চট্টগ্রাম, , বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪

Faruque Khan Executive Editor

শরণার্থী দিবস: অভিশপ্ত রিফিউজি জীবনে রোহিঙ্গাদের ৪০ বছর

প্রকাশ: ২০১৮-০৬-২০ ১০:৩১:৩২ || আপডেট: ২০১৮-০৬-২০ ১০:৩২:৩৯

ফারুক খান তুহিন :

আজ ২০ জুন বিশ্ব শরণার্থী দিবস । বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা শরণার্থীদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করে দিনটি পালন করছে উঁচু তলার বিশ্ব কর্তারা । শরণার্থীদের সংকট নিরসন, অধিকার, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, খাদ্য, স্বাস্থ্য, শিক্ষা প্রভৃতি নিয়ে বাক্যের খই ফুটছে আলোচনা মঞ্চে । কিন্তু প্রকৃতপক্ষে শরণার্থীদের স্বাধীকার ফিরিয়ে দিতে বিশ্বমহলের প্রচেষ্টা নামমাত্র ।

জাতিসংঘের মতে, বিশ্বের সবচেয়ে নীপিড়িত জাতিগোষ্ঠীর নাম রোহিঙ্গা । মিয়ানমারের আদি বাসিন্দা রোহিঙ্গা মুসলমানরা সময়ের বিবর্তনে দেশটির সরকারের রাজনৈতিক ও ধর্মীয় বৈষম্যের শিকার । মিয়ানমারের সংখ্যালঘু এ জাতিগোষ্ঠীর শিকড় বিনাশের লক্ষ্যে চরমপন্থী সরকার বিশেষ বিশেষ দুই ডজনের বেশি অপারেশনের মাধ্যমে জাতিগত নিধন চালিয়েছে । নাগরিকত্ব হরণ, মৌলিক অধিকার হরণ, হত্যা, ধর্ষণ, লুন্ঠন, অগ্নিসংযোগ ও উচ্ছেদের মাধ্যমে দেশ ত্যাগে বাধ্য করেছে লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে ।

মিয়ানমারের সামরিকদের চালানো নির্যাতনের ষ্ট্রিম রোলারে পিষ্ঠ হয়ে ১৯৭৮ থেকে ধারাবাহিকভাবে দেশান্তর হওয়া রোহিঙ্গাদের রিফিউজি জীবনের ৪০ বছর পার হলেও, সংকট উত্তোরণের বীজই বুনেনি এখনো । সৌদি আরব, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, অষ্ট্রলিয়া, আমেরিকা, কানাডা প্রভৃতি দেশে দেশান্তরিত রোহিঙ্গাদের একটি অংশ অভিবাসিত হলেও বাংলাদেশে এগারো লক্ষাধিক রোহিঙ্গা যাপন করছে শরণার্থীর অভিশপ্ত জীবন । খোদ নিজেদের দেশ বার্মার আইডিপি ক্যাম্পেও রোহিঙ্গাদের থাকতে হচ্ছে রিফিউজি হয়ে ।

গত বছরের আগস্টে মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে পূর্বপরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ হামলা করে দেশটির সেনাবাহিনী । এতে হত্যা ও ধর্ষণের শিকার রোহিঙ্গার সংখ্যা অগণিত। ৯ মাসে  নতুন করে শরণার্থী জীবনে নিজেকে জড়াতে হয়েছে ৭ লক্ষাধিক রোহিঙ্গাকে । ফলে কক্সবাজারে এখন বিশ্বের সর্ববৃহৎ শরণার্থী শিবির। এ হত্যাকান্ডকে জাতিসংঘ বলেছে, গণহত্যার পাঠ্যপুস্তকীয় উদাহরণ ।

আন্তর্জাতিক শরণার্থী বিষয়ক সংখ্যা ইউএনএইচসিআরসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জৈবিক চাহিদা পূরণের চেষ্টা করছে ঠিকই, কিন্তু মানসিক চাহিদা পূরণ করতে পিছুটান দেখিয়েছে । নাগরিকতার শর্তে স্বদেশে প্রত্যাবসানই রোহিঙ্গাদের মানসিক চাহিদা । কিন্তু এ চাহিদা পূরণ হলেই মাত্র শরণার্থী জীবনের অভিশাপ মোচন হবে ।

এদিকে কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশের মানুষ  সংকটাপন্ন রোহিঙ্গাদের প্রতি অসামান্য সংহতি প্রদর্শন করেছে। নিজেদের অসচ্ছলতা এবং জনসংখ্যা সমস্যা সত্ত্বেও রোহিঙ্গাদের ঠাঁই দেওয়ার এই নিদর্শন উদারতার দৃষ্টান্ত। শরণার্থী অধিকার সুরক্ষার পাশাপাশি শরণার্থী-অধ্যুষিত এলাকায় বসবাসরত বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের মানুষের প্রয়োজনগুলো চিহ্নিতকরণ এবং উন্নয়ন ঘটানোও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। যা পারবে বাংলাদেশ সরকার ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় । অন্যদিকে বার্মা সরকারের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিই পারে নিজের দেশের মানুষগুলোকে গ্রহণ করে অধিকার ফিরিয়ে দিতে । সূচী সরকারের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে পাশে দাড়াতে হবে ।

অন্যদিকে সহনশীল বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গা সংকট উত্তোরণে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক রক্ষার পাশাপাশি বিষয়টিকে আন্তর্জাতিকীকরণ করার চেষ্টা করে চলছে । সম্প্রতি ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইম কোর্ট (আইসিসি)র চাহিদা পূরণে মতামত সম্বলিত পত্র পাঠিয়েছে বাংলাদেশ । এতে করে নড়েচড়ে বসেছে মিয়ানমার। কিছুটা ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে জাতিসংঘের দু’টি সংস্থার সাথে প্রত্যাবাসন চুক্তি স্বাক্ষর করেছে নেপিদো সরকার।

জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থার প্রধান জায়েদ রাদ আল হোসাইন সর্বশেষ গত  সোমবার (১৮ জুন) বলেছেন, রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফেরত যাওয়ার পরিবেশ এখনো রাখাইনে সৃষ্টি হয়নি । সেখানে মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতি করতে হবে ।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সুষ্ঠূ, নিরাপদ ও টেকসই হলেই মাত্র বাংলাদেশের কাঁধের বোঝা নেমে যাবে । তাই রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠির প্রত্যাশামত তাদের  নাগরিক অধিকার বিষয়টি খাতা কলমে হওয়া জরুরী । নয়তো অতীত তিক্ত অভিজ্ঞতার মতো বিশাল শরণার্থীর বোঝা কাঁধে নিয়ে বয়ে বেড়াতে হবে বাংলাদেশকে ।

লেখক: সাংবাদিক, কলামিষ্ট ও আইটি বিশেষজ্ঞ

ই-মেইল : faruque.bandarban@gamil.com

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *