চট্টগ্রাম, , বৃহস্পতিবার, ৭ নভেম্বর ২০২৪

admin

সু চির ক্ষমতা আসলে কতটুকু?

প্রকাশ: ২০১৭-০৯-১৩ ১৭:০৬:১১ || আপডেট: ২০১৭-০৯-১৩ ১৭:০৬:১১

 

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে রোহিঙ্গাদের বিশাল স্রোত ও নিরাপত্তাবাহিনীর বর্বর কৌশল দেশটির নোবেল জয়ী ও ডি ফ্যাক্টো নেতা অং সান সু চির বিরুদ্ধে নিন্দার ঝড় তুলেছে। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সরকারের নেয়া আইনি পদক্ষেপে সমর্থন করেছেন তিনি। আগামী সপ্তাহে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের বিতর্কে সু চি অংশ নেবেন না বলেও খবর প্রকাশিত হয়েছে; তবে দেশের ভেতরে আসলে সু চির কতটুকু ক্ষমতা আছে?

অং সান সু চির সরকারি পদবী হচ্ছে ‌‘রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা’। তিনি এই পদ সৃষ্টি করেছেন, সংবিধানের একটি বিশেষ ধারাকে কেন্দ্র করে; যে ধারাটা মূলত তৈরি করা হয়েছিল তাকেই লক্ষ্য করে; বিদেশি স্বামী আছে অথবা বিদেশিরা দেশটির প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন না।

মিয়ানমারের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনীতিক হচ্ছেন সু চি এবং ২০১৫ সালে দেশটির জাতীয় নির্বাচনে ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) ভূমিধস জয়ে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি। মন্ত্রিসভা এবং তার দলের অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেন তিনি। পররাষ্ট্র মন্ত্রীর দায়িত্বেও আছেন সু চি।

দেশটির সংবিধান প্রণয়ন করা হয়েছিল পূর্ববর্তী সামরিক সরকারের আমলে। এই সামরিক সরকার ১৯৬২ সাল থেকে শাসন ক্ষমতায় ছিল। ২০০৮ সালে অবিশ্বাস্য এক গণভোটের মাধ্যমে এই সংবিধানের অনুমোদন দেয়া হয়। সেসময় সংবিধানের এই অনুমোদনে সু চি কিংবা তার দল এনএলডির কোনো সায় ছিল না।

সেনাবাহিনী ঘোষিত ‘বিকাশমান শৃঙ্খল গণতন্ত্র’র পরিকল্পনা ‌নিশ্চিত করাই ছিল এর মূল উদ্দেশ্য। সংবিধানের এই সংশোধনীর আওতায় সংসদের এক চতুর্থাংশ আসন সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়। স্বরাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা এবং সীমান্তসহ গুরুত্বপূর্ণ তিনটি মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণ অব্যাহত রেখেছে সেনাবাহিনী। এর অর্থ হচ্ছে দেশটির পুলিশের ওপরও নিয়ন্ত্রণ রয়েছে সেনাবাহিনীর।

শক্তিশালী জাতীয় প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা পরিষদের ১১টি আসনের মধ্যে ছয়টি আসনেও রয়েছে সেনাবাহিনী মনোনীত ব্যক্তিরা। গণতান্ত্রিক সরকার বাতিলের ক্ষমতা রয়েছে এই পরিষদের।

অনেক শীর্ষস্থানীয় পদের দখল করে আছেন সাবেক সামরিক কর্মকর্তারা। সেনাবাহিনীর ব্যবসায়ীক স্বার্থও রয়েছে। স্বাস্থ্য এবং শিক্ষা খাতের যৌথ বাজেটের চেয়েও ১৪ শতাংশ বেশি ব্যয় হয় প্রতিরক্ষা খাতে। ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে সেনাবাহিনী এবং সু চির অবস্থান ছিল তীব্র পরস্পরবিরোধী। সু চি ১৫ বছর গৃহবন্দি অবস্থায় ছিলেন।

নির্বাচনের পর তারা একসঙ্গে কাজ করার উপায় খুঁজে বের করেন। জনসমর্থন ছিল তার। জেনারেলদের হাতে ছিল আসল ক্ষমতা। সংবিধান সংশোধনের মতো সু চির অনেক চাওয়ার সঙ্গে সেনাবাহিনীর মতানৈক্য রয়েছে। গত ৭০ বছর ধরে মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীর সঙ্গে সীমান্তে বিভিন্ন জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে শান্তি আলোচনা নিয়েও সেনাবাহিনীর সঙ্গে বিভেদ আছে।

তবে তারা অর্থনৈতিক সংস্কার, উন্নয়ন এবং স্থিতিশীলতার প্রয়োজনীয়তার ব্যাপারে একমত। সু চির জনপ্রিয় মন্ত্র হচ্ছে ‌‘আইনের শাসন’। একই সঙ্গে দেশটিতে দ্রুত পরিবর্তনের কারণে সামাজিক উত্তেজনাও বাড়ছে।

 

বাড়ছে দ্বন্দ্ব

কিন্তু রোহিঙ্গা ইস্যুতে অত্যন্ত সাবধানে চলতে হবে সু চিকে। রোহিঙ্গাদের জন্য দেশটিতে জনগণের সহানুভূতি একেবারেই তলানিতে। রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের নাগরিক নয় বলে সরকারের যে দৃষ্টিভঙ্গি আছে, অধিকাংশ বার্মিজ জনগণও তাই মনে করে। এমনকি কয়েক প্রজন্ম ধরে এই রোহিঙ্গাদের অনেকেই দেশটিতে বসবাস করে এলেও অনেকেই তাদেরকে অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসী মনে করে।

গত বছরের অক্টোবরে এবং গত আগস্টে পুলিশের পোস্টে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (এআরএসএ) বিদ্রোহীদের হামলার পর এই দ্বন্দ্ব ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।

রাখাইন রাজ্যে স্থানীয় বৌদ্ধরা আরো প্রতিকূলতায় রয়েছেন। কয়েক দশক ধরে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে তাদের সংঘাত চলে আসছে।রোহিঙ্গাদেরকে বাঙালি হিসেবে দাবি করে বৌদ্ধরা।

রাখাইনের অনেক বৌদ্ধর বিশ্বাস, তারা শেষ পর্যন্ত সংখ্যালঘু হয়ে পড়বেন। এমনকি তাদের পরিচয় বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে বলেও শঙ্কা রয়েছে তাদের। রাখাইন জাতীয়তাবাদী পার্টি এএনপি স্থানীয় বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠ। বৌদ্ধদের জন্য পুলিশেরও শক্তিশালী সহানুভূতি রয়েছে। পুলিশের প্রায় অর্ধৈক কর্মকর্তাই রাখাইনের বৌদ্ধ।

তবে বাংলাদেশ সীমান্তের সঙ্গে উত্তরাঞ্চলের রাখাইন রাজ্যের আসল ক্ষমতায় সেনাবাহিনী। এই রাজ্যে প্রবেশ অত্যন্ত সীমিত এবং নিয়ন্ত্রিত।

দেশটির শক্তিশালী সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল মিন অং হ্লেইং এটা পরিষ্কার করেছেন যে, রোহিঙ্গাদের জন্য তার সহানুভূতি নেই।

গণমাধ্যমের অবস্থান কেমন?

বর্তমানে চলমান ক্লিয়ারেন্স অপারেশনকে ১৯৪২ সালের আগের একটি সমস্যা শেষ করার জন্য চালানো হচ্ছে বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। ওই সময় রোহিঙ্গা ও রাখাইন বৌদ্ধদের মধ্যে তিক্ত সাম্প্রদায়িক লড়াই দেখে জাপানি ও ব্রিটিশ বাহিনীর মধ্যে সম্মুখযুদ্ধের অবসান ঘটেছিল।

রাখাইনে বর্তমানে দেশের বাইরের অর্থায়নে সন্ত্রাসী কার্যক্রমের বিরুদ্ধে লড়াই চলছে বলে সেনাবাহিনী মন্তব্য করেছে। সেনাবাহিনীর এই মতের সঙ্গে রাখাইনের অধিকাংশ মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির মিল রয়েছে। এতে সংঘাতপূর্ণ এলাকায় ব্যবহৃত ‘ফোর কাটস’ কৌশলের প্রয়োগ করা হচ্ছে বলে ধারণা করা হয়।

এই কৌশলের মাধ্যমে সেনাবাহিনী বিদ্রোহীদের সমর্থনকারী কোনো সম্প্রদায়কে ধ্বংস করে। তবে এই ক্ষেত্রে গণমাধ্যমও একটি ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করে। গত পাঁচ বছরে মিয়ানমারে সবচেয়ে বড় কিছু পরিবর্তন ঘটেছে। এর মধ্যে নতুন স্বাধীন গণমাধ্যম, মোবাইল ফোন এবং ইন্টারনেট ব্যবহারের নাটকীয় প্রবৃদ্ধি ঘটেছে। এমন একটি দেশে এই উন্নয়ন ঘটেছে যা সম্ভবত এক দশক আগেও কল্পনাতীত ছিল।

নীতিবান কর্তৃপক্ষ?

তবে আসলে বাংলাদেশের ভেতরে কী ঘটছে অথবা রোহিঙ্গাদের ভোগান্তির কী রকম তা অল্প কিছু গণমাধ্যম দেখিয়েছে। মিয়ানমারের অধিকাংশ গণমাধ্যমই রাখাইনে বৌদ্ধ এবং হিন্দুদের বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়ার ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। যারা সংখ্যায় অল্প। ঘৃণা এবং ভুল তথ্য খুব দ্রুত ছড়াতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে।

সুতরাং রাখাইন রাজ্যের ঘটনাবলীর ব্যাপারে নিয়ে সু চির সামান্য ক্ষমতা আছে। এবং রোহিঙ্গাদের সমর্থনে কোনো কথা বললেই বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদীদের ক্ষোভ ও তোপের মুখে পড়বেন তা নিশ্চিত করেই বলা যায়। (সংক্ষেপিত)।

সূত্র : বিবিসি।

এসআইএস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *