চট্টগ্রাম, , শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২৫

admin

রশিদনগরে গ্রাম আদালতের র্যালিত্তোর আলোচনা ও র্যালি অনুষ্ঠিত

প্রকাশ: ২০১৭-১১-২৯ ১৯:০৯:০৫ || আপডেট: ২০১৭-১১-২৯ ১৯:০৯:০৫

মোহাম্মদ আইয়ুব, সদর প্রতিনিধি (কক্সবাজার):

আজ দুপুর বারটার দিকে রামু উপজেলার অন্তর্গত রশিদ নগর ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোগে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এন্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) এর সহযোগিতায় ‘অল্প সময়ে, স্বপ্ল খরচে সঠিক বিচার পেতে, চলো যাই গ্রাম আদালতে’ প্রতিপাদ্য বিষয় নিয়ে র্যা লি ও র্যা লিত্তোর আলোচনার আয়োজন করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন রশিদনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এমডি শাহ আলম, প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গ্রাম আদালত রামু উপজেলার সমন্বয়ক টিটু বড়ুয়া, বিশেষ অতিথি ছিলেন  রশিদ নগর ইউনিয়ন পরিষদ ৮নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ফারুক আহমদ।

 

র্যা লিত্তোর আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে টিটু বড়ুয়া বলেন, সুশাসন ও সুনাগরিক গঠনের মাধ্যমে দেশে শান্তি ও সমৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব। আইনের শাসন আজ সোনার হরিণে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে অল্প আয়ের জনগণের জন্য তা আরো অকল্পণীয়। এমতাবস্থায় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার এর স্থানীয় সরকার বিভাগ ইউরোপীয়ান  ইউনিয়ন এবং ইউএনডিপির যৌথ অর্থায়নে গঠিত গ্রাম আদালত দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাসরত নাগরিকে সুশাসন নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর।আমাদের পতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে ‘অল্প সময়ে, স্বল্প খরচে সঠিক বিচার পেতে, চলো যাই গ্রাম আদালতে’। এখানে অল্প সময় অর্থ হচ্ছে ৯০ দিনের মধ্যে প্রতিটি বিচার শেষ করতে হবে। আর স্বল্প খরচ অর্থ দেওয়ানী মামলায় শুধুমাত্র ২০ টাকা এবং ফৌজদারী মামলায় শুধুমাত্র ৩০ টাকা রেজিষ্ট্রেশন ফি দিয়ে বিচার প্রার্থনা করা যায়। এমন সুবিধা থাকা সত্ত্বেও  এখনো অনেক জনগণ গ্রাম আদালত সম্পর্কে অজ্ঞ। তাই আমরা র্যা লির মাধ্যমে গ্রাম আদালতের খবরটুকু জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে চাই। উপস্থিত জনগণের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা ঘরে ফিরে গিয়ে গ্রাম আদালতের কথা সকলকে জানিয়ে দিবেন।

 

সভাপতির বক্তব্যে চেয়ারম্যান এমডি শাহ আলম বলেন, যেদিন থেকে চেয়ারম্যান হিসেবে শপথ নিয়েছি সেদিন থেকে সুশাসন কায়েমের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। এতে করে আমাকে অনেকের রক্তচক্ষুতে পরিণত হতে হয়েছে। তবুও আমি থেমে নেই। অপরাধীরা যতই শক্তিশালী হোক না কেন আমি যতদিন ক্ষমতায় আছি ততদিন তাদের এই রশিদ নগরে কোন স্থান নেই। গ্রাম আদালত থেকে দেওয়ানী মামলার জন্য ২০ টাকা ও ফৌজদারী মামলার জন্য ৩০ টাকা গাম আদালত থেকে নির্ধারিত থাকলেও আমরা তাও গরীব মানুষদের জন্য মওকুফ করে দিই এবং নির্ধারিত ৯০ দিনের মধ্যে তদন্তপূর্বক বিচারিক কার্যক্রম সম্পাদন করে রায় দিয়ে দিই। এতে করে অনেক বিচার প্রার্র্থীকে এখন আর আদালতে গিয়ে হয়রানের শিকার হতে হচ্ছে না। আমি আশা করব দেশের সমস্ত ইউনিয়ন পরিষদ আমার ইউনিয়নের মত কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। পরিশেষে তিনি সরকারকে গ্রাম আদালতকে শক্তিশালী করা এবং জনগণকে সচেতন করার পদক্ষেপ নেয়ার জন্য ধন্যবাদ জানান।

 

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ফারুক আহমদ মেম্বার বলেন, আমার ওয়ার্ডসহ সমস্ত ইউনিয়নে সুশাসন নিশ্চিত করার জন্য আমরা বদ্ধপরিকর। জনগণের সুবিচার, শান্তি ও নিরাপত্তা বিধানের জন্য আমরা নিরলস কাজ করে যাচ্ছি। তবে জনগণকেও আমাদের সহযোগিতা করতে হবে। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, জনগণও আমাদের পাশে থাকলে আমরা আমাদের নির্ধারিত টার্গেটে পৌঁছাতে পারব।

 

র্যা লিত্তোর আলোচনায় স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ছাড়াও এইচএসডি মডেল হাই স্কুলে শিক্ষকবৃন্দ ছাত্রছাত্রীরা উপস্থিত ছিলেন।

 

উল্লেখ্য, সুবিধাবঞ্চিত ও প্রান্তিক গ্রামীণ জনজীবনে মানুষের মাঝে সুষ্ট বিরোধের সহজ নিষ্পত্তি ও বিচার ব্যাবস্থায় প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করণের লক্ষে, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্থানীয় সরকার বিভাগ, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ও ইউএনডিপি এর যৌথ অর্থায়নে বাংলাদেশের ৮ টি বিভাগে, ২৭টি জেলায়, ১২৮টি উপজেলায়র ১০৮০ টি ইউনিয়নে সহযোগিতায় ২০১৬-২০১৯ মেয়াদে “বাংলাদেশে গ্রাম আদালত সক্রিয়করল (২য় পর্যায়) প্রকল্প” বাস্তবায়ন করছে। র্বালদেশ লিগ্যাল এইড এন্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) এই প্রকল্প বাস্তবায়নে সহযোগী সংস্থা হিসেবে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে নিয়োজিত আছেন।

 

১৯৭৬ সালে গ্রাম আদালত অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে গ্রাম আদালত ব্যবস্থা চালু হয়। এরপর গ্রাম আদালত আইন ২০০৬ (২০১৩ সালে সংশোধিত) এবং গ্রাম আদালত বিধিমালা ২০১৬ প্রণয়েনের মাধ্যমে এ ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করে।

 

গ্রাম আদালতের বিচারক প্যানেলের সদস্য মোট ৫জন (ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, ২জন নির্বাচিত প্রতিনিধি এবং বাকী ২জন স্থানীয় সমাজের সদস্য) উভয়পক্ষের বক্তব্য ও সাক্ষিদের সাক্ষ্য, প্যানেল সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে গ্রাম আদালতের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সদস্যগণের ভোটের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও আদালতের চেয়ারম্যান কর্তৃক প্রকাশ্যে আদালতে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়। পুরো বিচার প্রক্রিয়া নথিবদ্ধ করা হয়। সাধারণভাবে, গ্রাম আদালতে শুনানীর কার্যক্রম শুরু হওয়ার সর্বোচ্চ ৯০(নব্বই) দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হয়।

 

গ্রাম আদালতের কিছু ব্যতিক্রম দিক রয়েছে যা অন্য আদালত থেকে একে অনন্য করেছে।তাহল-

 

১. গ্রাম আদালত এক ধরনের মিশ্র আদালত যা বিচার ও পক্ষগণের মধ্যে সমঝোতা উভয়ই করে।

২. বিরোধীয় পক্ষগণের মধ্যে সম্পর্কের পুনর্মিলন ঘটায়।

৩. গ্রাম আদালতে দেওয়ানী ও ফৌজদারী উভয় প্রকারেরর বিরোধ নিষ্পত্তি হতে পারে।

৪. দ্রুত সময়ে বিরোধ নিষ্পত্তি হয়। খরচ কম বা নাই বললেই চলে।

৫. নিজের কথা নিজে বল যায় আইনজীবীর মাধ্যমে বলতে হয়না।

৬. সাক্ষ্য প্রমাণ হাতের কাছে, পক্ষরা চাইলেও কোনো কিছু গোপন করতে পারেনা।

৭. উভয় পক্ষই বিচারক প্যানেলে নিজেদের পছন্দমত প্রতিনিধি নিয়োগ দিতে পারে।

৮. নির্ধারিত দিনে উভয় পক্ষের উপস্থিতিতে শুনানীল মাধ্যমে সিদ্ধান্ত প্রদান করা; এবং নির্ধারিত তারিখের মধ্যে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা।

৯. গ্রাম আদালতে সিদ্ধানত সর্বসম্মত বা ৪:১ বা ৩:১ হলে অন্য কোন আদালতে আপিল হয়না।

যে ইউনিয়নে ঘটনা ঘটেছে বা মামলার কারণ উদ্ভব হয়েছে অথবাা অপরাধ সংগঠিত হয়েছে সে ইউনিয়নেই গ্রাম আদালত গঠিত হবে। গ্রাম আদালতের আবেদনপত্রটি সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বরাবর দাখিল করতে হবে।

গ্রাম আদালত একটি আইনি আদালত, যা অল্প সময়ে, স্বল্প খরচে এবং অতি সহজে ইউনিয়ন পর্যায়ে মামলার নিষ্পত্তি করে থাকে। এ আদালতে ৭৫ টাকা মূল্যমানের দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলার বিচার করে তাকে এবং এজন্য তাদেরকে (গ্রামীণ জনগণকে) ফৌজদারী মামলার জন্য ১০টাকা ও দেওয়ানী মামলার জন্য ২০ টাকা ফি দিতে হয়। এছাড়া আর কোনো খরচের প্রয়োজন নেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *