চট্টগ্রাম, , রোববার, ১৪ এপ্রিল ২০২৪

admin

গভীর বনে রোহিঙ্গারা : ১৫ দিনে হাতির আক্রমণে নিহত ৪

প্রকাশ: ২০১৭-১০-০৫ ১৬:৩৩:২৬ || আপডেট: ২০১৭-১০-০৫ ১৬:৩৩:২৬

বীর কন্ঠ ডেস্ক : কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের উখিয়া-টেকনাফ রেঞ্জাধীন প্রায় ১০ হাজার একর বনভূমিতে রোহিঙ্গারা বসতি গেড়েছে। পূর্বে আসা রোহিঙ্গারা রাস্তার পাশের পাহাড়ে ঘর তুললেও সম্প্রতি আসা রোহিঙ্গারা গভীর বনে ঢুকে পড়েছে। এতে একটি হিসেবে কুতুপালং রেজিস্টার্ড ক্যাম্পসহ পুরনো রোহিঙ্গারা দখলে নিয়েছিল প্রায় ছয় হাজার এক বনভূমি। এবার নতুন আসা রোহিঙ্গারা দখল করে নিয়েছে আরো প্রায় চারহাজার একর। এতে বাদ যায়নি বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্যও। ফলে আবাস ও খাবার দুটিই হারিয়ে হাতিরপাল সময়ে অসময়ে লোকালয়ে হানা দিচ্ছে। গত ১৫ দিনে হাতির পালের আক্রমণে বাবা-ছেলেসহ এ পর্যন্ত প্রায় ৪ জন নিহত হয়েছে।

 

সর্বশেষ সোমবার রাতে হাতির একটি পাল উখিয়ার বালুখালি এলাকায় হানা দেয়। সেরাতে হাতির আক্রমণে এক রোহিঙ্গা শিশু নিহত হয়। আহত হয় আরও দুইজন।

 

উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল খায়ের জানান, সোমবার দিবাগত রাতে উখিয়ার বালুখালী অস্থায়ী শিবিরে বন্যহাতি তাণ্ডব চালিয়ে ১০টির মত রোহিঙ্গা ঝুপড়ি ঘর গুড়িয়ে দেয়। এসময় মোবারেকা (১০) নামের এক শিশু ঘটনাস্থলে প্রাণ হারায়। আহত হয় নুরুল ইসলাম (৫০), তার স্ত্রী ফাতেমা (৪৫) ও আড়াই বছরের শিশু আয়েশা বেগম। তাদের উখিয়া উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

 

কক্সবাজার (দক্ষিণ) বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. আলী কবির জানান, পৃথকভাবে রোহিঙ্গারা উখিয়া-টেকনাফ রেঞ্জের প্রায় ১০ হাজার একর বনভূমিতে ঝুপড়ি ঘর তুলে বসবাস করছে। প্রতিদিনই নতুন নতুন পাহাড়ি জমি দখল করে ইচ্ছেমতো বস্তি তৈরি করছে রোহিঙ্গারা। অনেকেই ক্যাম্পের বাইরে গিয়ে ঝুপড়ি ঘর তৈরি করছে। এরা নিজেদের ইচ্ছে মতো যেতে গিয়ে গভীর বনেও ঢুকে পড়েছে। ফলে নষ্ট করে ফেলেছে বন্য প্রাণীর আবাসস্থল। নির্বিচারে বনজ গাছপালা কেটে ফেলায় ধ্বংস হয়ে গেছে হাতিসহ বন্যপ্রাণীর খাবার। ফলে হাতিরপাল খাবারের খোঁজে লোকালয়ে হানা দিচ্ছে।

 

তিনি আরো বলেন, নতুন ওঠা বস্তিগুলো বনকর্মীরা প্রায়ই উচ্ছেদ করে। কিন্তু একটি পলিথিন ও কয়েকটি বাঁশ দিয়ে সহজে তা আবার গড়া সম্ভব হওয়ায় বনকর্মী চলে আসার পর রোহিঙ্গারা পুনরায় ঝুপড়ি ঘরটি তৈরি করে। এখন সরকার নির্ধারিত দুই হাজার একর জমি চেয়েছে। এরসঙ্গে যদি আরো কিছু লাগে তা চিহ্নিত করে দিয়ে বাকি সব জায়গায় উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে সব রোহিঙ্গাদের এক জায়গায় নিয়ে আসা হবে। তখন আবারও অভয়ারণ্য তৈরিতে হাত দেয়া হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

 

স্থানীয়দের অভিযোগ, রোহিঙ্গাদের দখলকে পূজি করে উখিয়া-টেকনাফের বিভিন্ন বন বিটের সরকারি জায়গায় স্থানীয় লোকজনও দখলদারিত্ব কায়েম করেছে। তারা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে বাসাবাড়ি করে রোহিঙ্গা ও স্থানীয় হতদরিদ্রদের ভাড়া দিয়ে আসছে। এসব জমির আশপাশেও এখন রোহিঙ্গারা নতুন বসতি গড়ছে। যার বিনিময়ে টাকাও নিয়েছে অনেকে।

 

এদিকে কিছু বুঝে ওঠার আগেই হঠাৎ লাখ লাখ আশ্রিত মানুষের বসতি গড়ে ওঠায় স্থানীয়দের দুঃখ ও আফসোসের শেষ নেই। কারণ বন বিভাগের জায়গা হলেও যুগ যুগ ধরে পাদদেশের জমিতে চাষাবাদ করে সংসার চালাত তারা। কিন্তু এখন পাহাড় দখলের পাশাপাশি এসব পাদদেশও রোহিঙ্গারা দখল নিয়েছে। যে জমিতে চাষ করে একসময় তারা ফসল ফলাতেন এখন সেই জমিতে লাখো রোহিঙ্গা এসে উঠেছে। ফলে আগামীতে চাষাবাদ কোথায় হবে বা সামনের দিনগুলো কেমন করে চলবে তা নিয়ে চরম উদ্বিগ্ন পুরোনো বাসিন্দারা।

 

 

উখিয়ার মধুরছড়ার পাশে আমির হামজার বাস প্রায় দুই যুগ ধরে। পাঁচ মেয়ে, দুই ছেলে আর স্ত্রী নিয়ে তার সংসার। আমির হামজা হতাশা প্রকাশ করে করে বলেন, এই মধুরছড়া আবাদ করে গোলা ভরে যেত ধানে। বাড়িতে গরু-মহিষ ছিল। নিজে পাঁচ একর জমিতে চাষ করতে পারতাম। এখন সবখানে রোহিঙ্গাদের বসতি। এই বসতিই আমার সব কেড়ে নিয়েছে।

 

সৈয়দ আকবর নামের স্থানীয় এক যুবক বলেন, রোহিঙ্গারা এসে শুধু বসতি নয়, গাছ পালা কেটে সাবাড় করে ফেলেছে। ঘর করতে গিয়ে পাহাড়ের মাটি কাটার পাশাপাশি বিভিন্ন প্রজাতির গাছের মূল ও শেকড় তুলে ফেলছে তারা। একের পর এক পাহাড় কেটে ন্যাড়া করছে। তাদের কাছে বনবিভাগও যেন অসহায়।

 

টেকনাফ সদর বনবিট কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন বলেন, হাতিরপাল ঝোপঝাড় ও হালকা পানি রয়েছে এমন জায়গা পছন্দ করে। তাদের খাবারের তালিকায় রয়েছে কচি বাঁশের পাতা ও কলাগাছ এবং বিভিন্ন বনজ লতা-পাতা। কিন্তু রোহিঙ্গার আবাস এখন প্রায় তিন থেকে পাঁচ কিলোমিটার ভেতরে ঢুকে যাওয়ায় নির্বিচারে ঝোপঝাড় ও লতাপাতা কেটে ফেলছে। আর এমনতিই আলো দেখলে একটু বিচলিত হয় হাতিরপাল। এখন গভীর বনেও আবাস গড়ায় রাতে কুপির আলো দেখে হাতিরপাল সেখানে এসে হামলা করে।

 

পরিবেশ অধিদফতর কক্সবাজার কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সরদার শরীফুল ইসলাম বলেন, রোহিঙ্গাদের কারণে আমাদের প্রাকৃতিক পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। এখন সরকার মানবিকতার কারণে তাদের আবাসন তৈরি করছে বিধায় কিছু বলা সম্ভব হচ্ছে না। এরপরও যতটুকু ক্ষতি হয়েছে এ পর্যন্তই ধরে রেখে পরবর্তীতে এখানে আবারও বন্যপ্রাণীর বাসযোগ্য অবস্থা তৈরি করতে হবে।

 

উল্লেখ্য, ১৯৭৮ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে নিজ দেশ মিয়ানমারে জাতিগত নিপীড়নের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ। শুধু চলতি বছরেই নিপীড়নে গত সোমবার পর্যন্ত ৫ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা নতুন করে এদেশে অনুপ্রবেশ করেছে বলে দাবি করেছে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম)। যা স্থানীয় হিসেবে ৬ থেকে ৭ লাখ।- জাগো নিউজ

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *