন এই দলের পরিচালক। এতে ৪ জন সদস্য ছিলেন। তাঁদের নাম হচ্ছে-ফজল, ফাজেল, মুফাজ্জল ও ফাজায়েল। কেউ কেউ মনে করেন, এই ৪ জনের নামানুসারেই এই সংগঠনটির নামকরণ করা হয় ‘হিলফুল ফুজুল’। সে যাই হোক, রাসূল (সাঃ) উক্ত সংগঠনের একজন উত্‍সাহী কর্মীরূপেও কাজ করেছিলেন। ফলস্বরূপ, দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়েছিলো তাঁর নাম এবং তাঁর শান্তি সংগঠন “হিলফুল ফুজুল’র” নাম। তাঁর সততা, সত্যবাদিতা, দয়া-দাক্ষিণ্য, ক্ষমা, সহিষ্ণুতা, সাহসিকতা আর আমানতদারীর নাম।

মোটকথা, রাসূল (সাঃ) ২০ বছর বয়সে নৈরাজ্যকর আরবের সমাজ ব্যবস্থায় শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সামাজিক যুব সংগঠন ‘হিলফুল ফুজুল’ গঠন করেন।

তবকাতে ইবনে সা’আদের এক বর্ণনায় রয়েছে, রাসূল (সাঃ) বলেন, “হিলফুল ফুজুলের ন্যায় কল্যাণমূলক সংগঠনের জন্য কেউ যদি আজো ডাক দেয়, তবে আমি হৃষ্টচিত্তে তাতে যোগ দেবো।

এম. হোছাইন মেহেদী

লেখক- শিক্ষক ও সাংবাদ কর্মী

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *