admin
প্রকাশ: ২০১৭-০৯-২৫ ১৫:১৫:০৪ || আপডেট: ২০১৭-০৯-২৫ ১৫:১৫:০৪
বীর কন্ঠ ডেস্ক : মঙ্গলবার থেকে শুরু হচ্ছে হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে এই উৎসব। পাঁচদিনের দুর্গোৎসবে প্রস্তুত রাজশাহী। উৎসব নির্বিঘ্ন করতে কঠোর নিরাপত্তা নিয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
সনাতন বিশ্বাস ও বিশুদ্ধ পঞ্জিকা মতে, জগতের মঙ্গল কামনায় এবার দেবীর আগমন নৌকায় চড়ে। দেবী বিদায় নেবেন ঘোড়ায় চড়ে। দুষ্টের দমন, শিষ্টের পালন ও বিশ্বব্যাপী অবারিত মঙ্গলধ্বনি নিয়ে লোকালয়ে আসছেন মা দুর্গা। তাই বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের ঘরে ঘরে এখন আনন্দের ঢল।
শেষ মুহূর্তে মণ্ডপে মণ্ডপে চলছে প্রতিমা তৈরি আর সাজসজ্জ্বার কাজ। তুলির আঁচড়ে মাকে উদ্ভাসিত করায় ব্যস্ত কারিগররা। তুলির আঁচড়ে সুন্দর করে তোলা হচ্ছে দুর্গা, গণেশ, কার্তিক, সরস্বতী, লক্ষ্মী ও মহিষাসুরের প্রতিমা।
দৃষ্টিনন্দন করে পূজামণ্ডপ সাজাতে ব্যস্ত কারুশিল্পীরাও। চলছে মঞ্চ, প্যান্ডেল, তোরণ নির্মাণ ও আলোকসজ্জার কাজ।
জানা গেছে, রাজশাহীতে এ বছর মোট ৪২০টি মণ্ডপে দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়েছে।
এর মধ্যে রাজশাহী নগরীতে রয়েছে ৭৪টি পূজামণ্ডপ। নগরীতে ১০ থেকে ১২ জন এবং জেলার ৬০ থেকে ৭০ জন কারিগর এসব মণ্ডপে প্রতিমা সরবরাহ করবেন।
রাজশাহী নগরীর আলুপট্টির প্রতিমা তৈরির কারখানা ঘুরে দেখা গেছে, কার্তিক চন্দ্র পাল ও গণেশ কুমার পালের কারখানার শিল্পীরা প্রতিমা তৈরির কাজ করছেন। সবাই ব্যস্ত প্রতিমার গায়ে রঙ-তুলির আঁচড় দিতে।
প্রতিমা কারিগর ঋষি কান্ত পালের ছেলে কার্তিক চন্দ্র পাল। ২৫ বছর বয়সের কার্তিক ১৪ বছর বয়স থেকেই এই পেশায় জড়িত। তিনি জানালেন, পঞ্চমির রাতের আগেই তাদের প্রতিমার সব কাজ শেষ করতে হবে। তাই বাংলা আষাড় মাসের ১৫ তারিখ থেকেই তারা প্রতিমা তৈরির কাজ শুরু করেছেন। সময় মতো প্রতিমা সরবরাহ করতে দিনরাত এক করে তারা কাজ করছেন।
প্রতিমা শিল্পীরা জানিয়েছেন, একটি প্রতিমা তৈরিতে শিল্পীদের ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়। প্রতিমা তৈরির জন্য লাগে ৩ থেকে ৪ ভ্যান মাটি। খড় লাগে ৫ থেকে ৬ পৌন।
এছাড়া কাঠ, বাঁশ, দড়ি, পেরেক, সুতা, ধানের তুষ ও কয়েক ধরনের রঙ কিনতে তাদের এই টাকা খরচ হয়। রাজশাহীতে একেকটি প্রতিমা ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়।
তারা জানান, একটি প্রতিমা তৈরি করতে সময় লাগে ১০ থেকে ১২ দিন। প্রতিমা তৈরিতে কয়েকজন শিল্পী একসঙ্গে কাজ করেন। একেকজন শিল্পী প্রতিমার এক এক কাজে হাত দেন। সবার সম্মিলিত কাজে পূর্ণতা পায় একেকটি প্রতিমা। প্রতিমা বিক্রির পর যে টাকা লাভ হয়, তা তারা সবাই মিলেই ভাগ করে নেন। এভাবে সারাবছরই টুকটাক তারা কাজ করতে থাকেন।
সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে শারদীয় দুর্গোৎসব উদযাপনে এরই মধ্যে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। দেবীর বোধনের আগের দিন থেকে প্রতিমা বিসর্জনের রাত পর্যন্ত এ বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা বলবৎ থাকবে।
এ নিয়ে এরই মধ্যে রাজশাহী মহানগর পুলিশ সদর দফতর (আরএমপি) এবং জেলা পুলিশ সুপারের (এসপি) কার্যালয় থেকে থানা পর্যায়ে বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে।
হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা প্রতিমা ও মণ্ডপ তৈরি থেকে প্রতিমা স্থাপন পর্যন্ত সব কার্যক্রম ও আচার-অনুষ্ঠান যেন শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে পারেন সে ব্যাপারে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের (ওসি) নজর রাখতে বলা হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) মুখপাত্র ইফতেখায়ের আলম জানান, শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নেয়া হয়েছে। এ নিয়ে সর্বোচ্চ প্রস্তুতিও রয়েছে পুলিশের। যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা কঠোর হাতে দমন করা হবে।
জানতে চাইলে রাজশাহীর জেলা প্রশাসক হেলাল মাহমুদ শরীফ জানান, দুর্গাপূজা উপলক্ষে রাজশাহীর সব পূজামণ্ডপে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। মণ্ডপগুলোতে পুলিশ ও র্যাব সদস্যের পাশাপাশি সাদা পোশাকে থাকবেন গোয়েন্দারা। মণ্ডপ এলাকায় যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে। কেউ যেন কোনো প্রকার সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করতে না পারে সে জন্য সর্বদা তৎপর থাকবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
জাগো নিউজ