চট্টগ্রাম, , শনিবার, ৯ নভেম্বর ২০২৪

admin

লোহাগাড়ায় নেই নৃত্যশিল্পী বুলবুল চৌধুরীর নামে কোন স্মৃতিচিহ্ন

প্রকাশ: ২০১৭-০৯-২২ ১০:২৩:২১ || আপডেট: ২০১৭-০৯-২২ ১০:২৫:২৩

মোহাম্মদ ইলিয়াছ, লোহাগাড়া:  বুলবুল চৌধুরী একজন আন্তর্জাতিক নৃত্যশিল্পী। অন্যদিকে তিনি চিত্রশিল্পী ও নৃত্য রচয়িতা। একজন ভাল লেখকও ছিলেন তিনি। তার প্রকৃত নাম রশিদ আহমদ চৌধুরী আর ডাক নাম টুনু। ১৯১৯ সালে তিনি বগুড়ায় জন্মগ্রহণ করলেও তার পৈত্রিক বাড়ি চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার ঐতিহাসিক চুনতির দারোগা পরিবারে।

বুলবুল চৌধুরীর নামে ঢাকা, পাকিস্তান ও লন্ডনে রয়েছে বহু প্রতিষ্ঠান। ঢাকা ও করাচিতে গড়ে উঠেছে বুলবুল ললিতকলা একাডেমি। কিন্তু এখনো বিশ্ববরেণ্য এ শিল্পীর নামে লোহাগাড়ায় গড়ে উঠেনি কোন স্মৃতিচিহ্ন।  সরেজমিনে চুনতি গিয়ে জানা গেছে, পুরাতন আমলের তার পৈত্রিক বাড়ি কেবলই স্মৃতি বহন করে। কেয়ারটেকাররা বাড়িগুলো দেখাশুনা করে।

 

অনুসন্ধানে জানা যায়, বুলবুল চৌধুরীর দাদা আজগর আলী তহশিলদার দারোগা পাড়ার গোড়াপত্তন করেন। আজগর আলী তহশিলদারের চার ছেলে ও দুই মেয়ে। ছেলে আজম উল্লাহ চৌধুরী ও ফয়েজ আহমদ চৌধুরী ইংরেজ শাসনামলে পুলিশের দারোগা ছিলেন। তখনকার দিনে দারোগাকে অনেকাংশে ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পালন করতে হতো। আজম উল্লাহ চৌধুরী ও মাহফুজা বেগমের বড় সন্তান বুলবুল চৌধুরী। তিনি ১৯৩৪ সালে দুটি লেটার নিয়ে মানিকগঞ্জ হাই স্কুল থেকে মেট্রিক পাশ করেন।  স্কুলে লেখাপড়ার সময় তিনি কখনো চিত্রশিল্পী, কখনো নৃত্যশিল্পী কখনো লেখক হয়েছেন। ম্যাট্রিক পরীক্ষার কিছুদিন পর মানিকগঞ্জের এক বিচিত্রানুষ্ঠানে ‘চাতক নৃত্য’ পরিবেশন করে বেশ পরিচিতি লাভ করেন। তারপর দেশে-বিদেশে নৃত্য পরিবেশন করে সুনাম অর্জন করেন। ১৯৩৪ থেকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত অসংখ্য নৃত্যরুপ রচনা করেছেন তিনি। তার উল্লেখযোগ্য নৃত্যের মধ্যে রয়েছে বিষের বাঁশি, সাঁওতালি নৃত্য, ভ্রমর, চাঁদ সুলতানা, আনারকলি, সোহরাব-রুস্তম, জীবন-মৃত্যু ও ফসল উৎসব উল্লেখযোগ্য।

বিশ্বেসর্বত্র নৃত্যশিল্পকে ছড়িয়ে দিয়েছেন তার একক সাধনায়। ১৯৩৬ সালে শিল্পী সত্তার সাথে মিল রেখে নিজের নাম রাখেন বুলবুল চৌধুরী। এ নামেই তিনি দেশে-বিদেশে খ্যাতি অর্জন করেন। তিনি বিয়েও করেন একজন নৃত্যশিল্পীকে। নৃত্যের পাশাপাশি তিনি ব্যঙ্গচিত্র, ঘর-বাড়ি, পশুপাখি ও গাছপালাসহ বিভিন্ন ছবি আঁকতেন।

তার বাবা-মায়ের সাথে বহুবার তিনি নিজ এলাকা চুনতিতে এসেছেন। ১৯২৬ সালে কৈশোর বয়সে তিনি চুনতিতে এসে বেশ কয়েকদিন থেকেছেন। ১৯৫২ সালে আসেন বাবার জেয়াফত অনুষ্ঠানে। বি.এ পড়ার সময়ও তিনি চুনতিতে এসে সাতগড় এলাকায় বাঘ শিকারে গিয়েছিলেন। প্রতিভাবান এ শিল্পী নৃত্যের মাধ্যমে ধরে রেখেছেন ঐতিহ্যকে। নৃত্যের মাধ্যমে সজীব করেছেন বহু কাহিনী ও ঘটনাকে। নৃত্যে রূপদান করে দেশে-বিদেশে হয়েছেন খ্যাত- স্মরণীয়। অথচ তার পৈত্রিক এলাকা লোহাগাড়ায় তাঁর নামে নেই কোন স্মৃতিচিহ্ন।

 

 

 

বুলবুল চৌধুরী চাচাতো বোন চুনতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক হোসনে আরা বেবী জানান, বুলবুল চৌধুরী একজন আন্তর্জাতিক নৃত্যশিল্পী। আমার বাবা কবীর উদ্দীন আহমদ চৌধুরীর কাছ থেকে শুনেছি বুলবুল চৌধুরী শুধু নৃত্যশিল্পী ছিলেন না, পাশাপাশি গান-কবিতা-উপন্যাস লিখতেন এবং অপূর্ব কণ্ঠে গান গাইতেন। অথচ দেশ-বিদেশে খ্যাতনামা এ শিল্পীর নামে চট্টগ্রামসহ লোহাগাড়ায় স্মৃতিচিহ্ন গড়ে না উঠা দুর্ভাগ্যজনক। লোহাগাড়ায় স্মৃতি ধরে রাখার জন্য তাঁর নামে সরকারিভাবে একটি নৃত্য চর্চা, সাহিত্য চর্চা ও চিত্র চর্চা সমেত একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।

উপজেলা শিল্পকলা একাডেমির সম্পাদক রুপন কান্তি জানান, বুলবুল চৌধুরীর মতো একজন আন্তর্জাতিক নৃত্যশিল্পীর বাড়ি লোহাগাড়ায় তা এলাকার শিল্পীদের জন্য গৌরবের বিষয়। তার স্মরণার্থে লোহাগাড়ায় সরকারিভাবে ‘বুলবুল ললিতকলা একাডেমি’ প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন।                    

লোহাগাড়া উপজেলা হডে শিল্পী সংস্থার সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা রফিক দিদার জানান, বুলবুল চৌধুরী দেশ-বিদেশের নৃত্য-চিত্র শিল্পকে প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। দেশের শিল্পী সত্তাকে সজীব করেছেন। আমাদের উচিত তাকে স্মরণীয় করে রাখা। তাই লোহাগাড়ায় তার নামে একটি নৃত্য-চিত্র শিল্পী প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা প্রয়োজন।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা শিল্পকলা একাডেমির সভাপতি মো. মাহবুব আলম জানান, আমি ইতিমধ্যে জানতে পেরেছি, আন্তর্জাতিক নৃত্যশিল্পী বুলবুল চৌধুরীর বাড়ি লোহাগাড়ার চুনতি গ্রামে। গত সপ্তাহে চুনতির দারোগা বাড়িতে তার স্মৃতিবিজড়িত পৈত্রিক বাড়ি দেখে এসেছি। কিন্তু তার নামে এলাকায় নেই কোন স্মৃতি চিহ্ন। অথচ স্মৃতি চিহ্ন থাকলে ভাল হতো। লোহাগাড়ায় তার নামে একটি স্মৃতি চিহ্ন প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করবেন বলে তিনি জানান।

 

– ইত্তেফাক

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *