চট্টগ্রাম, , বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫

admin

চট্টগ্রামে আইনজীবী ওমর ফারুক বাপ্পী হত্যাকাণ্ডে জড়িত আটক চার আসামির চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালাত

প্রকাশ: ২০১৭-১১-২৮ ১৫:০৭:৪০ || আপডেট: ২০১৭-১১-২৮ ১৫:০৭:৪০

বীর কন্ঠ ডেস্ক:

চট্টগ্রামে আইনজীবী ওমর ফারুক বাপ্পী হত্যাকাণ্ডে জড়িত আটক চার আসামির চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালাত।

আজ মঙ্গলবার সকালে পুলিশ তাদের আদালতে উপস্থিত করে সাতদিনের রিমান্ডের আবেদন করলে বিচারক আসামিরদের প্রত্যেকের জন্য চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এরা হলো—বাপ্পীর কথিত স্ত্রী রাশেদা বেগম, পটিয়ার শোভনদণ্ডী গ্রামের হুমায়ুন রশীদ, ইপিজেড থানা এলাকার আল-আমিন, খাগড়াছড়ির পারভেজ আলী, নোয়াখালীর সুধারাম থানার আকবর হোসেন রুবেল ও বরিশালের গৌরনদী থানার মোল্লা জাকির।

এর আগে পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে।

উল্লেখ্য, এর আগে বাপ্পীর কথিত স্ত্রীসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। এদের মধ্যে দুজনকে কুমিল্লা ও চারজনকে চট্টগ্রাম নগরীর ইপিজেড এলাকা থেকে সোমবার গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এদিকে বাপ্পীর হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার দাবিতে চট্টগ্রামের আইনজীবীরা সোমবার কর্মবিরতি পালন করেন। পরে বিকেলে আসামি গ্রেপ্তারের তথ্য জানায় পিবিআই।

পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো অঞ্চলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মঈন উদ্দিন বলেন, হত্যাকাণ্ডের পরপরই পিবিআই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রাথমিক অনুসন্ধান কাজ শুরু করে। চকবাজার থানায় হত্যা মামলা দায়ের হওয়ার পর মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করেন পিবিআইয়ের পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা। তিন দিনের মধ্যেই হত্যার রহস্য উন্মোচনের পাশাপাশি তিনি ছয় আসামিকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে।

তদন্ত কর্মকর্তা সন্তোষ কুমার চাকমা বলেন, হত্যাকাণ্ডের পরপরই প্রাথমিক তথ্যে জানতে পারি যে একজন নারী বাসা ভাড়া নিয়েছিলেন। সেখানেই খুনের ঘটনা ঘটে।

নিহত আইনজীবীর লাশ দেখে একাধিক ব্যক্তি হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকতে পারে সন্দেহ হয়। এরপর অনুসন্ধান ও পরবর্তী সময়ে তদন্তে আসামিদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়েছে। তাদের আজ (মঙ্গলবার) সকালে আদালতে সোপর্দ করা হবে।

শনিবার সকালে চকবাজার থানার কে বি আমান আলী রোডের বড়মিয়া মসজিদের উত্তর পাশে নুর বেগম লেনের এনইউ ভবনের নিচতলা থেকে অ্যাডভোকেট ওমর ফারুকের লাশ উদ্ধার করা হয়। স্কচটেপ দিয়ে লাশের মুখ ও হাত-পা বাঁধা এবং পুরুষাঙ্গ কাটা ছিল।

সূত্র জানায়, হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তার করতে অভিযানের শুরুতে পিবিআই জানতে পারে, অ্যাডভোকেট বাপ্পীর একজন স্ত্রী আছেন। রাশেদা নামের এই নারীর সঙ্গে বাপ্পীর পাল্টাপাল্টি মামলা চলছে। মামলায় দুজন জেলও খেটেছেন। এর পরই রাশেদাকে সন্দেহভাজন খুনি ধরে তদন্ত শুরু করা হয়। একপর্যায়ে কুমিল্লার মিয়া বাজার এলাকা থেকে রাশেদা ও হুমায়ুনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে চট্টগ্রাম নগরীর ইপিজেড এলাকা থেকে অন্য চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

 

পিবিআইয়ের সহকারী উপপরিদর্শক তারেক হোসেন জানান, রাশেদার আগের স্বামী ছিলেন দেলোয়ার হোসেন। দুজনই ইয়াবাসহ বাকলিয়া থানা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়। ওই মামলা পরিচালনা করতে গিয়েই অ্যাডভোকেট ওমর ফারুক বাপ্পীর সঙ্গে রাশেদার পরিচয় হয়। একপর্যায়ে তা বিয়েতে গড়ায়।

কিন্তু বিয়ের কিছুদিন পরই তাদের মধ্যে দাম্পত্য কলহ শুরু হয়। বিয়ের কাবিননামা দুই লাখ টাকা হওয়ায় বাপ্পী প্রায়ই রাশেদাকে দুই পয়সার মেয়ে বলে উপহাস করতেন। এর জের ধরে পাঁচলাইশ ও কোতোয়ালি থানায় তারা পাল্টাপাল্টি মামলা করেন। মামলার বিচারকালে অ্যাডভোকেট বাপ্পী ডিভোর্স দিয়েছেন মর্মে কাগজপত্র তৈরি করে মামলা থেকে রেহাই পান।

এর জের ধরে পাল্টাপাল্টি মামলা চলার একপর্যায়ে দুজনের মধ্যে আবার যোগাযোগ গড়ে ওঠে। রাশেদা বিয়ের কাবিননামার অঙ্ক দুই লাখ থেকে বাড়িয়ে পাঁচ লাখ করার পরিকল্পনা করে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতেই রাশেদা অন্য আসামি হুমায়ুনকে ভাই সাজিয়ে ২০ নভেম্বর বি আমান আলী সড়ক এলাকার বাসাটি ভাড়া নেয়। পরে সেখানে যান অ্যাডভোকেট বাপ্পী।

 

শুক্রবার সন্ধ্যায় বাপ্পী বাসায় যাওয়ার পর পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী হুমায়ুনসহ অন্যরা এসে দরজায় টোকা দেয়। রাশেদা দরজা খুলে দেয়। আসামিরা ভেতরে ঢোকার পর কাবিননামায় জোর করে স্বাক্ষর নিতে গেলে বাপ্পী চিৎকার দেন। এ সময় আসামিরা তাকে বেঁধে ফেলে এবং মুখে স্কচটেপ লাগিয়ে দেয়। নাকে-মুখে স্কচটেপ লাগিয়ে দেওয়ার পরপরই বাপ্পী অজ্ঞান হয়ে পড়েন। জ্ঞান ফেরানোর জন্য তার চোখে-মুখে পানি ছিটানো হয়। কিন্তু জ্ঞান আর ফেরেনি।এ সময় হুমায়ুনের সঙ্গে আসা আসামিরা বলে, এ অবস্থায় বাপ্পীর কাছ থেকে দস্তখত নেওয়া সম্ভব নয় বলে চলে যেতে চাইলে রাশেদা বাধা দেয়। বলে, আমার কাজ না করে যাও কেন? আমি যেহেতু ওকে পেলাম না, তাই অন্য নারীও যেন না পায় সে জন্য ওর পুরুষাঙ্গ কেটে দাও। এরপর হুমায়ুন রাশেদাকে নিয়ে রিকশাযোগে মুরাদপুরে চলে যায়।

ওই দিকে বাসায় থাকা আসামিরা মোবাইল ফোনে রাশেদাকে জানায়, তারা কাজ সেরে মোবাইল ফোনে ছবি তুলে রেখেছে।

হত্যাকাণ্ডের পর আসামিরা মুরাদপুরে পৌঁছলে রাশেদা তাদের পাচ হাজার টাকা দিয়ে বহদ্দারহাটে বোনের বাসায় চলে যায়। সেখানে রাত যাপন শেষে পরদিন শনিবার ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়। কিন্তু কুমিল্লায় গিয়ে তারা মিয়াবাজার এলাকায় গাড়ি থেকে নেমে পড়ে। সেখানে হুমায়ুন তার বন্ধু সোহেলকে ফোন করে একটি রুম ঠিক করে দিতে বলে।

এরপর সোহেল তাদের একটি কক্ষ ভাড়া করে দেয়। কিন্তু পরে মত পাল্টে তারা ওই দিন রাতে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয় এবং রবিবার ভোরে ঢাকার সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে পৌঁছে। সেখান থেকে পরিচিত একজনের বাসায় যাওয়ার জন্য টঙ্গী পৌঁছে। কিন্তু যার কাছে যাওয়ার কথা ছিল তার মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় পুনরায় তারা কুমিল্লায় ফিরে আসে এবং পরে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে।

ওদের গ্রেপ্তার করে চট্টগ্রামে আনার পর জিজ্ঞাসাবাদে রাশেদা ও হুমায়ুন বাকি চার আসামির নাম প্রকাশ করে। সেই তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল বিকেলে চট্টগ্রাম থেকে চার আসামিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

 

সোমবার সন্ধ্যায় নগরীর খুলশী এলাকায় পিবিআই কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পিবিআই চট্টগ্রাম মহানগর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মঈন উদ্দিন।

 

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, চট্টগ্রাম আদালতে আইনজীবী ওমর ফারুক একটি মামলা পরিচালনা করার সময় আসামি দেলোয়ার হোসেনের স্ত্রী রাশেদার সঙ্গে পরিচয় হয়। রাশেদা বেগমও মাদক মামলায় জেল খাটেন। পরে আইনজীবী বাপ্পির চেষ্টায় তিনি জামিনে বেরিয়ে আসেন। পরে আইনজীবী বাপ্পির সঙ্গে তার গোপনে বিয়ে হয়।

ছয় থেকে আট মাসের সংসার জীবনে দাম্পত্য কলহের জের ধরে পরস্পরের বিরুদ্ধে দুজন নগরীর দুটি থানায় মামলা করেন। মামলার জের ধরে আইনজীবী ওমর ফারুক বাপ্পি মিথ্যা কাবিননামা তৈরি করে জামিনে আসেন বলে জানায় পুলিশ।

পিবিআই কর্মকর্তা জানান, জেল থেকে বের হওয়ার পর ফোনে তাদের মধ্যে আবার যোগাযোগ হয়। তারা একসঙ্গে ভালোভাবে থাকবেন, এমন আশ্বাসে ঘটনার কয়েকদিন আগে রাশেদা তার বন্ধু হুমায়ুনকে ভাই পরিচয় দিয়ে বাসা ভাড়া করেন। হুমায়ুনের সহায়তায় পরিকল্পিতভাবে বাপ্পিকে হত্যা করা হয়েছে বলে জানায় পিবিআই।

উল্লেখ্য, গত শনিবার সকালে নগরীর চকবাজার আমান আলী রোডের একটি ভবনের নিচতলার বাসা থেকে ওমর ফারুক বাপ্পির হাত-পা বাঁধা, শরীরের বিশেষ অঙ্গ কাটা অবস্থায় লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।সূত্র -সিটিজি টাইমস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *