admin
প্রকাশ: ২০১৭-০৯-০৪ ১৪:২৫:৩০ || আপডেট: ২০১৭-০৯-০৪ ১৪:২৫:৩০
বীর কন্ঠ ডেক্স: মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান সহিংসতায় সীমান্ত পেরিয়ে প্রতিদিন বাংলাদেশে হাজার হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করছে। সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে পার হয়ে কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং,বালুখালী,টেকনাফের লেদা,নয়াপাড়া, শামলাপুর ছাড়াও বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিচ্ছেন তারা। প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ রোহিঙ্গা আসায় ক্যাম্পগুলোয় স্থান সংকুলান হচ্ছে না। ফলে ক্যাম্পে ঠাঁই মিলছে না অধিকাংশের। তারা রাস্তাঘাট,দোকানপাটসহ বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিচ্ছে।
সরেজমিন কুতুপালং ও বালুখালী ক্যাম্প ঘুরে দেখা গেছে,ক্যাম্পের প্রবেশ দ্বার দিয়ে দলে দলে রোহিঙ্গা ঢুকছে। কারও হাতে সন্তান, কারও হাতে হাড়ি-পাতিলসহ ছোটখাটো আসবাবপত্র। এসব রোহিঙ্গাদের বেশিরভাগ নারী ও শিশু। কার আগে কে পৌঁছবে- এই প্রতিযোগিতা তাদের মাঝে। কারণ যে আগে যাবে সে ঠাঁই পেতে পারে। এদিকে কুতুপালং অনিবন্ধিত ক্যাম্পের পরিধি বাড়তে বাড়তে এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে গভীর বনে প্রবেশ করছে ক্যাম্পের ঝুঁপড়ি ঘর। এরপরও স্থান সংকুলান হচ্ছে না তাদের। নতুন করে আসা রোহিঙ্গারা রাস্তা,বন্ধ দোকানপাট,স্কুল,কলেজ ও মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন পরিত্যক্ত জায়গায় আশ্রয় নিচ্ছেন। এসব লোকজনের পয়ঃনিষ্কাশন থেকে শুরু করে নানা দুর্ভোগে পড়েছে তারা।
সম্প্রতি শুরু হওয়া সহিংসতায় নতুন করে ঠিক কতজন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে এর কোনও সঠিক পরিসংখ্যান নেই প্রশাসনের কাছে। তবে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) ও জাতিসংঘের হিসাবে ৭৩ হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে বলে দাবি করা হলেও এই সংখ্যা লাখ পেরিয়ে গেছে।
কুতুপালং ক্যাম্পের ব্যবস্থাপনা কমিটির সাধরণ সম্পাদক মোহাম্মদ নুর বলেন, ‘ক্যাম্পের কোথাও জায়গা নেই। শুধু রোহিঙ্গা আর রোহিঙ্গা। প্রতিদিন শত শত রোহিঙ্গা পরিবার ক্যাম্পে প্রবেশ করছে। ছোট একটি ঝুঁপড়ি ঘরে গাদাগাদি করে থাকছে ১০-১৫ জন। এতেই তাদের শান্তি। এখন পর্যন্ত শুধু কুতুপালং ক্যাম্পেই অবস্থান নিয়েছে ২০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা।’ উখিয়ার বালুখালী অনিবন্ধিত ক্যাম্পের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি লালু মাঝি বলেন, ‘এই ক্যাম্প কানায় কানায় পূর্ণ। আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটে আসা রোহিঙ্গাদের জায়গা করে দেওয়া এখন দুঃসাধ্য হয়ে উঠেছে। ক্যাম্পে জায়গা না পেয়ে অনেকে খোলা আকাশে নিচে রাত কাটাচ্ছেন।’ গত দুই দিনে বালুখালী ক্যাম্পে কমপক্ষে পাঁচ হাজার মানুষ প্রবেশ করেছে বলে জানান তিনি।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফরুজুল হক টুটুল বলেন,সীমান্ত জুড়ে বিজিবি ও কোস্টগার্ড সদস্যরা দিনরাত পরিশ্রম করছেন। তাদের পাশাপাশি কক্সবাজার জেলা পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে। যাতে করে কোনও ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সে ব্যাপারে কঠোর নির্দেশনা রয়েছে। পুলিশ সেভাবেই কাজ করছে। কক্সবাজার জেলা প্রশাসক আলী হোসেন বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ ঠেকানোর চেষ্টা চলছে। তবে এই মুহূর্তে পরিস্থিতিটা অন্য রকম। দলে দলে রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে। আমাদের পক্ষ থেকে যথাসম্ভব চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি তাদের প্রতিরোধ করতে। রোহিঙ্গা পরিস্থিতি জানতে একটি কন্ট্রোল রুমও খোলা হচ্ছে।’
এদিকে,বাংলাদেশ হিন্দু,বৌদ্ধ,খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল কুতুপালংয়ে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা হিন্দুদের আশ্রয়স্থল পরিদর্শন করেছে। এসময় তারা ধর্ম,বর্ণ নির্বিশেষে সব নাগরিকদের নিরাপত্তা দিতে এবং মুসলিম নির্যাতন বন্ধে মিয়ানমার সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
গত ২৪ আগস্ট মিয়ানমারের আরকান রাজ্যে পুলিশ পোস্টে হামলা চালায় সে দেশের একটি বিদ্রোহী গ্রুপ। এতে ১২ পুলিশ সদস্য বহু রোহিঙ্গা হতাহত হয়। এ ঘটনায় মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে অভিযানের নামে সাধারণ মানুষ হত্যা, ধর্ষণ,বাড়িঘরে আগুনসহ নানা নির্যাতন অব্যাহত রেখেছে। এ কারণে প্রতিদিন বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে আসছে অসংখ্য রোহিঙ্গা।
জাতিসংঘের তথ্যমতে,এ পর্যন্ত ৭৩ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে। এছাড়াও নাফ নদীর জলসীমানা থেকে শুরু করে স্থল সীমানা পার হয়ে জিরো পয়েন্টে অবস্থান নিয়েছে হাজার হাজার রোহিঙ্গা।
এর আগে গত বছরের ৯ অক্টোবর একই ধরনের ঘটনা ঘটে। এসময় প্রাণ ভয়ে পালিয়ে আসে প্রায় ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা। এরপর আন্তর্জাতিক মহল নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করে মিয়ানমার সরকারের ওপর। তবে তারা এর তোয়াক্কা না করে আরকানে ফের সেনা মোতায়েন করলে বিদ্রোহী গ্রুপের সঙ্গে সংঘর্ষ জড়িয়ে পড়ে সেনাবাহিনী ও পুলিশ।