Alauddin Lohagara
প্রকাশ: ২০১৮-০২-২৪ ০০:৪০:২৭ || আপডেট: ২০১৮-০২-২৪ ০০:৪১:১৬
এম. হোছাইন মেহেদী
বন্ধু বা ক্লাসমেট বলে বলছি না।
ক্লাসের স্মার্ট বয়দের তালিকায় অন্যতম ছিলো শহীদুল ইসলাম (রশিদের পাড়া)। দূর্দান্ত ফুটবল খেলতো। উচ্চতা, রং, শারীরিক গঠণ সবই ছিলো দেখার মতো। ১৯৯৮ সালে দক্ষিণ সাতকানিয়া গোলামবারী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে সাফল্যের সাথে এসএসসি পাস করে শহীদ। দু’চোখে হাজারো রঙ্গিন স্বপ্ন নিয়ে ভর্তি হয় কলেজে। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস ১৯৯৯ সালের কোন এক সন্ধ্যায় এক বন্ধুকে বাঁচাতে গিয়ে নিজেই পড়লো ঘাতকদের ছুরির নিচে। কেটে যায় ঘাড়ের স্পাইনাল কর্ড।
ফলাফল আজীবন পঙ্গুত্ব বরণ। তারপর থেকেই হুইল চেয়ারে করে চলছে তার জীবন।
নিয়তি তাকে বানিয়ে দিয়েছে “প্রতিবন্ধী”! যদিও তার নামের আগে “প্রতিবন্ধী” শব্দটা ব্যবহার করতে আমি নারাজ। কিন্তু শহীদ পঙ্গুত্বকে অভিশাপ হিসেবে না নিয়ে, নিয়েছে চ্যালেঞ্জ হিসেবে।
আমার মতে ৯৮ ব্যাচের প্রিয় বন্ধু শহীদুল ইসলাম-ই সর্বোত্তম নিঃস্বার্থ সোনার মানুষ। কিন্তু কেন?? তাঁর উত্তর পেয়ে যাবেন, যদি লেখাটা ধৈর্য্য সহকারে শেষ পর্যন্ত পড়া হয়।
মানুষ স্বভাবতই স্বার্থপর। নিঃস্বার্থদের সংখ্যা নিতান্তই নগন্য। এক সময়ের স্বপ্নবাজ শহীদ সহজে হাল ছেড়ে দেবার পাত্র নন, হেরে যেতে রাজি নন জীবনের কাছে। স্বপ্ন দেখেন নিরক্ষর দেশ গড়ার।
সেই লক্ষ্যে এলাকায় গড়ে তুলেন একটি দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তার দৃঢ় ইচ্ছায় শারিরিক প্রতিবন্ধকতা ও নানা প্রতিকূলতা এড়িয়ে, পঙ্গুত্বকে পরাজয় করে ২০১২ সালের ১০ নভেম্বর তাঁর হাত ধরেই নিজ এলাকা লোহাগাড়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের রশিদের পাড়ায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে নূরিয়া হযরত অায়েশা ছিদ্দীকা (রা) মহিলা মাদ্রাসা। প্রবল ইচ্ছা শক্তি ও নিঃস্বার্থ চিন্তা-চেতনার কারণে সমাজের সকলের প্রশংসার পাত্র শহীদ। অথচ এই এলাকায় অনেক বড় বড় পেশাজীবী, শিল্পপতি ও রাজনীতিবিদ আছেন। হুইল চেয়ারে বসেই শহীদ তাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে প্রমাণ করেছেন ইচ্ছা থাকলে সব কিছুই সম্ভব।
বর্তমানে ১ম শ্রেণী থেকে ৬ষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত পাঠদান করা হয় এ মাদ্রাসায়। ইতিমধ্যে গড়ে উঠেছে একতলা পাকা মাদ্রাসা ভবন। যার অায়তন প্রায় ২৫০০ বর্গফুট। আশার কথা দ্বিতীয় তলার কাজও চলছে। ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ২২০ জন। কর্মরত শিক্ষক আছেন ৯ জন। তৎমধ্যে পুরুষ শিক্ষক আছেন ৫ জন ও মহিলা শিক্ষক আছেন ৪ জন। প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন অত্র এলাকার বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন মাওলানা মসউদুর রহমান সাহেবের সুযোগ্য পুত্র মৌলানা মাচুমুর রহমান।
শহীদুল ইসলামের সাথে আলাপকালে জানা যায়, মাদ্রাসায় ছাত্র-ছাত্রীদের সম্পূর্ণ ফ্রিতে পাঠদান করা হয়। ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে কোন কোন ফি নেওয়া হয় না। শুভাকাঙ্খীদের আর্থিক সহযোগিতা থেকে শিক্ষকদের মাসিক বেতন ও অন্যান্য খরচ মেটানো হয়। প্রতি মাসে শিক্ষকদের মাসিক বেতন বাবদ মোট ৩৫০০০/-(পঁয়ত্রিশ হাজার) টাকা প্রয়োজন হয়। এই মাদ্রাসাকে ফাজিল শ্রেণি পর্যন্ত উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর। কিন্তু এ পথচলা তাঁর একার পক্ষে হয়তো দুঃসাধ্য। তাই
অত্র দ্বীনি প্রতিষ্ঠানের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতা কামনা করেছেন তিনি। যারা সহযোগিতা করতে চান ০১৮১৮-৪২৭২৯৫ এই নম্বরে শহীদুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।
আশা দেশের প্রতি ঘরে ঘরে শহীদের মতো নিঃস্বার্থ সোনার মানুষদের জন্ম হউক। তাহলেই সত্যিকার অর্থে সমৃদ্ধশালী সোনার বাংলা গড়ে তোলা সম্ভব হবে।
সূত্র -প্রিয়দেশ ম্যাগাজিন।