admin
প্রকাশ: ২০১৭-০৯-০৭ ০৯:২৭:৫৭ || আপডেট: ২০১৭-০৯-০৭ ০৯:৩৯:৪৪
বীর কন্ঠ ডেস্ক: গত ২৫ অাগষ্ট শুরু হওয়া মিয়ানমার সরকারের রাখাইন রাজ্যে মুসলিম রোহিঙ্গা ও সনাতন ধর্মাবলম্বিদের উপর অব্যাহত হত্যাযঙ্গে দেশ ত্যাগের হিড়িকে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে আটকে পড়া রোহিঙ্গনিয়ে দেশ-বিদেশের সামাজিক মাধ্যমে যে জল্পনা-কল্পনা চলছিল এসব উপেক্ষা করে অবশেষে বাংলাদেশের সবুজ মাটিতে প্রাঁণ বাঁচাতে সক্ষম হয়েছে প্রায় তিন লাখ মিয়ানমারের অধিকার বঞ্চিত রোহিঙ্গা শরণার্থী। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদার মনোভাবে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রতি প্রশাসনের সদয় দৃষ্টির কারণে লাখ লাখ নারী-শিশু এবং পুরুষরা বাংলাদেশে এসে কোনরকম ঠাঁই গোজার সুযোগ হয়েছে। বিশেষজ্ঞ মহল বলছেন, রোহিঙ্গাদের প্রতি অল্পকদিনে বাংলাদেশ যে নজির দেখালেন তা বিশ্বরেকর্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে। মিয়ানমারের সামরিক জান্তা বাহিনীর চলমান রোহিঙ্গা নিধন মিশনে প্রতিদিন দেশ ছেড়ে পালিয়ে আসছে হাজার হাজার রোহিঙ্গা শিশু, নারী-পুরুষ।
নতুনভাবে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা ঝুপড়ি তৈরি করেছে কুতুপালংয়ে।
পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সাথে কথাবলে জানা যায়, রাখাইন রাজ্যের স্থানীয় মগ ও সেনাবাহিনী মিলে তাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিচ্ছে, নারীদের চরম নির্যাতন করে যুবকদের প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করছে। তাদের দাবি চলমান সহিংসতায় লক্ষাধিক লোকজন হতাহত হয়েছে। চলাচলের পথে মাইন দিয়ে রাখায় দিনদিন আরো হতাহতের ঘটনা বাড়ছে। ৪ ই সেপ্টেম্বর তুমব্রু সীমান্তে মাইনের আঘাতে এক রোহিঙ্গা নারী ক্ষত-বিক্ষত হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এসব সহিংসতার কারণে মুসলমান রোহিঙ্গা ও হিন্দুরা দেশত্যাগ করে বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে বারংবার প্রবেশ করার চেষ্টা করছে। এদের অনেকেই বাংলাদেশ সীমান্তের ভিতরে চলে এসেছে। আবার অনেক রোহিঙ্গা জিরো পয়েন্টে অবস্থান করছে। পালিয়ে আসা এসব রোহিঙ্গাদেরকে দেখা যায়, কেউ সামান্য কাপড় ও প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র নিয়ে চলে এসেছে আবার অনেকে এক কাপড়ে চলে এসেছে।
অনাহারে কাঁদছে রোহিঙ্গারা। খাবার দেখলেই প্রাণপণ ছুটছে তারা। ছবিটি সোমবার উখিয়া বালুখালী এলাকা থেকে তোলা।-ছবি শাহেদ মিজান।
কুতুপালং আনরেজিষ্ট্রাট ক্যাম্পের রাস্তার পাশে বসে থাকা কয়েকজন রোহিঙ্গার সাথে কথা বলে জানা যায়, পাথেয় হিসেবে প্রায় সকলে গৃহপালিত গবাদি পশু গুলো নিয়ে আসতেছে যেন উপস্থিত বিপদ সংকোলন করা যায়। তবে সীমান্তে কতিপয় দালালরা ঝাঁপটা মেরে আছে শুধু রোহিঙ্গাদের গরু-মহিষ, ছাগলগুলো কেনার জন্য। এসব দালালরা সিন্ডিকেট বসিয়ে কারবারি করার দরুন তারা সঠিক দাম না পেয়ে হয়রানির মুখে পড়ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তারা আরো জানায়, বাংলাদেশে এনে যতসামান্য দাম দিয়ে এসব গুরু ছাগল বিক্রি করে কোনরকম পলথিনের মোড়ানো আবাসস্থল নির্মানের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রাঁণ রক্ষায় চলে আসা রোহিঙ্গারা বলেন, এদের অধিকাংশই চার-পাঁচদিন অভুক্ত অবস্থায় না খেয়ে আছে। কেউ কেউ অভুক্ত অবস্থায় খাবার খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। মিয়ানমারের নির্মম সহিংসতায় বাংলাদেশের সীমান্তে চলে আসা এসব রোহিঙ্গাদেরকে উখিয়ার বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানবিক মানুষরা খাবার বিতরণ ও প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছেন বলে জানায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
কুতুপালং শরণার্থী ক্যাম্পের আলমাস নামের একলোক বলেন, এবারের সহিংসতায় দুই তৃতীয়াংশ মিয়ানমারের সম্ভ্রান্ত ও বিত্তশালী মুসলিম পরিবার পালিয়ে এসেছে যা ইতোপুর্বে কখনো দেখা যায়নি। তারা পুর্ব থেকে পরিচিত লোকজনের সাথে যোগাযোগ করে কোনরকম আশ্রয় নেওয়ার চেষ্ঠা করছে। রবিবার জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউনিএইসসিআর-র আঞ্চলিক মুখপাত্র ভিভিয়ান ট্যান বার্তা সংস্থা রয়াটার্সেক জানিয়েছিলেন ৭৩ হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে। তবে স্থানীয় লোকজন ও পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারদের ভাষ্যমতে এবারে অনুপ্রবেশকারীর সংখ্যা আরো অনেক বেশি। তাদের দাবি এবারে অন্তত ৩-৫ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকেছে। এদেরমধ্যে কুতুপালং রেজিষ্ট্রার ও আনরেজিষ্ট্রার ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে দেড়লাখ, বাকিরা তুমব্রু, ঘুমধুম, বালুখালি,উখিয়া-টেকনাফ, নাইক্ষ্যংছড়ির বিভিন্ন পাহাড়ে ইতোমধ্যে তারা আশ্রয় নিয়েছেন।
প্রাণ বাঁচানোর প্রাণপণ চেষ্টা
কুতুপালংয়ের কলেজ ছাত্র মিজান জানায়, এদের অধিকাংশ উলুবনিয়া, আমতলি, ঘুমধুম সীমান্ত দিয়ে এসেছে। তার ভাষ্যনুযায়ী পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের বেশিরভাগ নারী এবং শিশু তবে পুরুষদের সংখ্যা তুলনামুলক কম । সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কুতুপালং ও ঘুমধুম- তুমব্রুতে মোড়ে মোড়ে রোহিঙ্গাদের নিয়ে আসা গরু মহিষের জমজমাট হাট বসেছে। সেখান থেকে বিভিন্ন বেপারিরা পানি মুল্যে এসব গরু-মহিষ কিনে এনে জেলাব্যাপি ছড়িয়ে দিচ্ছে। অন্যদিকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা কোনভাবে বেঁচে থাকার মানসে উখিয়ার কুতুপালং, ঘুমধুম, তুমব্রুর পাহাড় ও সমতলভুমিতে পলথিন মুড়িয়ে বাঁশের খুঁটি দিয়ে ঘর বানাতে ব্যস্ত সময় পার করছে। এছাড়া অভুক্ত পরিবারের লোকজনদের খাবার খাওয়ানোর মানসে ক্যাম্পের কয়েকজনে মিলে মাটির চোলা তৈরি করে রান্না করার পরিবেশ করছে।
এখনো রোহিঙ্গাদের বাড়িঘর পোড়াচ্ছে রাখাইন ও সেনাবাহিনী।
এদিকে অভুক্ত শিশুরা তাবুর নিচে খাবারের অভাবে হাউমাউ কান্নাকাটির আহাজারি পরিবেশ যে কারো স্বাভাবিকতাকে অস্থির করে দিচ্ছে। আরো দেখা যায়, কোন স্বেচ্ছাসেবী তাদেরকে খাবার দিতে গেলে হাহাকার মনোভাবে তারা হাত উঁচিয়ে অভুক্ত চেহারায় ভীড় করছে রীতিমত। বিজিবি সদস্যদের সহমর্মিতার মনোভাবে জিরো পয়েন্টের নিকটস্থ বাড়িঘর হতে তাবুতে অবস্থিত রোহিঙ্গারা খাবার পানি কলসি ভরে নিতেও দেখা যায়। এমনকি উদার মনোভাবের মানসিকতায় নতুন করে গড়ে উঠা ক্যাম্প গুলোতে স্থানীয় উপজেলার বিভিন্ন তরুনরা এবং সামাজিক সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবীরা খাবার পরিবেশন করে সহানুভুতি প্রকাশের চেষ্টা করছেন। এতে এসব রোহিঙ্গারা একবেলা খাবার পেয়ে সন্তুষ্ট হচ্ছেন।
উখিয়া-টেকনাফের রাস্তায় রাস্তায় রোহিঙ্গারা।
অন্যদিকে যেসব রোহিঙ্গা আহত ও অসুস্থ হয়ে পড়ছে তারা কুতুপালং এমএসএফের ক্লিনিকে প্রাথমিক পর্যায়ের চিকিৎসা সেবা নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। সেখানকার এক চিকিৎসক জানায়, প্রতিদিন শতশত আহত নারী পুরুষ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে। ছোট ছোট শিশুরা পানিতে ভিঝে যাওয়ায় নিউমোনিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। এতোসব রোহিঙ্গাদের অনুপ্র
এতোসব রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশের মাঝেও গত ৪ ই সেপ্টেম্বর মাগরিবের সময় নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে তুমব্রু বাজারের পুর্বদিকে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী মুসলমানদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিতে দেখা যায়।
সূত্র -সিবিএন