চট্টগ্রাম, , রোববার, ১৪ এপ্রিল ২০২৪

admin

নির্যাতিত হচ্ছেন দেশে ফিরে যাওয়া রোহিঙ্গারা: এইচআরডব্লিউ

প্রকাশ: ২০১৮-০৮-২৩ ২২:২৩:১৩ || আপডেট: ২০১৮-০৮-২৩ ২২:২৩:১৩

 

বীর কন্ঠ ডেস্ক :

মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নের মুখে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা নাগরিকদের অনেকেই দেশে ফেরার পর ফের নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন বলে জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)।

মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হত্যাযজ্ঞের মুখে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্য থেকে অনেকেই দেশে ফেরার পর আবারো নির্যাতিত হচ্ছেন বলে মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক এই মানবাধিকার সংস্থাটি জানায়।

এইচআরডব্লিউ’র এশিয়া অঞ্চলের ডেপুটি ডিরেক্টর ফিল রবার্টসন এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘দেশে ফেরা শরণার্থীদের নিরাপত্তা এবং সুরক্ষা দেয়ার যে প্রতিশ্রুতি মিয়ানমার সরকার দিয়েছিল, প্রত্যাবাসিত রোহিঙ্গাদের নির্যাতন সেই প্রতিশ্রুতিকে মিথ্যায় পর্যবসিত করেছে।’

এজন্য রবার্টসন রোহিঙ্গাদের দেশে ফেরত পাঠানোর আগে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিকমহলকে তাদের সুরক্ষা বাড়ানোর দিকে নজর দেয়ার তাগিদ দিয়েছেন।

রোহিঙ্গাদের দেশে ফেরা নিরাপদ এবং সম্মানজনক হবে বলে মিয়ানমার সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিশ্রুতি দিলেও, ফিরে যাওয়া নাগরিকরা এখনো হয়রানি এবং নির্যাতনের শিকার হচ্ছে বলে জানান রবার্টসন।তিনি বলেন, ‘মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ নিরাপদ প্রত্যাবাসনে প্রস্তুত বলে যারা বিশ্বাস করেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সঙ্গে এই আচরণ তাদের জন্য একটি সতর্কবার্তা হতে পারে।’

‘স্বেচ্ছায়, নিরাপদ এবং সম্মানজনক প্রত্যাবর্তনের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে প্রতিষ্ঠিত করতে মিয়ানমারকে আরও বহুদূর পথ পাড়ি দিতে হবে’ মন্তব্য করেন এইচআরডব্লিউ’র এই কর্মকর্তা।

এইচআরডব্লিউ বলছে, ২০১৭ সালে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ‘জাতিগত নিধনের’ মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে যাওয়া ছয়জন রোহিঙ্গা সম্প্রতি রাখাইনে ফেরার পর কয়েকবার দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) তাদের আটক করে। এসব রোহিঙ্গার উদ্দেশ্য ছিল কিছু অর্থ জোগাড়ের পর আবার বাংলাদেশে ফিরবে তারা।

নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে ধরা পড়ার পর তাদেরকে নির্যাতন করা হয় এবং অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রমের অপরাধে প্রত্যেককে চার বছর করে কারাদণ্ড দেয়া হয়।

এক মাস কারাভোগের পর ওই ছয়জনসহ কয়েক ডজন রোহিঙ্গাকে ক্ষমা করে দেয় মিয়ানমার সরকার। রোহিঙ্গাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করা হচ্ছে এবং তাদের প্রত্যাবাসন নিরাপদ- এটা প্রমাণ করতে জন্য মুক্তি পাওয়া এসব নাগরিকদের মিয়ানমার সফররত সাংবাদিকদের সামনে হাজির করা হয়। ওই ঘটনার পর ছয় জন রোহিঙ্গা ফের বাংলাদেশে চলে আসেন।

মিয়ানমারে ফিরে নির্যাতনের শিকার ওই ছয় রোহিঙ্গা পুরুষ এবং কিশোর এইচআরডব্লিউকে জানায়, বিজিপির কর্মকর্তারা বারবার বন্দুকের মুখে জঙ্গিগোষ্ঠি আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি বা আরসা’র বিষয়ে জানতে চেয়েছে। তাদেরকে বিভিন্ন সময়ে মংডুর বিভিন্ন কাস্টডিতে নিয়ে যাওয়া হয় বলেও জানান তারা।

নির্যাতিত রোহিঙ্গারা বলেন, আরসার সঙ্গে সম্পৃক্ততার বিষয়ে স্বীকারোক্তি আদায় করতে বিজিপি কর্মকর্তারা তাদেরকে কিলঘুষি মারে এবং লাঠি ও রড দিয়ে পেটায়। কয়েকবার আগুন দিয়ে ঝলসে দেয়া বা বৈদ্যুতিক শক দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

বিজিপির নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে ১৭ বছর বয়সী কিশোর রহমত (ছদ্মনাম) বলেন, ‘ওরা প্লাস্টিকের ব্যাগ আগুনে গলিয়ে সেই তরল ফোটা ফোটা করে আমার শরীরে ফেলেছে। লোহার রড গরম করে দুই পায়ে ছ্যাঁকাও দিয়েছে। কখনো কখনো জলন্ত সিগারেট শরীরে চেপে ধরেছে, জ্বলন্ত মোম শরীরে ঢেলেছে, ব্লেড দিয়ে শরীরে আঁচড় কেটেছে, লাঠি আর রড দিয়ে পিটিয়েছে।’

রহমতের সমবয়সী আরেকজন আহমেদ (ছদ্মনাম) জানান, তাকে উল্টো করে ঝুলিয়ে পোটানো হত। তিনি আরসার সদস্য- এই স্বীকারোক্তি বিজিপি কর্মকর্তারা তার মুখ থেকে বের করতে চেয়েছিল বলে জানান আহমেদ।

নির্যাতিত ২৪ বছরের আরেক যুবক লোকমান এইচআরডব্লিউর কাছে বিজিপির নির্মমতার বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমি আরসার সদস্য- এই স্বীকারোক্তি আদায় করতে প্রথমেই তারা আমার বুকে এবং ‍উরুতে লাথি মারে। পরে বৈদ্যুতিক শক দেয়। কিন্তু তারা আমার কাছ মিথ্যা স্বীকারোক্তি আদায় করতে পারেনি।’

সাক্ষাৎকারের সময় তাদের শরীরে নির্যাতন এবং পোড়াক্ষত দেখা গেছে বলে জানিয়েছে এইচআরডব্লিউ।

গত বছরের আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত রাখাইনে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নের মুখে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছে। আগের মতো ব্যাপক হারে পালিয়ে না এলেও এখনো রোহিঙ্গাদের আসা বন্ধ হয়নি।

সংখ্যালঘু মুসলিম রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের বাহিনীর ওই অভিযানকে ‘জাতিনিধন অভিযান’ হিসেবে বর্ণনা করে আসছে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *