চট্টগ্রাম, , বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪

Alauddin Lohagara

শূণ্যরেখায় আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের মাঝে আতংক ছড়িয়ে পড়েছে

প্রকাশ: ২০১৮-০২-২০ ২১:০৯:৫৭ || আপডেট: ২০১৮-০২-২০ ২১:০৯:৫৭

নিউজ ডেস্ক :

বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সীমান্তের বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তমব্রু শূন্যরেখায় বসবাসকারি রোহিঙ্গারা ওই এলাকা ছেড়ে যাচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত ৯ ফেব্রুয়ারী মিয়ানমারের উপ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মেজর জেনারেল অং সো বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের তমব্রু এলাকার বিপরীতে সীমান্ত পরিস্থিতি পরিদর্শনের করে শূণ্যরেখায় আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের সেখান থেকে সরে যেতে বলেছেন। এরপর থেকে মাইকিং করা হচ্ছে। এতে আতংকিত হয়ে শূণ্যরেখা ছাড়ছে রোহিঙ্গারা।

মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের এ নির্দেশানা প্রচারের পর থেকে শনিবার পর্যন্ত নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্তের শূণ্যরেখায় আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে ২০ থেকে ৩০ টি পরিবার পালিয়ে উখিয়ার বিভিন্ন ক্যাম্পসহ সীমান্তবর্তী এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে বলে জানান স্থানীয় ঘুমধুম ইউপি চেয়ারম্যান এ কে এম জাহাঙ্গীর আজিজ চৌধুরী ও শূন্যরেখায় আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মাঝি দীল মোহাম্মদ।

 

বিজিবির ৩৪ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্ণেল মঞ্জুরুল হাসান খান বলেন, গত ৯ ফেব্রুয়ারী মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ মাইকিং করে সীমান্তের শূন্যরেখা থেকে রোহিঙ্গাদের সরে যেতে নির্দেশনা দেয়ার কথা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে অবহিত হয়েছি। বিষয়টি সঙ্গে সঙ্গেই উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করি।

‘এরপর থেকে প্রায় প্রতিদিনই সীমান্তের ওপার থেকে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ মাইকিং করে শূন্যরেখায় আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের উদ্দ্যেশে এ ধরণের প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। এতে রোহিঙ্গারা শূণ্যরেখা থেকে কোন দিকে সরে যাবে মাইকিংয়ে প্রচারের ঘোষণায় অস্পষ্ট। এ নিয়ে রোহিঙ্গারাও এক প্রকার সিদ্ধান্তহীন।’

লে. কর্ণেল মঞ্জুরুল বলেন, গত ২৫ আগষ্টের পর রোহিঙ্গা সংকটের শুরুর দিক থেকে নাইক্ষ্যংছড়ির তমব্রু সীমান্তের শূন্যরেখায় আশ্রয় নিয়েছে ছয় হাজারের বেশী রোহিঙ্গা। এদের অধিকাংশেরই সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের বিভিন্ন এলাকায়।

তমব্রু এলাকার কোনারপাড়া সীমান্তের শূণ্যরেখায় আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মাঝি দীল মোহাম্মদ বলেন, গত ৯ ফেব্রুয়ারী সকালে মিয়ানমারের উপ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মেজর জেনারেল অং সো সীমান্ত এলাকা পরিদর্শন করেন। এসময় তিনি তমব্রু সীমান্তের শূণ্যরেখায় আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের উদ্দ্যেশে মাইকিং করে সেখান থেকে সরে যেতে নির্দেশ দেন।

‘মেজর জেনারেল অং সো মাইকিং করে জানান, শূন্যরেখায় আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভূমির মালিক মিয়ানমার। উদ্ভুদ পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গাদের শূণ্যরেখায় অবস্থান করা আইনগত অবৈধ। দ্রুত শূন্যরেখা থেকে সরে না গেলে মিয়ানমার সেনা বাহিনী কঠোর ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে।’

দীল মোহাম্মদ বলেন, ‘মিয়ানমার উপ প্রধানমন্ত্রীর এ ঘোষণার পর থেকে সীমান্তের ওপাড়ে গাছের উপর মাইক বেঁধে প্রায় প্রতিদিনই কয়েক ঘন্টা অন্তর এ ধরণের নির্দেশনা প্রচার করা হচ্ছে। শনিবারও দিনের বিভিন্ন সময়ে অন্তত ৯/১০ বার এ ধরণের প্রচারণার শব্দ শুনতে পেয়েছি।’

‘মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের এ ধরণের নির্দেশনার পর থেকে শূণ্যরেখায় আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের মাঝে আতংক ছড়িয়ে পড়েছে। কোন দিকে সরে যাবে সিদ্ধান্তহীন। এদের অনেকে রাতের আঁধারে পালিয়ে গিয়ে বালুখালী ও কুতুপালং সহ সীমান্তবর্তী বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে। শনিবার পর্যন্ত অন্তত ২০/৩০ টি রোহিঙ্গা পরিবার শূণ্যরেখার ক্যাম্প থেকে পালিয়ে গেছে।’

অন্যদিকে সীমান্তবর্তী এলাকায় মিয়ানমার সেনা বাহিনীর আনাগোনা আগেকার সময়ের চেয়ে বেড়ে যাওয়ায় রোহিঙ্গারা আরো বেশী আতংকিত বলে জানান শূণ্যরেখায় আশ্রয় নেয়া ক্যাম্পের মাঝি দীল মোহাম্মদ।

মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ মাইকিং করে সীমান্তের শূণ্যরেখা থেকে সরে যেতে নির্দেশনা প্রচার করার পর থেকে রোহিঙ্গারা আতংকিত হয়ে সীমান্তবর্তী এলাকাসহ বিভিন্ন ক্যাম্পে পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করেন ঘুমধুম ইউপি চেয়ারম্যান এ কে এম জাহাঙ্গীর আজিজ চৌধুরীও।

তিনি বলেন, ‘আতংকিত রোহিঙ্গারা শূন্যরেখা থেকে রাতের আঁধারে পালিয়ে ঘুমধুমের বিভিন্ন এলাকা ও ক্যাম্পে ছড়িয়ে পড়ছে। এ রকম পালিয়ে আত্মগোপন করা কয়েকটি পরিবারের তথ্য প্রশাসনের সংশ্লিষ্টদের অবহিত করেছি।’

ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর বলেন, শূন্যরেখায় আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের অনেকের আত্মীয়-স্বজন উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাম্পে অবস্থান করছেন। এসব রোহিঙ্গাদের সহায়তায় শূণ্যরেখায় আশ্রয় নেয়া আতংকিতরা রাতের আঁধারে পালিয়ে আত্মগোপনের পর বিভিন্ন ক্যাম্পে গিয়ে অবস্থান করছে।

এদিকে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. মাহিদুর রহমান বলেন, নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্তের শূন্যরেখায় আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা আতংকিত হয়ে পালিয়ে বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ার বিষয়টি নানা সূত্রে অবহিত হয়েছি। প্রশাসন নিবন্ধনের আওতায় না আসা এবং নতুন করে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন ট্রানজিট ক্যাম্পে রাখা হয়। এরপর যথাযথ প্রক্রিয়া শেষে তাদের বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিয়ে আসা হচ্ছে।

শূণ্যরেখা থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা যেখানেই ছড়িয়ে পড়–ক না কেন তথ্য পেলে তাদের ক্যাম্পে নিয়ে আসার ব্যাপারে প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে বলে জানান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *