চট্টগ্রাম, , বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪

Alauddin Lohagara

বিশ্বকাপ না জিতলে ‘অবসর’ নেবেন মেসি!

প্রকাশ: ২০১৮-০৩-২০ ০২:০৫:২২ || আপডেট: ২০১৮-০৩-২০ ০২:০৫:২২

স্পোর্টস ডেস্ক :

পেলে না ম্যারাডোনা, কে সেরা? ফুটবলে এক চিরন্তন দ্বন্দ্ব। যার অবসান ঘটানোর মত একজন মাত্র ফুটবলার জন্ম নিলেন এখনও পর্যন্ত। যদিও, তাকেই ভক্তরা এখনই পেলে-ম্যারাডোনার চেয়ে সেরার আসনে বসিয়ে দিয়েছেন ইতোমধ্যে। তিনি আর্জেন্টিনার আরেক কিংবদন্তি, লিওনেল মেসি। যার পায়ের জাদুতে এখনও মোহিত হচ্ছে পুরো ফুটবল বিশ্ব।

 

কিন্তু নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে কেউ কী সত্যি সত্যি মেসিকে সেরা বলতে পারবেন? তিনি তো ক্লাব পর্যায়ের একজন সেরা ফুটবলার। আলফ্রেডো ডি স্টেফানোও তো এমন একজন ফুটবলার ছিলেন। যিনি, ক্লাব পর্যায়ে নিজেকে নিয়ে গিয়েছিলেন অন্য এক উচ্চতায়। রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে ৫০-৬০ এর দশকে ডি স্টেফানো নিজেকে যে জায়গায় নিয়ে গিয়েছিলেন, সেখানেই বলতে গেলে মেসি নিজেকে নিয়ে গেলেন।

 

ডি স্টেফানো যদিও আর্জেন্টিনা ছেড়ে স্প্যানিশ জাতীয়তা নিয়ে খেলেছেন স্পেন দলের হয়ে। তবুও, ১৯৪৭ সালে ডি স্টেফানো আর্জেন্টিনাকে উপহার দিয়েছেন কোপা আমেরিকার শিরোপা। লিওনেল মেসি সেটাও পারেননি। তার যা অর্জন ক্লাবের হয়ে। কোনো শিরোপা বাকি নেই যা তার হাতে ওঠেনি; কিন্তু জাতীয় দলের হয়ে লিও মেসির অর্জন একেবারে শূন্য। অথচ দেশটির ফুটবল সম্রাট হিসেবে পরিচিত, দিয়েগো ম্যারাডোনার শ্রেষ্ঠত্ব ক্লাব পর্যায়ের চেয়ে জাতীয় দলের হয়েই বেশি। তিনিই তো এককভাবে জিতিয়েছিলেন ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপ। দলকে তুলেছিলেন ১৯৯০ বিশ্বকাপের ফাইনালে।

 

মেসির ভাগ্যটাই সু-প্রসন্ন নয় মূলতঃ। কারণ, সর্বশেষ তিনটি বড় টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেললেও, মেসির হাতে উঠলো না কোনো শিরোপা। ব্রাজিলের মারাকানা স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপের সোনালি ট্রফিটা যেন মেসির দিকে তাকিয়ে উপহাসের হাসি দিয়েছিল। এত কাছে এসেও কত দুরে থাকতে হলো বার্সেলোনার আর্জেন্টাইন সুপার স্টারকে। জার্মানির কাছে একমাত্র গোলে হেরেই অধরা ট্রফিটা আর ছুঁতে পারলেন না লিও মেসি।

 

এরপর ২০১৫ এবং ২০১৬ সালে টানা দু’বছরে দুটি কোপা আমেরিকার ফাইনালে উঠেছিল মেসির আর্জেন্টিনা; কিন্তু একই প্রতিপক্ষ চিলির কাছে হেরে শিরোপা বঞ্চিত থাকতে হয়েছে লা আলবেসেলেস্তেদের। মেসিকেও পুড়তে হয়েছে চরম হতাশায়। বিশেষ করে ২০১৬ কোপা আমেরিকার ফাইনালে হারের পর, ক্ষোভে-অভিমানে মেসি অবসরের ঘোষণাই দিয়ে বসেছিলেন। জাতীয় দলের জার্সি গায়ে তিনি আর খেলবেন না।

 

অবশেষে আর্জেন্টিনা প্রেসিডেন্ট থেকে শুরু করে সারা বিশ্বের কোটি কোটি ভক্তের অনুরোধে শেষ পর্যন্ত অবসর ভেঙ্গে দলে ফেরেন তিনি। এমনকি বাছাই পর্বের শেষ ম্যাচে ইকুয়ডরের বিপক্ষে মেসির অসাধারণ পারফরম্যান্সেই রাশিয়া বিশ্বকাপের টিকিট কাটতে সক্ষম হয়েছে আর্জেন্টিনা।

 

খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে বিশ্বকাপে গেলেও রাশিয়ায় কিন্তু শিরোপা জয়ের অন্যতম দাবিদার কিন্তু আর্জেন্টিনা। সেটা শুধুমাত্র মেসির কারণেই। আর্জেন্টাইন সমর্থকরাও এবার সবচেয়ে বেশি আশাবাদী, ক্যারিয়ারের হয়তো শেষ বিশ্বকাপে সোনালি ট্রফিটা উঠবে মেসির হাতেই। বার্সা তারকা নিজেও আশাবাদী, এবার আর বিশ্বকাপটা তার সঙ্গে উপহাস করবে না। সত্যি সত্যি ধরা দেবে তার হাতে।

 

যদি বিশ্বকাপটা রাশিয়া থেকে আর জিততেই না পারেন, তাহলে মেসি ঘোষণা দিয়ে দিলেন, তিনি আর জাতীয় দলের জার্সি গায়ে খেলবেন না। তিনি এবার সত্যি সত্যি অবসরের ঘোষণা দিয়ে দেবেন।

 

লা কোরনিসাকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বিশ্বকাপ নিয়ে নিজের ভাবনার কথা জানাতে গিয়ে মেসি বলেন, ‘আমরা অনুভব করি, যদি রাশিয়া থেকেও বিশ্বকাপটা জিততে না পারি, তাহলে একমাত্র পথ হচ্ছে জাতীয় দলের হয়ে খেলাটাই ছেড়ে দেয়া। আমি স্বপ্ন দেখি রাশিয়া থেকে বিশ্বকাপ জেতার। আমার ইচ্ছা, ২০১৪ সালের ব্রাজিল বিশ্বকাপে আমরা যেভাবে খেলেছি, সেই স্বপ্নটাকে জিইয়ে রাখা।’

 

নিজেদের ব্যর্থতার কথা স্মরণ করে মেসি বলেন, ‘আপনি কিন্তু সব সময় সঠিক থাকতে পারবেন না। ভুল হবেই। ব্যর্থ হবেনই। যেমনটা আর্জেন্টিনা ব্যর্থ হয়েছিল ব্রাজিলে।’

 

রাশিয়া বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে আর্জেন্টিনা খেলবে ‘ডি’ গ্রুপে আইসল্যান্ড, ক্রোয়েশিয়া এবং নাইজেরিয়া। গ্রুপ পর্ব থেকেই বলতে গেলে আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন দেখতে পারে। মেসিও সেই স্বপ্নে বিভোর। জাতীয় দলের হয়ে ১২৩ ম্যাচ খেলে এখনও পর্যন্ত ৬১ গোল করেছেন মেসি। এবার এই স্কোর টালি আরও এগিয়ে নেবেন তিনি এবং আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ এনে দেবেন- এই আশা করতেই পারেন আর্জেন্টাইন সুপারস্টার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *