চট্টগ্রাম, , শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২৫

admin

চকরিয়ায় সওজ কর্মকর্তাদের যোগসাজসে অফিস থেকে রাতের আধাঁরে বিটুমিন ও পাথর চুরি

প্রকাশ: ২০১৭-১১-০৭ ২২:৫৩:১৪ || আপডেট: ২০১৭-১১-০৭ ২২:৫৪:২৮

চকরিয়া অফিস:

চকরিয়ার চিরিঙ্গাস্থ সড়ক ও জনপথ বিভাগের অফিস থেকে দীর্ঘদিন ধরে সড়ক ও সেতু মেরামত কাজে ব্যবহৃত নির্মাণ সামগ্রী রাতের আধাঁরে ঠিকাদারদের কাছে পাচার করে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলীর যোগসাজসে চকরিয়া সওজ অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীরা মূল্যবান বিটুমিন সহ নির্মাণ সামগ্রী চুরি করে পাচার করলে ও উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ রহস্যজনক ভাবে নিরব ভূমিকা পালন করছে। এতে করে কক্সবাজার ও চকরিয়া সওজ অফিসের একাধিক কর্মকর্তা কর্মচারীরদের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।অনুসন্ধানে ও প্রাপ্ত অভিযোগে জানা গেছে, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রনালয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগ অধিন সড়ক ও সেতু নির্মাণ ও মেরামত কাজ দরপত্র বিজ্ঞপ্তি আহবান করে ঠিকাদারদের মাধ্যমে করা হয়।

 

এছাড়া ও সওজের রক্ষনাবেক্ষণ খাতে সড়কের অনেক মেরামত কাজ জরুরি ভিত্তিতে নিজেরা করে থাকে। এজন্য স্থানীয় সওজ কর্তৃপক্ষ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চাহিদা পত্র দিয়ে বিটুমিন, পাথর, ইট, সিমেন্ট, লোহা সহ নির্মাণ সামগ্রী সওজের গুদামে জমা রাখে। ঠিক চকরিয়া সওজ অফিস ও একই কায়দায় সড়কের জরুরী মেরামত কাজে বিটুমিন সহ বিভিন্ন নির্মাণ সামগ্রী চাহিদা দিয়ে চকরিয়া সওজ অফিসে স্টক রাখে।

 

অভিযোগ উঠেছে জরুরী সড়ক মেরামতের নামে এসব নির্মাণ সামগ্রী বিগত ১৫ বছর যাবৎ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের যোগসাজসে সওজ চকরিয়া অফিসের শ্রমিক ইব্রাহিম রাতের আধারে টাকার বিনিময়ে পাচার করে দিচ্ছে অবৈধ ঠিকাদারদের হাতে।

 

নাম প্রকাশে অনিচ্চুক চকরিয়া সওজের একাধিক কর্মচারী জানান শ্রমিক ইব্রাহিম দীর্ঘদিন ধরে এ কাজে জড়িত থাকলেও কেউ তার বিরুদ্ধে কথা বলার সাহষ পায়না। নির্বাহী প্রকৌশলী সহ সবাই তার কাছে জিম্মী। এ সূযোগে শ্রমিক ইব্রাহীম বিগত ১৫ বছর ধরে অফিসের সামনে জরুরী নির্মাণ কাজের জন্য রক্ষিত বিটুমিন, সিলেটি পাথর, ইট, সিমেন্ট, লোহার রড়, লোকাল পাথর রাতের আধাঁরে বিক্রি করে দিচ্ছে। তারা আরো জানায়, মাতামহুরী ব্রীজ, সিএন্ডবি অফিস সংলগ্ন আরকান সড়কের পশ্চিম পাশ সহ একাধিক স্থানে রাখা সওজের পাথর ও লোহা রাতের আধাঁরে ট্রাকে করে পাচার করে দিচ্ছে।

 

গত ২৬ সেপ্টেম্বর রাতের আধাঁরে চকরিয়া সওজ অফিস থেকে বিটুমিনের ড্রাম ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার এহেছান, শ্রমিক ইব্রাহিম ও কর্মচারী সালাহউদ্দিনের উপস্থিতিতে পিকআপে করে পাচারের সময় স্থানীয় জনতা বাধা দিলে তাদের লালিত সন্ত্রাসীরা স্থানীয় লোকজনের উপর হামলা চালায়। এঘটনা ধামাচাপা দিতে পরে পিকআপ ভর্তি ১০টি চোরাই বিটুমিনে ড্রাম ওইদিন রাতে কক্সবাজার নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ে নিয়ে রাখে।

 

এব্যাপারে সওজ কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী রানা প্রিয় বড়–য়ার সাথে যোযোগ করা হলে তিনি জানান, আমি এখন মন্ত্রী মহোদয়ের সাথে আছি এবিষয়ে চকরিয়া সড়ক উপ-বিভাগের সহকারী প্রকৌশলীর সাথে যোগাযোগ করার কথা জানান।

 

এদিকে সড়ক ও জসপথ বিভাগ চট্টগ্রাম জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আফতাব হোসেন খানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ডিপার্টমেন্টের পিপিআর নিয়ম অনুযায়ী সড়কের মেন্টেইনেন্সের কাজ হয়। ফিল্ড অফিস থেকে চাহিদা পত্র দেয়া হলে ভিটুমিন সহ মালামাল সরবরাহ করা হয়। এ গুলো রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট অফিসে বন্ড থাকে। কোন কাজে প্রয়োজনীয় জিনিস ব্যবহার করা হলে অফিসের স্টক খাতায় লিপিবদ্ধ অথবা চালানের মাধ্যমে সরবরাহের নিয়ম রয়েছে। তিনি আরো বলেন যদি রাতের আধাঁরে এ ভাবে ভিটুমিনের ড্রাম নিয়ে যাওয়া হয় তাহলে এটা হবে চুরি। আর চুরি বা অনিয়ম দূর্নীতির অভিযোগ উঠলে সে ব্যাপারে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা আমাদের দায়িত্ব।

 

এদিকে বান্দরবন থেকে বদলী হয়ে আসা চকরিয়া সওজের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার এহেছানের বিরুদ্ধে ভিটুমিন ও পাথর চুরি সহ সড়ক ও সেতু মেরামত, কালবার্ট নির্মাণ কাজে নানা অনিয়ম দূর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। কালবার্ট নির্মাণ, সড়ক ও সেতু মেরামতে টাকার বিনিময়ে ঠিকাদারদের নিন্মমানের কাজে সহযোগিতা দিচ্ছে। গত ১৬-১৭ অর্থবছরে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়ার আজিজনগর থেকে খুটাখালী পর্যন্ত ১১ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৯ কি:মি: সড়কের রিপিয়ার, সিলকোড ও ওভারলের কাজে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান রানা বির্ল্ডাস, চকরিয়া-বদরখালী সড়কে ১ কোাট টাকা ব্যয়ে সাইট মেরামত ড্রেন কার্পেটিং, এবং চিরিঙ্গা-বেতুয়া বাজার সড়কে ২ কোটি ৮৫ লাখ টাকা ব্যয়ে কালভার্ট নির্মাণ ও রিপিয়ার কাজে ঠিকাদারের সাথে আতাত করে কোন ধরনের তদারকি ছাড়া নিন্মমানের কাজে সহযোগিতা দিয়ে বিপুল পরিমান টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এ প্রকৌশলী। বর্তমানে এ কাজের কোন অস্থিত্বই নেই। তাছাড়া বর্তমানে চকরিয়া-মগনামা সড়কে পেকুয়া অংশে ৫ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ চললে ও তদারকি করার কেই নেই। চকরিয়ার এসও থাকেন সাইটে অনুপস্থিত।

 

এছাড়া ও কক্সবাজার-চট্টগ্রাম আঞ্চলিক মহাসড়কে চকরিয়ায় সড়ক ও জনপথ বিভাগের শতকোটি টাকার জমি প্রভাবশালীরা দখলে রেখেছে। অভিযোগ উঠেছে, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আর্থিক সুযোগে নিয়ে এসব জমি তাদের দখলে রেখেছে।

 

অনুসন্ধানে জানা গেছে, কক্সবাজার সড়ক ও জনপথ বিভাগ সরকারি নিয়মে ক্ষতিপূরণ নিশ্চিতের মাধ্যমে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ও আঞ্চলিক মহাসড়ক দুটি নির্মাণ করার সময় বিপুল পরিমাণ জায়গা অধিগ্রহণ করে। পরে সড়কের নির্মাণ কাজ শেষে যানবাহন চলাচলের জন্য সড়কগুলো উন্মুক্ত করে দেয়ার পর থেকে শুরু হয় জবরদখল প্রতিযোগিতা।

 

এরপর থেকে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চকরিয়া উপজেলার খুটাখালী থেকে উত্তর হারবাং আজিজনগর এবং পেকুয়ার টেইটং থেকে চকরিয়ার লালব্রীজ পর্যন্ত আঞ্চলিক মহাসড়কের দুই পাশের অবশিষ্ট থাকা বেশির ভাগ জায়গা সময়ে সময়ে বেদখল হয়ে যায়। বর্তমানে বেদখল হওয়া এসব জায়গায় গড়ে তোলা হয়েছে অর্ধ শতাধিক ব্যক্তি মালিকানাধীন অবৈধ মার্কেট ও দোকানপাট। অনেক এলাকায় সড়কের পাশে জনবসতিও নির্মাণ করা হয়েছে।

 

চকরিয়া সড়ক উপ-বিভাগের পক্ষ থেকে গত বছরের ২২ মে দখলে জড়িত ৯ জনকে চিহ্নিত করে এক সপ্তাহের মধ্যে সওজের জায়গা থেকে অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নিতে নোটিশ দেয়া হয়। কিন্তু নোটিশপ্রাপ্ত দখলবাজরা স্থাপনাগুলো সেখান থেকে সরিয়ে নেয়নি। এমনকি সড়ক বিভাগও তাদের বিরুদ্ধে আর কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেয়নি। বর্তমানে সেখানে বেশ কয়টি নতুন মার্কেটও গড়ে তুলেছে অভিযুক্তরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *