চট্টগ্রাম, , বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪

admin

আন্দামানবাসীর ভালবাসা

প্রকাশ: ২০১৮-০৫-০৬ ০০:৩৭:৫৯ || আপডেট: ২০১৮-০৫-০৬ ০০:৪০:১৭

ডাঃ তারেক আহমদ :

আল্লাহর রহমতে ভারতে অনেক জায়গায় অনেকবার ঘুরেছি, কিন্তু কোথায়ও বাংলাদেশী টুরিস্ট হিসেবে একআনা সম্মান পাইনি। কেমন যেন অবহেলা, তাচ্ছিল্য, অসৌজন্যমুলক আচরণ, অবিশ্বাস, প্রফেশনালিজম ফিল করেছি তাদের কাছ থেকে।

কিন্তু এবারই প্রথমবার আন্দামান দীপপুঞ্জ এ গিয়ে মনে হলো আমি নিজের দেশে আসলাম। এখানের প্রতিটি মানুষই বাংলাদেশ ও বাংলাদেশীদের সম্মান করে ভালবাসে। কারণটি পরে জানতে পারলাম তাদের সাথে আলাপ করে।

আন্দামান দীপপুঞ্জ এর প্রায় ৭০-৮০% জনগন বাংলায় কথা বলে। বিশেষ করে Havelock island & Neil island এর ৯৫% জনগনই বাংলা ভাষী।  ইতিহাসের বিভিন্ন ঘটনাচক্রে তাদের দাদা-দাদী মানে পূর্ব পূরুষরা বাংলাদেশ ছেড়ে এই আন্দামান দ্বীপে চলে এসেছিল। এখনকার প্রজন্মরা বাংলাদেশ দেখেনি কিন্তু তারা তাদের ঠাকুর মা-বাবা থেকে বাংলাদেশের গল্প শুনেছিল। তাই তাদের পূর্বপুরুষদের জন্মভূমিরর জন্য তাদের এত টান।

কাকতালীয় কিনা যানি না, আমি হেবলক আইল্যান্ডে যতজনের সাথে কথা বলেছি বা তাদেরকে নিজেদের সাথে কথা বলতে দেখেছি, তাদের সবারই ভাষা বৃহত্তর বরিশাল এর, জিগাস করে এর সত্যতাও পেলাম, তাদের সবারই পূর্বপুরুষ বরিশালের। তাই আমিও মজা করে তাদের বলতাম Havelock Borishal district…

 

ছবিতে দেখতে পারছেন প্রথমজন, তিনি এলিফেন্ট বিচে ট্র্যাকিং করে যাওয়ার মুখে পানি, বিস্কুট, চিপস বিক্রি করে, বয়স ৪৭ বছর। আমাকে পেয়ে তার কি যে আনন্দ, আমাকে সে তার ঠাকুর মা কে দেখাতে নিয়ে যেতে চাইছিল, কারণ তার ঠাকুরমা বাংলাদেশী, এখনও বেচে আছে, বয়স ১১০ বছর বলল মনে হয়। কিন্তু তার বাড়ী দূরে আর আমারও সময় নাই তাই যাওয়া হলো না। সে বাংলা টাকা দেখতে চাইল, একটা গিফট দিতে বলল ঠাকুরমা কে দেখাবে। কিন্তু আমার মানিব্যাগে একটি ১০ টাকার নোট ছিল শুধু। তাই দিলাম, বলল নাম লিখে দিতে, দিলাম। সেও আমাকে একটা দশরুপির নোটে তার নাম বাংলায় লিখে দিল। তার দেখা দেখি আরো ৪-৫ জন দোকানদার, গাইড আসল, তারাও ১০০ রুপির পরিবর্তে ১০০ টাকার নোট চাইল। কিন্তু কাউকে দিতে পারলাম না। থাকলে কিছু টাকা লাভ হতো।

ছবির আরেকজন হলো ঝালমুড়ি বিক্রেতা, তার স্থান রাধানগর বিচে। বাংলাদেশী শুনে অনেক গল্প করল এবং ঝালমুড়ি ভাল করে বানিয়ে দিল, কিন্তু দামটা অনেক বেশী ৫০/- রুপী। সে নিজেই সাফাই দিল, বলল আপনারা দেশে এই ঝালমুড়ি ১০টাকা দিয়ে খান, কিন্তু হেবলকে মুড়ির কেজি ২২০/- রুপী। তাই এত দামে বিক্রি করতে হয়। তবে সে ফ্রী পানি খাওয়াইছে।

 

ছবির আরেকজন হলো এলিফেন্ড বিচের ওয়াটার স্পোর্ট এর একজন স্টাফ। সে আমাকে ২ কিলোমিটার ট্রেকিং করে বিচে নিয়ে গিয়েছিল গাইট দিয়ে, নাহয় আমি হারায় যেতাম ফরেস্টে, কারণ আমি সকাল ৭ টায় ওখানে চলে গিয়েছিলাম। তখনও কেউ আসেনি বিচের দোকানীরা ছাড়া। সেও বরিশাল ডিস্ট্রিক, দেশী হিসেবে স্নোকেলিং এ ৩০০ রুপি কম নিছে। ৭০০ রুপি দিয়ে করেছিলাম, নরমাল রেট ১০০০-১৫০০/- রুপি। ছবি ভিডিও সব ইনক্লুডেট এই খরচের ভিতরে।

 

ছবির শেষজন ছিলেন নীল দ্বীপের অধিবাসী, বরিশাল ডিস্ট্রিক, একটি পুজা উৎসবে বিরিয়ানি বিক্রি করছিল। খুবই বেশী পরিমানে আমাকে একটা প্যাকেট বানিয়ে দিয়েছিল দেশী মানুষ বলে, হোটেলে গিয়ে পুরা খেতেই পারিনি এত পরিমান বেশী ছিল।

 

হেবলকে আমি যেই হোটেলে ছিলাম তার বাড়ি খুলনায় ছিল। আমি কোন হোটেল পাচ্ছিলাম না হেবলকে, কারন সব সস্তা হোটেল গুলোতে ফরেনার রাখার পারমিশন নাই। যেগুলোতে পারমিশন আছে তা সবই ২৫০০ রুপির বেশী। তখনই জেটিতে এক দালালের দেখা হলো, যথাযত সেও বাংগালি, সে তার বাইকে করে এই হোটেলটিতে নিয়ে আসল, এবং ১২০০/- রুপিতে ম্যানেজ করে দিল একটি রুম। হোটেলটি খুলনার ঔলোক নতুন করেছেন, পরিচিত হয়নি, হোটেলএর মান হিসেবে ভাড়া ৩-৪ হাজার রুপি মালিক বলল। পরিচিতির জন্য আমাকে ছেড়ে দিল কমদামে।

আমি ফেরার শীপের টিকেট পাচ্ছিলাম না সরকারী বা প্রাইভেট কিছুতেই। টিকেট না পেলে আমার দুইটা ফ্লাইট মিস হবে, একটা কলকাতার, আরেকটা চট্টগ্রাম এর। অনেক টাকা লস। তখনই আবির্ভাব হলো আরেক বরিশালের। সে ২৫০/- রুপি বেশী নিয়ে সরকারী শীপে আমার টিকেট ম্যানেজ করে দিল। মাঝে মাঝে দালাল ধরলে যে লস হয় না তা বুঝতে পারলাম।

 

যাই হোক খুবই আনন্দঘন ও সম্মানজনক একটা টুর দিয়ে আসলাম। ভারতের মেইন বডিতে আমরা সম্মানিত না হলেও এই দীপপুঞ্জে আপনি অবশ্যই সম্মানিত হবেন এই আশা রাখি।

 

#ধন্যবাদ

#Happy_Travelling,

(((ডাঃ তারেক আহমদ, লোহাগাড়া, চট্টগ্রাম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *