চট্টগ্রাম, , শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

admin

সাতকানিয়ায়  ফসলি জমি থেকে এস্কেভেটর দিয়ে মাটি কাটার রমরমা ব্যবসা: হুমকির মুখে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক!

প্রকাশ: ২০১৮-০৪-০৭ ২০:৪৯:৫৭ || আপডেট: ২০১৮-০৪-০৭ ২০:৫১:৪৪

বীর কন্ঠ ডেস্ক  :

 সাতকানিয়া উপজেলার কেরানীহাট, তেমুহানি, কেঁওচিয়া, ছনখোলাসহ বিভিন্ন এলাকায় চলছে পাহাড় ও ফসলি জমি থেকে এস্কেভেটর দিয়ে মাটি কাটার রমরমা ব্যবসা। বিভিন্ন এলাকায় এস্কেভেটর দিয়ে পাহাড় কাটার পাশাপাশি ফসলী জমি থেকে ২০-৩০ ফুট গভীর ভাবে মাটি কেটে ইটভাটায় নিয়ে যাওয়ায় জলাশয়ের মতো রূপ ধারণ করেছে। ফলে এসব জমিতে আর কখনো ফসল ফলানো সম্ভব হবে না, বিনষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য।

এদিকে, মহাসড়কের পাশের ফসলী জমি থেকে ২০-৩০ ফুট গভীর ভাবে মাটি কেটে ইটভাটায় নিয়ে যাওয়ায় রাস্তার পাশে গভীর গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে হুমকির মুখে পড়েছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের কেরানীহাট থেকে মৌলভীর দোকান পর্যন্ত। এতে সড়কটি যেকোনো মুহূর্তে ধসে পড়তে পারে বলে এলাকাবাসী আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

আসন্ন বর্ষা মৌসমে পাহাড়ি ঢলে বড় কোন বন্যা হলে মুহূর্তে ধসে পড়তে পারে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক।

মহাসড়কের পাশের ফসলি জমি থেকে ২০-৩০ ফুট গভীরভাবে মাটি কেটে ইটভাটায় নিয়ে যাওয়ার পক্ষে অবস্থান নিয়ে সাতকানিয়া ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফরিদুল আলম বলেন, সরকারের উন্নয়ন যাত্রা অব্যাহত রাখতে ইটভাটার প্রয়োজন।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, এভাবে মাটি কাটা অব্যাহত থাকলে যেকোনো সময় ঘটতে পারে বড় দুর্ঘটনা। মাটি ব্যবস্থাপনা আইন-২০১০ থাকলেও এটা মানছেন না কেউ।

পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ এর অধীনে ঘোষিত এলাকা, সেতু-কালভার্ট, মহাসড়ক, রেললাইন, নদীবন্দর, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও আবাসিক এলাকার এক কিলোমিটারের মধ্যে যেসব নদীর তীর ভাঙ্গনের শিকার হতে পারে, কোনো গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি, পয়ঃনিষ্কাশন লাইন বা অন্য কোনো গুরুত্বপূর্ণ লাইন বা তৎসংশ্লিষ্ট স্থাপনা, চা-বাগান, পাহাড়-টিলার ক্ষতি হতে পারে, নদীর ভূ-প্রাকৃতিক পরিবেশ, মাছ, জলজপ্রাণী, উদ্ভিদ নষ্ট হতে পারে এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের চি‎হ্নিত সেচ, পানি নিষ্কাশন, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বা নদী ভাঙ্গন রোধকল্পে নির্মিত অবকাঠামো সংলগ্ন এলাকায় বালু ও মাটি উত্তোলন করা যাবে না।হুমকির মুখে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক!

আইনের ৪নং ধারার (খ)-তে বলা হয়েছে- সেতু, কালভার্ট, ড্যাম, ব্যারেজ, বাঁধ, সড়ক, মহাসড়ক, বন, রেললাইন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনা অথবা আবাসিক এলাকার সর্বনিম্ন এক কিলোমিটার দূর থেকে বালু ও মাটি উত্তোলন করা যাবে না।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, গেল কয়েক বছরে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পাশে সাতকানিয়ার বিভিন্ন ফসলীজমিতে গড়ে ওঠেছে বেশ কয়েকটি ইটভাটা। বিশেষ করে উপজেলার কেরানীহাট থেকে মৌলভীর দোকান পর্যন্ত তিন থেকে চার কিলোমিটার এলাকাজুড়ে এসব ইটভাটার অধিকাংশের অবস্থান। এসব ইট-ভাটার অনেকগুলোই স্থাপন করা হয়েছে ডজনখানেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গা-ঘেঁষে। এতে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে জাফর আহমদ চৌধুরী ডিগ্রি কলেজ, রসুলাবাদ সিনিয়র ফাজিল (ডিগ্রী) মাদ্রাসা, সৈয়দ মক্কী রা. কিন্ডারগার্টেন, রসুলাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মরফলা আর এম এন উচ্চ বিদ্যালয়সহ অন্তত ডজনখানেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পাশে কেরানীহাট এলাকা সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ফসলি জমির ওপরের অংশ কেটে কেটে ইটভাটাগুলোর জন্য মাটি সংগ্রহ করা হচ্ছে। এজন্য ব্যবহার করা হচ্ছে বড় বড় এস্কেভেটর। যেসব দিয়ে নিয়মিত মাটি খোঁড়ার ফলে ফসলি জমি বিলীন হয়ে সৃষ্টি হয়েছে ২০-৩০ ফুট গভীর গর্তের। এর ফলে হুমকির মুখে পড়েছে কেরানীহাট থেকে মৌলভীর দোকান পর্যন্ত চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক।

দোহাজারী সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রকৌশলী মোহাম্মদ শফিক বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেয়। খবর নিয়ে দেখছি।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক দেশের হাতেগোনা কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কের একটি। বরং অন্যান্য মহাসড়কের তুলনায় একটু বেশিই গুরুত্বপূর্ণ। বহির্বিশ্বে ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এ মহাসড়ক ব্যাপক অবদান রাখছে। পর্যটন নগরী কক্সবাজার ও নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি বান্দরবানে প্রতিদিন দেশ-বিদেশের হাজারও পর্যটকের যাতায়াত এ মহাসড়ক দিয়েই।

এ অবস্থায় পাশে মাটি না থাকায় যানবাহনের চাপে যেকোনো সময় সড়ক ধসে পড়তে পারে। সড়কটি ধসে গেলে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কের যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। এলাকার মানুষ সড়ক রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়াসহ জনস্বার্থে ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধ করা উচিত বলে মনে করেন।

স্থানীয় কয়েকজন জমির মালিক জানান, মাটি ব্যবসায়ীরা অনেক সময় তাদের না জানিয়ে জমি থেকে মাটি কেটে নিয়ে যায়। জমির মালিক কেওঁচিয়ার নুরুন্নবী, আবদুল হাকিম, লিয়াকত আলী, ঢেমশার মোহাম্মদ ছালাম, কামরুল হাসান, ছদাহার ওসমান গনী, মোহাম্মদ রাশেদ, আবছার, এওঁচিয়ার সোলাইমান বাদশাহ, শামসুল হক, পশ্চিম ঢেমশার নূর আলী, আবদুল মান্নান ও নলুয়া এলাকার দিদারুল আলম, মোহাম্মদ এনাম, মোহাম্মদ খোরশেদসহ আরো অনেকে জানান, তাদের জমির পাশের অনেক জমির মালিক মাটি বিক্রি করে দিয়েছে। মাটি ব্যবসায়ীরা জমি থেকে ১০-১৫ ফুট ও অনেক ক্ষেত্রে ২০-২৫ ফুট পর্যন্ত গভীর করে মাটি কাটার ফলে তাদের জমিতে বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। চাষাবাদও করা যাচ্ছে না।

এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জানান, ফসলি জমি থেকে টপ সয়েল কেটে নেয়ার ফলে আবাদি জমির উর্বরাশক্তি দিন দিন কমে যাচ্ছে। ফসল উৎপাদনের জন্য মাটির যে গুণাগুণ থাকা দরকার তার সবটুকুই থাকে ওপরের অংশে। আর একবার টপ সয়েল কেটে নিলে তা পূরণ হতে সময় লাগে অনেক বছর।

সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোবারক হোসেন বলেন, মহাসড়কের পাশের ফসলি জমি থেকে ২০-৩০ ফুট গভীর ভাবে মাটি কেটে ইটভাটায় নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি আসলেই বিপদজনক। ইটভাটাগুলোর বিরুদ্ধে বড় ধরনের অভিযানের প্রস্তুতি চলছে। শিগগিরই অভিযানে নামব আমরা।- সূত্র – ডেসটিনি অনলাইন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *