চট্টগ্রাম, , শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

admin

নিজ চোখে দেখা নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে আর্তনাদ

প্রকাশ: ২০১৭-০৯-০১ ০৪:১৬:৫৯ || আপডেট: ২০১৭-০৯-০১ ০৪:১৬:৫৯

 

বেলাল আহমদ, নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে থেকে ফিরেবৃহস্পতিবার ৩১ আগষ্ট। সকাল ৭ টায় প্রাইভেট জীপ যোগে লামা থেকে যাত্রা শুরু করে বেলা সাড়ে ১১টায় পৌছালাম বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার চাকঢালা এলাকার বড় ছনখোলা রোহিঙ্গা মুসলিম শরণার্থী শিবিরে। আমরা সাত জন। আমি সহ রফিকুল ইসলাম, তৈয়ব আলী, রফিক সরকার, সুদর্শন বড়ুয়া, আনোয়ার হোসেন, হাসান শাহীন। 

আমাদের সাথে নিলাম ৮০ টি পরিবারের জন্য কিছু ত্রাণ সামগ্রী। ৪০ পরিবার প্রত্যেকে দেয়া হল, ৫ কেজি চাল, ৫০০গ্রাম ডাল, ১০ পিচ ব্যবহারের কাপড় (পুরাতন), ১০ পিচ করে স্যালাইন, কিছু ঔষুধ, শুকনা খাবার (পাউরুটি)। 

আরো ৪০ পরিবারকে দিলাম চিড়াঁ ১ কেজি, গুড় আধা কেজি, ১০ পিচ ব্যবহারের কাপড় (পুরাতন), ১০ পিচ করে স্যালাইন, কিছু ঔষুধ, শুকনা খাবার (পাউরুটি)। যা ছিল শরণার্থী শিবিরের লোক অনুপাতে অতি অল্প। এই যেন সমুদ্রে ঢিল ছোড়া। কি করা… নিজের সার্মথ্য যেখানে অনেক সীমিত। আমি সমাজের বিত্তবানদের অনুরোধ করব সবাই যদি সামান্য  সহযোগিতা করি তাহলে অসহায় মানুষ গুলোর কিছুটা হলেও উপকৃত হবে। বিশেষ করে খাবার সামগ্রীর পাশাপশি মশারি, ত্রিপল বা পলিথিন, মোমবাতি, মশার কয়েল, কাপড় চোপড়, খাবার পানি বেশী প্রয়োজন রোহিঙ্গাদের।

 

প্রচুর বৃষ্টিপাত থাকায় আমরা একটি শরণার্থী শিবির ছাড়া অন্যগুলোতে যেতেই পারিনি। বড় ছন খোলা রোহিঙ্গা শিবিরটি ছিল সবচেয়ে বেশি রোহিঙ্গাদের অবস্থান। স্থানীয় লোকজন ও জনপ্রতিনিধিদের থেকে প্রাপ্ত তথ্য এবং আমাদের দেখা মতে এই ক্যাম্পে প্রায় ৭ হাজারের অধিক রোহিঙ্গা মুসলিম অবস্থান নিয়েছে। যার অধিকাংশ হচ্ছে বৃদ্ধ, নারী ও শিশু। জানা গেছে এই ক্যাম্পটি ছাড়া একই ইউনিয়নে আরো ৬টি ও পার্শ্ববর্তী লেমুছড়ি ইউনিয়নে ২টি রোহিঙ্গা ক্যাম্প রয়েছে। গত ১০ দিনের মধ্যেই গড়ে উঠেছে এই অস্থায়ী রোহিঙ্গা ক্যাম্প গুলো।

 

দেখা গেল, পাহাড়ে বাকেঁ বাকেঁ বাশঁ ও পলিথিন দিয়ে ছোট ছোট ঝুপড়ি গড়ে তোলা হয়েছে। অনেকে রয়েছে খোলা আকাশের নিচে। প্রতিটি ঝুপড়ির আকার ৫ হাত লম্বা ও ৪ হাত প্রস্থ। এই ছোট জায়গায় গাদাগাদি করে রয়েছে ২০/২৫ জন মানুষ। এরি মধ্যে বৃষ্টিতে ভিজছে আবার কখনও কাঠ রোদে পুড়ছে। পরিমাণে বেশী লোক হওয়ায় আলাদা আলাদা পাহাড়ে মহল্লা করে দেয়া হয়েছে। বড় ছন খোলা ক্যাম্পে এই রকম ১০টি মহল্লা রয়েছে। প্রতিটি মহল্লায় কয়েকজন নিয়ন্ত্রক রয়েছে। যারা বিভিন্ন অনুদান ও ত্রাণ তাদের মধ্যে বন্টন করে দেয়।

 

ওই এলাকায় গেলেই যে কোন মানুষের চোখের পানি আটকাতে পারবে না  মন হু-হু করে কেদেঁ উঠবে। বঞ্চিত ও অসহায় শিশু- নারীদের স্বজন হারানো কান্নায় আশপাশ ভারী হয়ে উঠেছে। বৃষ্টিতে ভিজছে ছোট ছোট শিশুরা। অসহায় তাদের অভিভাবক। তাদের ছলছল দৃষ্টি বলে দেয় তারা কত অসহায়। ক্ষুধা আর অসুস্থতার কারণে অনেকে দূর্বল হয়ে পড়েছে। প্রচুর বৃদ্ধ ‍ও শিশু মারা যাওয়ার আশংকার কথা বললো অনেকে। কয়দিন খায়নি, এমন প্রশ্নের উত্তরে মেহেরুন নামে একজন রোহিঙ্গা নারী বললেন, তিনদিন না খেয়ে আছি। ক্ষুধার কথা মনে নেই। নিজের চোখের সামনে পুরো এলাকা জালিয়ে দিয়েছে স্বজদের করুণ মৃত্যু দেখতে হয়েছে বলে আমি বাকরুদ্ধ। চোখের সামনে নিজের বসতবাড়ি পুরো এলাকা  জ্বালিয়ে দিয়েছে আরাকান আর্মিরা। মেরেছে স্বজনদের।

 

বিজিবির কড়া পাহাড়া রয়েছে প্রত্যেক জায়গায়। ৪টি চেকপোষ্ট অতিক্রম করে ও সর্বশেষ শরণার্থী শিবিরের মুখে অবস্থান করা বিজিবির কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে আমরা ত্রাণ দেয়ার সুযোগ পেয়েছি। বিশেষ করে আমরা “বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের” পরিচয় পত্র দেখাতে পারায় আমাদের ত্রাণ দেয়ার সুযোগ দেয়া হয়েছিল। তাও নিজের হাতে দুস্থদের হাতে তুলে দিতে পারিনি। প্রত্যেক মহল্লা থেকে ৩ জন করে ৩০ জনকে প্রতিনিধি ডেকে দিল বিজিবি জোয়ানরা। আমরা ত্রাণ গুলো সমবন্টন করে তাদের হাতে তুলে দিলাম।

 

এই কড়াকড়ি কেন বা বাংলাদেশী সাধারণ মানুষকে রোহিঙ্গা মুসলিমদের কাছে যেতে না দেয়ার কারণ জানতে চাইলে বিজিবি’র পক্ষ থেকে বলা হয়, স্থানীয় অনেকে এখানে এসে লুটপাট চালায়। তাছাড়া রোহিঙ্গারা সাথে নিয়ে আসা গরু, ছাগল ও মোরগ গুলো অতি অল্প দামে ক্রয় করে তাদের ঠকিয়ে যায়। অনেকে তাদের সম্পদ ছিনিয়ে নেয়। অসহায় ও বাস্তুহারা মানুষ গুলোর উপর চলে অমানবিক অত্যাচার। তাই এই কড়াকড়ি। যার বাস্তব চিত্রও দেখলাম নিজের চোখে। অনেকে রোহিঙ্গাদের এই দূর্বলতার সুযোগ বুঝে অতি অল্প টাকায় কিনে নিচ্ছে তাদের পশুপাখি গুলো। দেয়া হচ্ছেনা প্রকৃত মূল্য।

 

আর একদিন পরেই ঈদ। আমরা কত আনন্দ করব। অথচ রোহিঙ্গা মুসলিমরা জানেনা, তারা আগামীকাল বাচঁবে কিনা। কি হবে তাদের পরিনিতি। তার কোলের আদরের সন্তানকে বাচাঁতে পারবে কিনা। প্লিজ..  বিত্তবান মানুষ এগিয়ে আসুন। মানুষ হিসেবে বিবেচনা করে তাদের বাচঁতে সহায়তা করুন। আল্লাহ রোহিঙ্গা মুসলিমদের সহায় হোক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *