চট্টগ্রাম, , শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

admin

বাংলাদেশ সীমান্তে ল্যান্ডমাইন বসাচ্ছে মিয়ানমারজেনে নিন কিভাবে বিস্ফোরিত হয় এসব ল্যান্ডমাইন

প্রকাশ: ২০১৭-০৯-০৭ ১১:১৫:০১ || আপডেট: ২০১৭-০৯-০৭ ১১:১৬:২৬

বীর কন্ঠ ডেস্ক: বাংলাদেশ সীমান্তে মিয়ানমারের ল্যান্ডমাইন: বাংলাদেশের সঙ্গে সীমান্তে ল্যান্ডমাইন পুঁতে রেখেছে মিয়ানমার। গত তিনদিন ধরেই এই ল্যান্ডমাইনগুলো সীমান্তে পুঁতে রাখা হয়েছে। বাংলাদেশের দুটি সরকারি সূত্রের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে আল জাজিরা।

 

সূত্র দু’টি জানিয়েছে, যেসব রোহিঙ্গা মুসলিম পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে তারা যেন আবার মিয়ানমারে ফিরে যেতে না পারে সেজন্যই হয়তো মাইনগুলো পুঁতে রাখা হয়েছে।

 

সীমান্তের কাছে মাইন পুঁতে রাখার ঘটনায় আজ আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবাদ জানাবে বাংলাদেশ। রয়টার্সের কাছে এসব তথ্য জানালেও সংবেদনশীলতার কারণে নিজেদের পরিচয় প্রকাশ করেননি তথ্যদাতারা।

 

মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে দ্বিতীয়বারের মতো অভিযান শুরু করার পর এখন পর্যন্ত ৪শ রোহিঙ্গা মুসলিম নিহত হয়েছে। এছাড়া প্রায় ১ লাখ ২৫ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।

 

একটি সূত্র মিয়ানমারকে জানিয়েছে, সীমান্তের পিলারের মাঝখানে কাঁটাতারের বেড়ায় নিজেদের এলাকায় ল্যান্ডমাইন পুঁতে রেখেছে মিয়ানমার।

 

দু’টি সূত্রই জানিয়েছে, মূলত বিভিন্ন প্রমাণ এবং গুপ্তচরদের কাছ থেকেই বাংলাদেশে মাইন পুঁতে রাখার খবর পেয়েছে। তারা বলেন, আমরা আমাদের গুপ্তচরদের কাছ থেকেই মাইন পুঁতে রাখার খবর নিশ্চিত হয়েছি।

 

ল্যান্ডমাইন কি ও কিভাবে কাজ করে: ১৯০৫ সালে প্রথম ল্যান্ড মাইন উদ্ভাবিত হলেও ১৯১৪ সালে সংগঠিত প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়কার ল্যান্ডমাইনগুলি প্রাণঘাতী ছিলো না। প্রাণঘাতী ল্যান্ডমাইনের প্রচলন শুরু হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়, ১৯৪২ সালে। ওগুলি মূলত অদম্য জার্মান ট্যাংকবহরকে থামানোর জন্যে ব্যাবহার করা হয়েছিলো।

 

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়কার ল্যান্ডমাইনগুলি এমনভাবে বানানো হতো যেনো এর বিস্ফোরণ শত্রুসেনাকে পঙ্গু করে দেয় কিন্তু জীবিত রাখে। এই স্ট্রাটিজি অনুসারে ল্যান্ডমাইন দিয়ে একই ঢিলে একাধিক পাখি মারা সম্ভবপর ছিলো। ল্যান্ডমাইন দিয়ে শত্রুকে পঙ্গু করে দেওয়া, তাকে হত্যার চেয়েও বেশী লাভজনক। পঙ্গু যোদ্ধারা মৃতদেহের মতোই আর যুদ্ধের ময়দানে ফিরতে পারে না। ঠিক যেনো এক একটা জীবন্ত লাশ। তাছাড়া প্রতিটা মৃত সৈন্যের পেছনে খরচ হতো মাত্র ৫০০ ডলার (কিংবা সামান্য একটু বেশী)। যুদ্ধে নিহত সৈন্যের অন্তষ্টিক্রিয়ায় খরচ হতো ৬০ ডলার আর বাকি ৪৪০ ডলার তুলে দেওয়া হতো স্বজনহারানো পরিবারটির হাতে। কিন্তু একজন যুদ্ধাহত পঙ্গু সেনাকে পুনর্বাসিত করতে ব্যয় হতো প্রায় ১১ হাজার ডলার। ওর প্রাথমিক চিকিৎসা, মানসিক চিকিৎসা, শারীরিক প্রশিক্ষণ, আর্থিক সহায়তা, পারিবারিক ভরণ-পোষণ, সামাজিক নিরাপত্তা ইত্যাদির পেছনে প্রায় বিশগুণ বেশী অর্থ খরচ হতো। একটা সংক্ষিপ্ত যন্ত্রণাদায়ক মুহূর্ত নয়, একজন যুদ্ধাহত সৈনিককে সারাজীবন মৃত্যুর স্বাদ বহন করতে হতো। পরিবারের চোখের মণি যেই লোকটা দিনরাত খেঁটে ঘরের সবার মুখে অন্ন তুলে দিতো, একটা ল্যান্ডমাইনের আঘাতে চোখের পলকেই সে পরিবারের মাথার বুঝায় পরিণত হয়। সে যুদ্ধে যেতে পারে না, সে অন্য কোন কাজ ও করতে পারে না, এমনকি প্রিয়তমা স্ত্রীর একান্ত জৈবিক আকাঙ্ক্ষা নিবারণেও সে অক্ষম। স্ত্রীর ভালবাসা ক্রমেই ক্ষয়ে যায়, জৈবিক তাড়নায় একটা সময় সে ঐ অসহায় সৈনিকের চোখের সামনেই অন্যের হাত ধরে দূরে চলে যায়। পেছনে পড়ে থাকে এক জীবন্মৃত সৈনিক যে তার বাকিটা জীবন পড়শিদের কাছে যুদ্ধের ভয়াল উপাখ্যান বর্ণনা করেই কাটিয়ে দেয়। কালের আবর্তে সেই ভয়াল উপাখ্যান বিভীষিকার রূপ ধারণ করে। শত্রু দেশের মানুষ যুদ্ধকে ভয় পেতে শুরু করে। ভয় তাদের যুদ্ধের ক্ষমতাকে কেড়ে নেয়, দেশপ্রেমকে ভুলিয়ে দেয়। এটা অনেকটা জীবন্ত দেহের ভেতরে রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়ার মতো। এভাবেই এক যুদ্ধাহত জীবন্মৃত সৈনিক লক্ষ লক্ষ মৃত সন্তান প্রসব করে। অতঃপর জন্ম হয় এক মৃত জাতি স্বত্বার যারা কোন পরিস্থিতিতেই লড়াইয়ে যেতে রাজি নয়। পরিশেষে মৃতদের উপর জীবিতরা জয়ী হয় এবং যুদ্ধের ইতি ঘটে।

 

প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ল্যান্ড মাইনের ব্যবহার: প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মান সম্রাট মহামান্য কাইজার এই ল্যান্ডমাইন স্ট্রাটিজি প্রবর্তন করেন। তার নির্দেশে ফ্রান্সের যুদ্ধে জার্মানরা এই স্ট্রাটিজির যথার্থ প্রয়োগ করে এবং হাতে নাতে ফলাফল দেখতে পায়। স্ট্রাটিজি অনুসারে জার্মানরা ফরাসী সৈন্যদের তিনদিক থেকে ঘিরে ফেলতো আর একটা দিক ওদের পালিয়ে যাওয়ার জন্যে ফাঁকা রাখতো। রাতের আঁধারে সেই ফাঁকা রাস্তার ধরে হাজার হাজার ল্যান্ডমাইন পূঁতে দেওয়া হতো। পরদিন ভোরে জার্মানরা তিনদিক থেকে এমন জোরালো আক্রমণ শুরু করতো যে ফরাসীরা সেই মাইন বিছানো ফাঁকা রাস্তা ধরে ছুটে পালাতে বাধ্য হতো। আর এভাবেই একদল ফরাসি জম্বির উদ্ভব হয় যারা এই জম্বি ইনফেকশনকে পুরো জাতির মধ্যে ছড়িয়ে দেয়।বাংলাদেশ সীমান্তে ল্যান্ডমাইন বসাচ্ছে মিয়ানমারজেনে নিন কিভাবে বিস্ফোরিত হয় এসব ল্যান্ডমাইন

 

 

বীর কন্ঠ ডেস্ক: বাংলাদেশ সীমান্তে মিয়ানমারের ল্যান্ডমাইন: বাংলাদেশের সঙ্গে সীমান্তে ল্যান্ডমাইন পুঁতে রেখেছে মিয়ানমার। গত তিনদিন ধরেই এই ল্যান্ডমাইনগুলো সীমান্তে পুঁতে রাখা হয়েছে। বাংলাদেশের দুটি সরকারি সূত্রের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে আল জাজিরা।

 

সূত্র দু’টি জানিয়েছে, যেসব রোহিঙ্গা মুসলিম পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে তারা যেন আবার মিয়ানমারে ফিরে যেতে না পারে সেজন্যই হয়তো মাইনগুলো পুঁতে রাখা হয়েছে।

 

সীমান্তের কাছে মাইন পুঁতে রাখার ঘটনায় আজ আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবাদ জানাবে বাংলাদেশ। রয়টার্সের কাছে এসব তথ্য জানালেও সংবেদনশীলতার কারণে নিজেদের পরিচয় প্রকাশ করেননি তথ্যদাতারা।

 

মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে দ্বিতীয়বারের মতো অভিযান শুরু করার পর এখন পর্যন্ত ৪শ রোহিঙ্গা মুসলিম নিহত হয়েছে। এছাড়া প্রায় ১ লাখ ২৫ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।

 

একটি সূত্র মিয়ানমারকে জানিয়েছে, সীমান্তের পিলারের মাঝখানে কাঁটাতারের বেড়ায় নিজেদের এলাকায় ল্যান্ডমাইন পুঁতে রেখেছে মিয়ানমার।

 

দু’টি সূত্রই জানিয়েছে, মূলত বিভিন্ন প্রমাণ এবং গুপ্তচরদের কাছ থেকেই বাংলাদেশে মাইন পুঁতে রাখার খবর পেয়েছে। তারা বলেন, আমরা আমাদের গুপ্তচরদের কাছ থেকেই মাইন পুঁতে রাখার খবর নিশ্চিত হয়েছি।

 

ল্যান্ডমাইন কি ও কিভাবে কাজ করে: ১৯০৫ সালে প্রথম ল্যান্ড মাইন উদ্ভাবিত হলেও ১৯১৪ সালে সংগঠিত প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়কার ল্যান্ডমাইনগুলি প্রাণঘাতী ছিলো না। প্রাণঘাতী ল্যান্ডমাইনের প্রচলন শুরু হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়, ১৯৪২ সালে। ওগুলি মূলত অদম্য জার্মান ট্যাংকবহরকে থামানোর জন্যে ব্যাবহার করা হয়েছিলো।

 

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়কার ল্যান্ডমাইনগুলি এমনভাবে বানানো হতো যেনো এর বিস্ফোরণ শত্রুসেনাকে পঙ্গু করে দেয় কিন্তু জীবিত রাখে। এই স্ট্রাটিজি অনুসারে ল্যান্ডমাইন দিয়ে একই ঢিলে একাধিক পাখি মারা সম্ভবপর ছিলো। ল্যান্ডমাইন দিয়ে শত্রুকে পঙ্গু করে দেওয়া, তাকে হত্যার চেয়েও বেশী লাভজনক। পঙ্গু যোদ্ধারা মৃতদেহের মতোই আর যুদ্ধের ময়দানে ফিরতে পারে না। ঠিক যেনো এক একটা জীবন্ত লাশ। তাছাড়া প্রতিটা মৃত সৈন্যের পেছনে খরচ হতো মাত্র ৫০০ ডলার (কিংবা সামান্য একটু বেশী)। যুদ্ধে নিহত সৈন্যের অন্তষ্টিক্রিয়ায় খরচ হতো ৬০ ডলার আর বাকি ৪৪০ ডলার তুলে দেওয়া হতো স্বজনহারানো পরিবারটির হাতে। কিন্তু একজন যুদ্ধাহত পঙ্গু সেনাকে পুনর্বাসিত করতে ব্যয় হতো প্রায় ১১ হাজার ডলার। ওর প্রাথমিক চিকিৎসা, মানসিক চিকিৎসা, শারীরিক প্রশিক্ষণ, আর্থিক সহায়তা, পারিবারিক ভরণ-পোষণ, সামাজিক নিরাপত্তা ইত্যাদির পেছনে প্রায় বিশগুণ বেশী অর্থ খরচ হতো। একটা সংক্ষিপ্ত যন্ত্রণাদায়ক মুহূর্ত নয়, একজন যুদ্ধাহত সৈনিককে সারাজীবন মৃত্যুর স্বাদ বহন করতে হতো। পরিবারের চোখের মণি যেই লোকটা দিনরাত খেঁটে ঘরের সবার মুখে অন্ন তুলে দিতো, একটা ল্যান্ডমাইনের আঘাতে চোখের পলকেই সে পরিবারের মাথার বুঝায় পরিণত হয়। সে যুদ্ধে যেতে পারে না, সে অন্য কোন কাজ ও করতে পারে না, এমনকি প্রিয়তমা স্ত্রীর একান্ত জৈবিক আকাঙ্ক্ষা নিবারণেও সে অক্ষম। স্ত্রীর ভালবাসা ক্রমেই ক্ষয়ে যায়, জৈবিক তাড়নায় একটা সময় সে ঐ অসহায় সৈনিকের চোখের সামনেই অন্যের হাত ধরে দূরে চলে যায়। পেছনে পড়ে থাকে এক জীবন্মৃত সৈনিক যে তার বাকিটা জীবন পড়শিদের কাছে যুদ্ধের ভয়াল উপাখ্যান বর্ণনা করেই কাটিয়ে দেয়। কালের আবর্তে সেই ভয়াল উপাখ্যান বিভীষিকার রূপ ধারণ করে। শত্রু দেশের মানুষ যুদ্ধকে ভয় পেতে শুরু করে। ভয় তাদের যুদ্ধের ক্ষমতাকে কেড়ে নেয়, দেশপ্রেমকে ভুলিয়ে দেয়। এটা অনেকটা জীবন্ত দেহের ভেতরে রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়ার মতো। এভাবেই এক যুদ্ধাহত জীবন্মৃত সৈনিক লক্ষ লক্ষ মৃত সন্তান প্রসব করে। অতঃপর জন্ম হয় এক মৃত জাতি স্বত্বার যারা কোন পরিস্থিতিতেই লড়াইয়ে যেতে রাজি নয়। পরিশেষে মৃতদের উপর জীবিতরা জয়ী হয় এবং যুদ্ধের ইতি ঘটে।

 

প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ল্যান্ড মাইনের ব্যবহার: প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মান সম্রাট মহামান্য কাইজার এই ল্যান্ডমাইন স্ট্রাটিজি প্রবর্তন করেন। তার নির্দেশে ফ্রান্সের যুদ্ধে জার্মানরা এই স্ট্রাটিজির যথার্থ প্রয়োগ করে এবং হাতে নাতে ফলাফল দেখতে পায়। স্ট্রাটিজি অনুসারে জার্মানরা ফরাসী সৈন্যদের তিনদিক থেকে ঘিরে ফেলতো আর একটা দিক ওদের পালিয়ে যাওয়ার জন্যে ফাঁকা রাখতো। রাতের আঁধারে সেই ফাঁকা রাস্তার ধরে হাজার হাজার ল্যান্ডমাইন পূঁতে দেওয়া হতো। পরদিন ভোরে জার্মানরা তিনদিক থেকে এমন জোরালো আক্রমণ শুরু করতো যে ফরাসীরা সেই মাইন বিছানো ফাঁকা রাস্তা ধরে ছুটে পালাতে বাধ্য হতো। আর এভাবেই একদল ফরাসি জম্বির উদ্ভব হয় যারা এই জম্বি ইনফেকশনকে পুরো জাতির মধ্যে ছড়িয়ে দেয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *