চট্টগ্রাম, , শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

admin

আঞ্চলিক সংগঠনের আদিপত্য বিস্তারে আবারো রক্তাক্ত পাহাড়:প্রতিপক্ষের গুলিতে খাগড়াছড়িতে নিহত ৬ 

প্রকাশ: ২০১৮-০৮-১৮ ১৭:৩৯:১৫ || আপডেট: ২০১৮-০৮-১৮ ১৭:৩৯:৩৭

শংকর চৌধুরী,খাগড়াছড়ি:

পার্বত্যঞ্চলে আঞ্চলিক সংগঠন গুলোর আদিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আবারো রক্তাক্ত হয়ে উঠেছে পাহাড়। খাগড়াছড়িতে ইউপিডিএফ (প্রসীত খীসা) মুল দলের ৩ নেতাকর্মীসহ ৬জন নিহত হয়েছে। শনিবার (১৮ আগস্ট) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে জেলা শহরের স্বনির্ভর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন, ইউপিডিএফ সমর্থীত পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সভাপতি তপন চাকমা,সহ-সভাপতি এলটন চাকমা,গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় নেতা পলাশ চামকা,মহালছড়ি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য সহকারী ও উত্তর খবং পুড়িয়া এলাকার বাসিন্দা জীতায়ন চাকমা, একই গ্রামের কান্দারা চাকমার ছেলে রুপম চাকমা ও স্বনির্ভর বাজারের চা দোকানদার বিধান চাকমা।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়সূত্রে জানা যায়,‘সকাল সাড়ে ৮টায়  জেলা সদরের স্বনির্ভর বাজার এলাকায় একদল অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা অর্তকিত হামলা চালায়। এসময় হামলাকারীরা বাজারের প্রবেশমুখে প্রথমে গুলি চালায়। পরে বাজারের ভিতর ইউপিডিএফ কার্যালয়ের দিকে দিয়ে ইউপিডিএফ কার্যালয়ের সামনেই পিসিপি সভাপতি তপন,এলটন ও পলাশ চাকমাকে গুলি করে হত্যা করে।

জানা যায়, খাগড়াছড়ির শিববাড়ি এলাকায় চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে গ্রামবাসীর পূর্বনির্ধারিত সমাবেশ ছিল। পিসিপি’র সভাপতি তপনসহ অন্যান্য নেতাকর্র্মীরা সমাবেশ যোগ দিতেই  স্বনির্ভর বাজারের ইউপিডিএফ কার্যালয়ের সামনে একত্রিত হয়। হত্যাকান্ড নিশ্চিত করে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যাওয়ার সময় বেশ কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে। এ ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তারা জীবন বাঁচাতে এদিক-সেদিক ছুটতে থাকে। এ ঘটনার পরপরই স্বনির্ভর বাজারের সব দোকান-পাট বন্ধ হয়ে যায়। 

নিহত স্বাস্থ্য সহকারী জীতায়ন চাকমার স্ত্রী প্রভাতি চাকমা জানান,‘শনিবার  অফিস বন্ধ থাকায় বাজারে নাস্তা করতে এসেছে। এসময় সন্ত্রাসীদের এলোফাতাড়ি গুলিতে ঘটনাস্থলে তিনি মারা যায়। তিনি অভিযোগ করেন,‘ স্বনির্ভর বাজার এলাকায় এত নিরাপত্তা থাকার পরও প্রকাশ্যে বাজারে কীভাবে একজনকে খুন করে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়? ”

 

এই ঘটনায় আরেক গুলিবিদ্ধ  পথচারী সমর বিকাশ চাকমার স্ত্রী জানান,‘ সকালে বাজার করতে যায়। এসময় সন্ত্রাসীদের ছোড়া গুলি ডান পায়ে লাগে। ’ এছাড়া সন্ত্রাসীদের ব্রাশ ফায়ারে আহত হয়েছেন পিসিপি খাগড়াছড়ি সদর থানা শাখার সভাপতি সোহেল চাকমা, খাগড়াছড়ি সরকারী কলেজের ছাত্র দ্বিতন চাকমা, বেলতলি পাড়ার বাসিন্দা ফরেস্টার ত্রিপুরা (৩৫), খাগড়াছড়ি সদরের পশ্চিম নারাঙহিয়ে গ্রামের বাসিন্দা ও পদ্ম চাকমার ছেলে চিজি মনি চাকমা(২৫)।

 

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সোহেল চাকমা, সমর বিকাশ চাকমা ও শখিধন চাকমার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়ে সদর হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক (আরএমও) ডাক্তার নয়নময় ত্রিপুরা বলেন, আহতদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুলির চিহ্ন রয়েছে। তাদেরকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।

 

এই ঘটনার জন্য প্রতিপক্ষ জেএসএস (এমএন লারমা) ও ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) কে দায়ী করেছে প্রসীত খীসার নেতৃত্বাধীন মুল ইউপিডিএফ। ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট ‘ইউপিডিএফ’ (প্রসীত খীসা) খাগড়াছড়ি জেলা ইউনিটের ভারপ্রাপ্ত প্রধান সংগঠক উজ্জ্বল স্মৃতি চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সভাপতি অংগ্য মারমা, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) এর সভাপতি বিনয়ন চাকমা ও শ্রমজীবী ফ্রন্ট (ওয়ার্কার্স ফ্রন্ট) এর সভাপতি সচিব চাকমা সংবাদ মাধ্যমে প্রদত্ত এক যুক্ত বিবৃতিতে ‘সংস্কারবাদী জেএসএস (এমএন লারমা)  ও নব্য মুখোশ বাহিনী  (ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক) সন্ত্রাসী কর্তৃক সশস্ত্র হামলা চালিয়ে পিসিপি-যুব ফোরামের নেতাসহ ৬ জনকে হত্যার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। বিবৃতিতে তারা অবিলম্বে হামলাকারী সংস্কার-নব্য মুখোশ বাহিনীর সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

এই ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ জানিয়ে ইউপিডিএফ  এর কেন্দ্রীয় সংগঠক মাইকেল চাকমা মুঠোফোনে জানান,‘স্বর্নিভরের মত একটি বাজার এলাকায় প্রকাশ্যে দিবালোকে হামলা করে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে গেছে। জেএসএস (এমএন লারমা ) ও ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) এই ঘটনা ঘটিয়েছে। মিঠুন চাকমাকে যেভাবে হত্যা করা হয়েছে ঠিক একই কায়দায় সন্ত্রাসীরা আজকের এই হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে।

তবে এই ঘটনায় নিজেদের কোন সংশ্লিস্টতা নেই অস্বাকীর করে জেএসএস (এমএন লারমা) এর কেন্দ্রীয় সহ-তথ্য ও প্রচার সম্পাদক প্রশান্ত চাকমা জানান, এ হামলার ঘটনার সাথে আমরা জেএসএস (এমএন লারমা)  কোনভাবেই জড়িত নই। এরা অহেতুক আমাদের দোষারোপ করছে।

ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে খাগড়াছড়ি  সদর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাহাদাত হোসেন টিটো জানান, সকাল সাড়ে ৮টার দিকে এই ঘটনা ঘটে। এটি আঞ্চলিক সংগঠনের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এই হামলার ঘটনা হতে পারে। এসময় ঘটনাস্থল  থেকে বেশ কয়েক রাউন্ড গুলির খোসা উদ্ধার করা হয়। ঘটনার পর পর স্বনির্ভর  এলাকায়  অতিরিক্ত আইন শৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়ন করা হয়েছে  বলেও তিনি জানান।

প্রসঙ্গত, এ নিয়ে চলতি বছরে প্রতিপক্ষের হাতে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি বিরোধী ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট-ইউপিডিএফ সমর্থিত ১২ নেতাকর্মীসহ ৩৩জন নিহত হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *