চট্টগ্রাম, , বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪

Alauddin Lohagara

আলীকদমে মাতামুহুরী নদীতে বিষ প্রয়োগে নির্বিচারে মাছ শিকার বন্ধ হচ্ছেনা

প্রকাশ: ২০১৭-১২-২১ ২০:৫৩:৩৬ || আপডেট: ২০১৭-১২-২১ ২০:৫৩:৩৬

বেলাল আহমদ,(বিশেষ )প্রতিনিধি :

বান্দরবানের আলীকদম উপজেলায় মাতামুহুরী নদীতে বিষ প্রয়োগে নির্বিচারে মাছ শিকার বন্ধ হচ্ছেনা। শুস্ক মৌসুমে সংঘবদ্ধ একটি সিন্ডিকেট নদীতে বিষ ঢেলে মৎস্য নিধন শুরু করে। বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) উপজেলার চৈক্ষ্যং ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডস্থ নদীর বাদশা মিয়ার কুম এলাকায় বিষ প্রয়োগের ঘটনা ঘটে। এতে করে নদীর প্রায় ৩ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে নানান প্রজাতির লক্ষ লক্ষ মাছ মরে ভেসে উঠে।

 

প্রত্যেক্ষদর্শীরা জানায়, কিছুদিন আগেও নদীর বিভিন্ন স্থানে বিষ প্রয়োগ করা হয়। এতে নদীর প্রায় ২-৩ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিভিন্ন প্রজাতির লক্ষ লক্ষ মাছ অচেতন হয়ে পানির উপরে ভেসে উঠে। বিষ প্রয়োগে মাছ শিকারের কারণে বিপন্ন প্রজাতির ছোট-বড় মাছগুলো মারা যাচ্ছে। পাশাপাশি প্রাকৃতিকভাবে তৈরী মাছের খাবার বিনষ্টসহ মাছের বংশ বিস্তার বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। আর হুমকির মুখে পড়ছে জীব বৈচিত্র্য।

 

জানা যায়, আলীকদম উপজেলার মাতামুহুরী রিজার্ভ এলাকার দূর্গম পাহাড়ভাঙ্গা নামক স্থান থেকে উৎপত্তি হওয়া মাতামুহুরী নদী আলীকদম, লামা ও চকরিয়া উপজেলার ভুখন্ড দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে মিলিত হয়। বাংলাদেশে একমাত্র নদী মাতামুহুরী যেই নদী এই দেশে সৃষ্টি এই দেশে শেষ। বেশ কয়েক বছর ধরে শীত মৌসুমে নদীর পানি কমে যাওয়ার সাথে সাথে লামা, আলীকদম ও চকরিয়া কেন্দ্রিক কিছু অতি লোভী মৎস্য শিকারি নদীর বিভিন্ন অংশে বিষ প্রয়োগ করে মিটা পানির চিংড়িসহ হরেক প্রজাতির মাছ আহরণ করে থাকেন।

 

স্থানীয়রা জানায়, ‘মেল’ একটি পাহাড়ি লতা। যা অত্যান্ত বিষাক্ত পদার্থ (বিষ)। এটি পানিতে প্রয়োগ করলে মাছ পানির গভীর থেকে অচেতন হয়ে উপরে উঠে আসে। ফলে যে কেউ সহজে মাছ ধরতে পারেন। দুষ্কৃতিকারীরা সময় সুযোগ বুঝে বিষাক্ত লতার রস নদীর পানিতে ছিটিয়ে দেয়। পরে নদীর ভাটির অংশে বিষক্রিয়া শুরু হয়ে মাছ মরে ভেসে উঠার সাথে সাথে তারা এসব মাছ দ্রুত আহরণ করে গ্রামগঞ্জ ও হাট বাজারে বিক্রি করে।

 

সরজমিনে পরিদর্শনে দেখা যায়, নদীর প্রায় ৩ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে মরা, আধা মরা মাছ পানিতে ভেসে ওঠে। ভেসে ওঠা মাছের বেশীর ভাগ চিংড়ি মাছের পোনা। এ সময় শত শত উৎসুক নারী পুরুষ ও শিশুরা হাতজাল, ঠেলাজাল, চালুনী, মশারী, ফিন্যা নিয়ে নদীতে মাছ ধরছেন। প্রতিদিনই নদীর কোনো না কোন অংশে বিষ প্রয়োগে মাছ নিধনের ঘটনা ঘটছে।

 

নদীপাড়ের বাসিন্দারা জানায়, সকালে লোকজন নদীতে গোসল করতে গেলে তারা মরা-আধা মরা চিংড়ি পোনা আর ছোট ছোট পুঁটি মাছের পোনা ভাসতে দেখেন। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে নদীর ঘাটে ঘাটে নারী পুরুষেরা মাছ ধরতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। তারা জানান, দুর্বৃত্তদের জালে বড় মাছগুলো আটকা পড়লেও ছোট মাছগুলো নদীতে ভেসে ওঠে। নদীতে মাছ ধরতে আসা অনেকে বলেন, কে বা কারা নদীতে বিষ দিয়েছে আমরা জানি না। নদীতে মাছ ভাসছে তাই মাছ ধরতে এসেছি। শুস্ক মৌসুমে অন্তত ১৫/২০ বার দুস্কৃতীকারিরা নদীর বিভিন্ন কুমে বিষ প্রয়োগ করে।

 

আলীকদম উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প. কর্মকর্তা শহীদুর রহমান বলেন, বিষ প্রয়োগের মরা বা আক্রান্ত মাছ খেলে মানুষ বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে। তাৎক্ষণিক ডায়রিয়া ও আমাশয় সহ অনেক রোগে আক্রান্ত হবে। এছাড়া এই ধরনের বিষ আক্রান্ত মাছ কয়েকবার খাওয়ার পরে মানুষের শরীরে ক্যান্সার সহ নানান মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশংকা রয়েছে।

 

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা গোলাম মুতুর্জা বলেন, নদীতে বিষ প্রয়োগের ঘটনা কেউ জানায়নি। তবে বিষ প্রয়োগের বিষয়ে জেলেদেরকে সতর্ক থাকার জন্য বলা হয়েছে। প্রাকৃতিকভাবে তৈরী মাছের খাদ্য ও প্রজনন নষ্ট হয়ে যায়। উম্মুক্ত জলাশয়ে বিষ ঢেলে মাছ শিকার করা একটি দন্ডনীয় অপরাধ। অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হবে।

 

আলীকদম উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান বলেন, দোষীদের আইনের আওতায় আনতে উপজেলা মৎস্য অফিসারকে মামলা করতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *