চট্টগ্রাম, , বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪

Alauddin Lohagara

রোহিঙ্গাদের এলাকায় সামরিক ঘাঁটি তৈরি করছে মিয়ানমার

প্রকাশ: ২০১৮-০৩-১২ ১৫:৪৪:৪৩ || আপডেট: ২০১৮-০৩-১২ ১৫:৪৪:৪৩

নিউজ ডেস্ক:

প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গাকে দেশ থেকে তাড়ানোর পর তাদের এলাকাগুলোতে ঘাঁটি তৈরি করা শুরু করেছে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী।

রাখাইন রাজ্যের যে এলাকায় সামরিক ঘাঁটিগুলো তৈরি করা হচ্ছে সেখানে একসময় রোহিঙ্গাদের ঘরবাড়ি ও মসজিদ ছিল।

স্যাটেলাইট ছবি থেকে পাওয়া প্রমাণের উল্লেখ করে সোমবার অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এসব কথা জানিয়েছে বলে খবর বার্তা সংস্থা রয়টার্সের।

গত বছরের ২৫ অগাস্ট রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের এক হামলার জবাবে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে কঠোর দমন অভিযান শুরু করে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী। তাদের দমনাভিযানের মুখে ঘরবাড়ি ছেড়ে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়।রোহিঙ্গাদের সাড়ে তিনশতাধিক গ্রামে আগুন লাগিয়ে সেগুলো ধ্বংস করে দেয় মিয়ানমারের বাহিনী।

সোমবার অ্যামনেস্টির প্রকাশ করা এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এরপরও যে গ্রামগুলো রক্ষা পেয়েছিল, যে ভবনগুলো আগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি, সেগুলো সব বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

এরপর দ্রুত সেসব এলাকায় ভবন ও রাস্তা তৈরি করা হচ্ছে, সেখানে অন্তত তিনটি নতুন ঘাঁটি নির্মাণাধীন রয়েছে বলে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার গোষ্ঠীটি জানিয়েছে।

একটি ঘটনায়, যে রোহিঙ্গা গ্রামবাসীরা মিয়ানমারে রয়ে গিয়েছিলেন তাদের জোরপূর্বক উচ্ছেদ করে সেখান দিয়ে একটি ঘাঁটিতে যাওয়ার রাস্তা তৈরি করা হয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

এক বিবৃতিতে অ্যামনেস্টির ক্রাইসিস রেসপন্স ডিরেক্টর তিরানা হাসান বলেছেন, “রাখাইন রাজ্যে সামরিক বাহিনীকে নাটকীয় গতিতে ভূমি দখল করতে দেখছি আমরা। যেই নিরাপত্তা বাহিনী রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে তাদের জন্যই সেখানে আবাসন গড়ে তোলা হচ্ছে।”

ডিসেম্বরের শেষ দিক থেকে আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি এমন অন্তত চারটি মসজিদকে ধ্বংস করা হয়েছে অথবা মসজিদগুলোর ছাদ বা অন্যান্য অংশ ভেঙে ফেলা হয়েছে। এমন একটি সময়ে এসব করা হয়েছে যখন সেখানে উল্লেখযোগ্য কোনো সহিংস ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি, জানিয়েছে অ্যামনেস্টি।

স্যাটেলাইট ছবিগুলোতে দেখা গেছে, রোহিঙ্গাদের একটি গ্রামে সীমান্ত পুলিশের পোস্টের জন্য ভবন গড়ে তোলা হচ্ছে যার পাশেই একটি মসজিদ ছিল, যা সম্প্রতি গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

অ্যামনেস্টির এসব অভিযোগের বিষয়ে মন্তব্যের জন্য নোবেল বিজয়ী অং সান সুচির সরকারের কোনো মুখপাত্র বা সামরিক বাহিনীর কোনো মুখপাত্রকে তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

মিয়ানমারের কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, যেসব রোহিঙ্গারা ফিরে আসছেন তাদের জন্য নতুন বাসা নির্মাণের উদ্দেশ্যে গ্রামগুলো বুলডোজার দিয়ে ‘পরিষ্কার করা হচ্ছে’।

রাখাইনে জাতিগত নির্মূল অভিযান চালানো হয়েছে এমন অভিযোগের পক্ষে ‘পরিষ্কার প্রমাণ’ হাজির করার জন্য জাতিসংঘ ও অন্যান্যদের কাছে দাবি জানিয়েছে মিয়ানমার।

নভেম্বরে পালিয়ে যাওয়া রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে একটি চুক্তি হয়েছে। ‍যারা ফিরে যাবে তাদের থাকার জন্য অস্থায়ী শিবির তৈরি আছে বলে জানিয়েছে মিয়ানমার; কিন্তু প্রক্রিয়াটি এখনও শুরু হয়নি।

অ্যামনেস্টি বলেছে, রোহিঙ্গারা যে এলাকায় বসবাস করতো তার ‘আকৃতিগত পরিবর্তন’ করে ফেলছে মিয়ানমার, সম্ভবত নিরাপত্তা বাহিনী ও রোহিঙ্গা নন এমন গ্রামবাসীকে জায়গা দিতে এমনটি করা হচ্ছে যেন শরণার্থীরা ফিরে আসতে না চায়।

“যেসব রোহিঙ্গা নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর হাতে নিহত হওয়া এড়াতে পেরেছে তারা ফিরে এসে সেই একই নিরাপত্তা বাহিনীর এত কাছে বসবাস করতে স্বস্তিবোধ করবে না, বিশেষ করে মানবাধিকার লঙ্ঘন করলেও যখন জবাবদিহি করতে হয়না এমন পরিস্থিতিতে,” বলেছে মানবাধিকার গোষ্ঠীটি।

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *