Alauddin Lohagara
প্রকাশ: ২০১৭-১২-২৫ ১৯:৫৩:৩০ || আপডেট: ২০১৭-১২-২৫ ১৯:৫৩:৩০
বীর কন্ঠ ডেস্ক:
চট্টগ্রামের কর্ণফুলী থানার শাহ মিরপুরে এক প্রবাসীর বাড়িতে চার নারী ধর্ষণের ঘটনায় আন্দোলন জোরদার হচ্ছে। এ ঘটনার বিচারের পাশাপাশি বিভিন্ন মহল ও সংগঠন কর্ণফুলী থানার ওসিকে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে।
নারী উন্নয়ন ফোরামের ব্যানারে অবিলম্বে ধর্ষকদের গ্রেফতারের দাবিতে আগামী ২৭ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কমিশনারের কার্যালয় এবং পরদিন কর্ণফুলী থানা ঘেরাওয়ের কর্মসূচি ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, এ ব্যাপারে মামলা নিতে গড়িমসির ঘটনায় পুলিশের ‘আংশিক ব্যর্থতা’ ছিল বলে স্বীকার করেছেন সিএমপি’র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। সোমবার (২৫ ডিসেম্বর) দুপুরে কর্ণফুলী থানায় এক সংবাদ সম্মেলনে নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (বন্দর) হারুণ উর রশিদ হাযারি স্বীকার করেছেন ওই বিষয়ে পুলিশের আংশিক ব্যর্থতা ছিল।
গত ১২ ডিসেম্বর গভীর রাতে কর্ণফুলী উপজেলার বড়উঠান ইউনিয়নের এক বাড়িতে ডাকাতির সময় তিন প্রবাসী ভাইয়ের স্ত্রী ও তাদের এক বোনকে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। ধর্ষণের শিকার নারীরা ঘটনার পরদিন মামলা করতে গেলে ঠিকানা জটিলতার কথা বলে মামলা নিতে গড়িমসি করে পুলিশ।
পরে ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী বাবুর হস্তক্ষেপে পাঁচ দিন পর মামলা নেয় পুলিশ। এ পর্যন্ত সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেফতার করা হয় তিনজনকে।
গত সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) ওই চার নারীর মেডিকেল পরীক্ষায় ধর্ষণের আলামত মিলেছে।
এই পরিবারের চার ভাইয়ের মধ্যে তিনজন মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসী। তিন ভাইয়ের স্ত্রী তাদের শাশুড়ি ও দুই সন্তান নিয়ে ওই বাড়িতে থাকতেন। ধর্ষিতা গৃহবধূদের একজন ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা বলে পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান দিদারুল ইসলাম বলেন, ‘ওই বাড়িতে কোনো পুরুষ সদস্য থাকতেন না। ১২ ডিসেম্বর রাত ১টার দিকে কয়েকজন যুবক জানালার গ্রিল কেটে বাড়িতে প্রবেশ করে বৃদ্ধা মা ও দুই শিশুকে ছুরি ও অস্ত্র ধরে জিম্মি করে চার মহিলাকে বিভিন্ন রুমে নিয়ে ধর্ষণ করে। পুলিশের ঠেলাঠেলিতে ভুক্তভোগীরা মামলা করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। আমি তাদের ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের কাছে নিয়ে যাই এবং মন্ত্রীর নির্দেশে কর্ণফুলী থানা মামলা গ্রহণ করে।’
মামলা নিতে গড়িমসির কারণ সম্পর্কে কর্ণফুলী থানার ওসি সৈয়দুল মোস্তফা বলেন, ‘ঘটনার পর প্রথম থানায় এসে তারা তাদের যে ঠিকানা বলেছিল, তা পটিয়া এলাকায় হওয়ার কারণে তাদের পটিয়া থানায় যেতে বলি। তাছাড়া তারা শুরুতে এটিকে ডাকাতির ঘটনা বলে ধর্ষণের বিষয়টি খোলাসা করেননি।’
নগর পুলিশের কর্ণফুলী জোনের সহকারী কমিশনার জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ঘটনার জোর তদন্ত করছি এবং ইতোমধ্যে কয়েকজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদও করা হচ্ছে। দ্রুত এ ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেফতার করা হবে। কারো কোনো অবহেলা থাকলে সে ব্যাপারেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এদিকে নারী উন্নয়ন ফোরাম নামের একটি সংগঠন চার নারী ধর্ষণের ঘটনায় মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে। ফোরামের কর্ণফুলী উপজেলা কমিটির আহ্বায়ক ও উপজেলার মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান বানেজা বেগম নিশি বলেন, ‘প্রবাসীর বাড়িতে ডাকাতি করতে গিয়ে চার নারীকে ধর্ষণের যে ঘটনা ঘটেছে, তা নজিরবিহীন। ধর্ষণের পর কর্ণফুলী থানা-পুলিশ ঠিকানার অজুহাত তুলে মামলা নিতে গড়িমসি করেছে। তারা ধর্ষণের শিকার অসহায় নারীদের পটিয়া ও কর্ণফুলী থানায় বারবার পাঠিয়ে অযথা হয়রানি করেছে।’
কর্ণফুলী থানা পুলিশ নারীদের নিরাপত্তা দিতে এবং অপরাধীদের গ্রেফতারে ব্যর্থ হয়েছে উল্লেখ করে ওসি সৈয়দুল মোস্তফার প্রত্যাহার দাবি করেন তিনি।
অবিলম্বে ধর্ষকদের গ্রেফতারের দাবিতে আগামী ২৭ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কমিশনারের কার্যালয় এবং পরদিন কর্ণফুলী থানা ঘেরাওয়ের কর্মসূচি ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।- পরিবর্তন