চট্টগ্রাম, , শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২৫

admin

মগ বাহিনী কেটে নিচ্ছে রোহিঙ্গাদের ধান

প্রকাশ: ২০১৭-১১-০৬ ২১:১৯:৫৭ || আপডেট: ২০১৭-১১-০৬ ২১:১৯:৫৭

বীর কন্ঠ ডেস্ক:

বিশ্ব চাপে পাশবিক নির্যাতন বন্ধ করেছে মিয়ানমার। কিন্তু শারীরিক নির্যাতন বন্ধ হলেও বাড়ানো হয়েছে মানসিক নির্যাতনের মাত্রা। ফলে অতিষ্ঠ হয়ে রোহিঙ্গাদের এখনও বাংলাদেশে পালিয়ে আসার স্রোত কোনোমতেই কমছে না। প্রায় ৫ হাজার রোহিঙ্গা নতুন করে বাংলাদেশে ঢুকেছে চলতি সপ্তাহের শুরুতেই।

 

এর তিনদিন পার না হতেই বাংলাদেশ অভিমুখে আসছে আরও ৮ থেকে ১০ হাজার রোহিঙ্গা। তবে তারা কক্সবাজারের উখিয়ার পালংখালী আঞ্জুমানপাড়া সীমান্তে ওপারে মিয়ানমারের কাঁটা তারের বেড়া পার হতে না পেরে রোববার রাত থেকেই ওখানে আটকা পড়ে আছে।

 

খাদ্য অবরোধ ও রোহিঙ্গাদের ক্ষেতের পাকা ধান, গরু ও অন্যান্য সরঞ্জাম লুট করায় সেখানে এতদিন থেকে যাওয়া লোকজন নতুন করে বাংলাদেশ অভিমুখী হচ্ছে। কুতুপালং ক্যাম্পের রোহিঙ্গা নেতা ডা. জাফর আলম এসব তথ্য জানিয়েছেন।

 

রোহিঙ্গা নেতা ডা. জাফর আলম জানান, রাখাইনের সীমান্তবর্তী এলাকা চাকমাকাটা, রাইমংখালী ও প্রংচোমং এলাকায় রোহিঙ্গাদের লাগানো ধানে পাক ধরেছে। বিশ্ব নেতৃবৃন্দের চাপে এখন পাশবিক আচরণ বন্ধ হলেও চলাচল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য প্রাপ্তিতে একপ্রকার অবরুদ্ধ হয়ে আছে সেখানে এখনও জীবিত অবস্থানকারীরা।

 

অবরোধ ও খাদ্যাভাবের যন্ত্রণার সঙ্গে পাকা ধানগুলো সেনা ও বিজিপি কেটে নিচ্ছে দেখে চরম হতাশায় পড়েন তারা। বাড়ি বাড়ি থেকে পুরুষদের ধরে নিয়ে ধানকাটায় ব্যবহার করা হচ্ছে। যারা যেতে চাননা তাদের ধরিয়ে দেয়া হচ্ছে অবৈধ অভিবাসী হিসেবে দেয়া এক ধরনের কার্ড। যেসব বাড়িতে পুরুষ নেই সেখানে থাকা নারীদের সঙ্গে অশালীন আচরণ করা হচ্ছে।

 

চতুর্মুখী মানসিক চাপে পড়ে সর্বশেষ বাপ-দাদার ভিটে ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েই বাংলাদেশের পথে পা বাড়ায় নিপীড়িতরা। এখানেও তাদের ভাগ্য মন্দ। চলতি সংকট শুরুর পর নতুন করে মেরামত করা কাঁটাতারের বেড়া কোনো মতেই ডিঙ্গাতে না পেরে সেখাইে দু’দিন ধরে অবস্থান করছেন তারা। মুঠোফোনেই তিনি এসব জেনেছেন বলে দাবি করেন,।

 

তথ্যটি শুনেছেন দাবি করে কক্সবাজার ৩৪ বিজিবির উপ-অধিনায়ক মেজর মো. ইকবাল আহমেদ বলেন, প্রায় সময় বিচ্ছিন্নভাবে রোহিঙ্গা আগমন ঘটছে। আমাদের জোয়ানরা তাদের ধরে জিরো পয়েন্টে জমায়েত করে। ঊর্ধ্বতন মহলের নির্দেশনা পেলে আমরা তাদের ক্যাম্পে পৌঁছে দেব। গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার কুতুপালং ক্যাম্পে নতুন প্রায় ৫ হাজার রোহিঙ্গাকে আশ্রয়ে নেয়া হয়। রোববার সকাল থেকে খবর পাচ্ছিলাম ওপার থেকে বেশ কয়েক হাজার রোহিঙ্গার একটি দল বাংলাদেশ অভিমুখে রওয়ানা দিয়েছে। আবার শুনলাম তারা নাকি মিয়ানমারের কাঁটাতারের বেড়াতে আটকে পড়েছে। আজও (সোমবার) এমনটি জেনেছি।

 

এদিকে, কুতুপালং রাবারবাগান এলাকার ডি-২ ব্লকের অবস্থান নেয়া বুচিদং লংদুমার বাসিন্দা গুরা মিয়া (৫৬) জানান, প্রতি বছরের মতো ১০ কানি (চার একর) জমিতে ধান লাগানো হয়েছিল। নিপীড়নের সময় হাটাহাটিতে কিছু ধান নষ্ট হয়। বাকিগুলো এখন পাকলেও কাটতে নামতে পারিনি। মিয়ানমার সেনা ও পুলিশ তা কেটে নিচ্ছে। এছাড়াও প্রায় ৫ শতাধিক আকাশমনি গাছ লাগানো একটি বাগান ছিল। সেসব গাছও তারা সম্প্রতি কেটে নিয়ে গেছে। চেয়ে থাকা ছাড়া কিছুই বলতে পারিনি। তাই মনের দুঃখে সব ছেড়ে পরিবার পরিজন নিয়ে বাংলাদেশে চলে আসি। শুক্রবার এ এলাকায় থাকার জায়গা হয়েছে।

 

মংডুর নেছাপ্রু এলাকার বাসিন্দা কুতুপালং রাবারবাগান এ-১/বি-২ ব্লকে অবস্থানকারী আবদুল খালেক (৩০) বলেন, ২ একর ধান, দশটি ছোট-বড় গরু, নয় লাখ কিয়াত (মিয়ানমারের মুদ্রা) দামের একটি মোটরসাইকেল, প্রায় ত্রিশ মণ চাল, ৫ লাখ কিয়াত দামের মাছ ধরার বড় জাল এবং ৬০ শতক জমির সবজি চোখের সামনেই মিয়ানমার সেনারা নিয়ে গেছে। এছাড়াও এলাকার ১৫-২০ জন তরুণীকে তুলে নিয়ে কয়েকদিন ইচ্ছেমতো ব্যবহার করে ছেড়ে দেয়। এসব চোখের সামনে ঘটলেও কোনো প্রতিবাদই করা সম্ভব হয়নি। ফলে হতাশাগ্রস্ত হয়ে গত শুক্রবার ভিনদেশে আশ্রয় নিয়েছি।

 

অপরদিকে, অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ের প্রায় ৩০ হাজার এবং গত শুক্রবার প্রায় ৫ হাজার রোহিঙ্গা নতুন করে বাংলাদেশে আশ্রয় পাওয়া এবং আরও আসছে জেনে চরম উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সীমান্ত ইউনিয়ন পালংখালী ইউপি’র প্যানেল চেয়ারম্যান নুরুল আবছার চৌধুরী।

 

তার মতে, পুরোনো এবং চলমান আরাকান সংকট মিলিয়ে প্রায় দশ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা ইতোমধ্যে বাংলাদেশে আশ্রয় পেয়েছে। এ সংখ্যা সীমান্ত উপজেলা টেকনাফ-উখিয়ার স্থানীয় জনগণের চেয়ে অধিক। এখানে আশ্রয় পাওয়া রোহিঙ্গাদের খাবার, বাসস্থান, স্বাস্থ্য ও স্যানিটেশনসহ প্রয়োজনীয় অন্য সুবিধা নিশ্চিত করতে হিমশিম খাচ্ছি আমরা। রোহিঙ্গাদের কারণে পাহাড়গুলো দখল হয়ে গেছে। সাবাড় হচ্ছে গাছপালা। অভয়ারণ্য হারাচ্ছে বন্যপ্রাণি। ফলে হাতিরপালের আক্রমণে মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ হচ্ছে। এসব মৃত্যু সরকারের জন্য বিব্রতকর।

 

এটা ছাড়াও রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আগ্নেয়াস্ত্র ও মাদক এবং নিষিদ্ধ বস্তু আসছে। ইতোমধ্যে আইনপ্রয়েগকারী সংস্থার হাতে অনেক রোহিঙ্গা অস্ত্র, বোমা ও ইয়াবাসহ আটক হয়েছে। মানবিকতার সুযোগে তারা আমাদের আর্তসামাজিক পরিবেশ বিষিয়ে তুলছে।

সূত্র – জাগো নিউজ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *