চট্টগ্রাম, , শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

admin

রোহিঙ্গাদের প্রবেশের সুযোগ দেওয়ায় বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জাতিসংঘ মহাসচিবের

প্রকাশ: ২০১৭-০৯-০৬ ০৬:৫৭:৪৫ || আপডেট: ২০১৭-০৯-০৬ ০৬:৫৭:৪৫

বীর কন্ঠ ডেস্ক : মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশের নিরাপত্তা ও মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুতেরেস। একইসঙ্গে তিনি রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ঢুকতে দেওয়ায় বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। মঙ্গলবার নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন জাতিসংঘ মহাসচিব। এ সময় তিনি বলেন, ‘অসহ্য যন্ত্রণা ও হতাশার শিকার প্রায় এক লাখ ২৫ হাজার মানুষ বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। শরণার্থীদের দেশে প্রবেশের সুযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্তের জন্য আমি বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। এটা উৎসাহব্যঞ্জক।’

 

আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির সাম্প্রতিক হামলারও নিন্দা জানান জাতিসংঘ মহাসচিব। তিনি বলেন, মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশের নিরাপত্তা ও মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে আমি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। এই রাজ্যে দীর্ঘমেয়াদে বৈষম্য, হতাশা এবং চরম দারিদ্র্যের ব্যাপারে আমরা সবাই সজাগ রয়েছি।

 

চলমান সহিংসতা থেকে বাঁচাতে পালাতে গিয়ে অনেকের প্রাণহানির কথাও উল্লেখ করেন জাতিসংঘ মহাসচিব। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের বিষয়ে অমীমাংসিত সমস্যাটি দীর্ঘদিনের। এটি আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতার একটি নিকৃষ্ট ফ্যাক্টর হয়ে উঠছে।

 

অ্যান্টোনিও গুতেরেস বলেন, এ বিষয়ে আমি লিখিতভাবে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতির কাছে উদ্বেগ জানিয়েছি। এতে চলমান সহিংসতার অবসান এবং সংকটের মূল কারণগুলো সমাধানের জন্য নানা পদক্ষেপ গ্রহণের প্রস্তাব করা হয়েছে।

 

তিনি বলেন, উত্তেজনা প্রশমন এবং বিষয়টির সামগ্রিক সমাধানের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আরও উদ্যোগী হয়ে সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

 

 

জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, চক্রাকার সহিংসতা বন্ধে মিয়ানমারের কর্তৃপক্ষকে পদক্ষেপ নিতে হবে। সবাইকে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ও সহায়তা দিতে হবে। জীবন রক্ষাকারী ত্রাণসামগ্রী পাঠানোর মানবিক বিষয়টি নিশ্চিত করতে তাদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।

 

অ্যান্টোনিও গুতেরেস বলেন, সংকটের মূল কারণগুলোর সমাধানের জন্য একটি কার্যকর কর্মপরিকল্পনা আর বিলম্বিত করা সম্ভব নয়। রাখাইন রাজ্যের মুসলমানদের জাতীয়তা অথবা অন্ততপক্ষে তাদের স্বাভাবিক জীবন নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য এখন একটি আইনি ব্যবস্থা নির্ধারণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাদের চলাফেরার স্বাধীনতা থাকতে হবে। শ্রমবাজার, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে তাদের অধিকার থাকতে হবে।

 

এদিকে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে চলমান সামরিক অভিযানে সহিংসতা ও হত্যাযজ্ঞ চলমান থাকায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপের মুখে পড়েছেন দেশটির ডি ফ্যাক্টো নেতা অং সান সু চি। শান্তিতে নোবেল জয়ী  এই নেতা ও তার সরকারের সমালোচনা করছে তুরস্ক, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও মালদ্বীপের মতো মুসলিম দেশগুলো। চলমান সহিংসতার সমালোচনা করে মিয়ানমারকে সতর্ক করেছেন যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন। দেশটির সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক চ্ছিন্ন করার ঘোষণা দিয়েছে মালদ্বীপ।

 

মিয়ানমারে জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিনিধি ইয়াঙ্গি লি সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের সুরক্ষা দিতে না পারায় সু চি’র সমালোচনা করেছেন। তিনি রাখাইনের পরিস্থিতিকে গভীর উদ্বেগজনক বলে আখ্যায়িত করেছেন। ২০১৬ সালের অক্টোবরের চেয়ে এবারের পরিস্থিতি ভয়াবহ উল্লেখ লি বলেছেন, কার্যত সরকার প্রধানের দায়িত্বে থাকা সু চি’র হস্তক্ষেপের সময় এসেছে। যে কোনও সরকারের কাছে প্রত্যাশা, তাদের এলাকায় যেন সবাই সুরক্ষিত থাকে।

 

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান বলেছেন, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমার সরকার গণহত্যা চালাচ্ছে। এ বিষয়ে কথা বলতে মঙ্গলবার মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দলের নেত্রী অং সান সু চি’কে ফোন করে তুর্কি প্রেসিডেন্ট। এ সময় তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। তাদের ওপর ক্রমবর্ধমান হামলায় তুরস্ক এবং সমগ্র মুসলিম উম্মাহ ক্ষুব্ধ ও গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।

 

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক এক টুইটে বলেছেন, রোহিঙ্গারা ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবিলা করছেন। মধ্য এশিয়ার কিরগিজস্তান মিয়ানমারের সঙ্গে এশিয়া কাপে বাছাই পর্বের ম্যাচ বাতিল করেছে। ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তায় মিয়ানমার দূতাবাসে পেট্রোল বোমা হামলা চালিয়েছে বিক্ষুব্ধরা।

 

সংখ্যালঘুদের ওপর চলমান নিপীড়ন সু চি’র দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে বলে সতর্ক করেছেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন। তিনি মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন ও সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন। এক বিবৃতিতে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছেন, দেশটির নেতা সু চি চলমান সহিংসতা বন্ধ করে দেশকে ঐক্যবদ্ধ করবেন।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *