চট্টগ্রাম, , বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪

শাষকের আবেগ শোষকের বিবেগ

প্রকাশ: ২০১৮-১২-০৫ ২২:১৯:২২ || আপডেট: ২০১৮-১২-০৫ ২২:১৯:২২

এইচ. এম. সাইফুল ইসলাম : বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস বা বিসিএসে মোট ২৮ ক্যাটাগরীতে নিয়োগ দেয়া হয় । আমাদের দেশে এই ক্যাটাগরীর লোকদের প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা হিসেবে গণ্য করা হয় । ভাল । অনেক সম্মান তাদের প্রতি । কিন্ত, এই মূল্যবান লোকদের মূল্যায়ন করার সময় মূল্যহীন বিষয় দিয়ে তাদের ঘায়েল করার চেষ্টা করা হয় । যেমন: মধ্যপ্রাচ্যে কখন প্রথম তেলঅস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছিল (২৫তম বিসিএস), বসনিয়ায় যুদ্ধবিরতি সাক্ষরের মধ্যস্থকারী কে ( ২৮তম বিসিএস) ।

শিক্ষার্থীরা তখনই কষ্টের দীর্ঘশ্বাস ফেলে, যখন অনার্স শেষ করে বেকারত্বর বোঝা মাথায় নিয়ে ৭০০+ খরচ করে বিসিএস পরিক্ষায় অংশগ্রহনের লাইসেন্স নিতে হয় । এরকম আবেদনকারীর সংখ্যা যদি কোন দেশের মোট জনসংখ্যাকে ছাড়িয়ে যায়, সে দেশের শিক্ষিত বেকারের সংখ্যাও সহজে অনুমান করা যায় । রাষ্ট্রসম এই জনসংখ্যাকে যদি জনসম্পদে রুপান্তর করা যায় সে দেশের চেহারা পাল্টে দিতে তারাই হয়ত অগ্রনী ভুমিকা রাখতে সক্ষম হবে ।

সরকারী অনেক পদ আছে যেখানে একই পদে এইচএসসি ও মাষ্টার্সের শিক্ষার্থীরা আবেদনের সমান সুযোগ পায় । ফলে, উক্তপদের জন্য আবেদনকারীর সাথে সাথে কোষাগারেও জমা হয় পাহাড়সম অর্থ । এইচএসসি আর মাষ্টার্ষকে যদি একই চেয়ারের জন্য যৌগ্য মনে করা হয়, তাহলে এইচএসসি পরবর্তী ৬/৭ বছরের কোর্স কেন, কেন এই শিক্ষাব্যবস্থা?

আর, মাষ্টার্সকে যদি ঐ পদের জন্য যৌগ্য মনে করা হয় তাহলে এইচএসসি পাশ করা শিক্ষার্থীকে কেন হয়রানির মুখোমুখী করা হয় ।

বেকারত্ব কাটিয়ে পরিবারের দায়িত্ব নিতে সরকারী আবেদনের সময় ব্যাংক ড্রাফট বা পে-অর্ডারের অযৌক্তিক খরচ বহন করা কতটুকু যৌক্তিক তা অস্পষ্ট । এই অস্পষ্টতা থেকে ধ্রুত মুক্তি না মিল্লেও জরুরী পদক্ষেপ নেয়া জরুরী ।

আবার, নিয়োগ বানিজ্য বা প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়টিও নতুন নয় । উর্ধ্বতন দায়িত্বপ্রাপ্তরা টাকার বিনিময়ে নিয়োগদানে পটু । যার মাশুল গুনতে হয় গরীব মেধাবীদের । প্রশ্নফাঁসের অপরাধে চলতি শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের “ঘ-ইউনিটের” ভর্তি পরিক্ষা দু’বার নিতে বাধ্য হন কতৃপক্ষ । একই পরিক্ষা একাধিকবার আয়োজন করা কত ব্যয়বহুল বা কষ্টসাধ্য সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ বা শিক্ষার্থীরা এর ভাল জবাব দিতে পারবে ।

কেন এই প্রশ্ন ফাঁস, কেন এই শিক্ষাবানিজ্য, কেন এই হয়রানি, কেন শিক্ষার মেরুদন্ডকে ভেঙ্গে দেয়ার ব্যর্থ প্রচেষ্টা, কারা-ই বা এর সাথে জড়িত । কে বা কারা প্রশ্নবিদ্ধ করছে প্রযুক্তির এই যৌক্তিকতাকে ।

একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের স্বপ্ন । সন্তান সরকারী চাকরী করবে । সংশ্লিষ্ট বই’র প্রতিটি পাতা গিলে খাচ্ছে যথারীতি । “……অধীদপ্তরের” লিখিত পরিক্ষায় উত্তীর্ণও হল । ভাইবা কল পেল । তাতেও সন্তুষ্ট । যোগদানের অপেক্ষা আর অপেক্ষা । শেষ হচেছনা অপেক্ষার । অবশেষে সবুজ সংকেত পেল । খুশিতে আটখানা পুরো পরিবার । নিয়োগ হবে কবে । ভেসে আসল ৭/৮ লক্ষ টাকা না দিলে নিয়োগ বিয়োগ হয়ে যাবে । যেন আকাশ ভেঙ্গে মাথার উপর । কার পকেটে যাবে এই অর্থ, সংশ্লিষ্টরা কি আসলেই আড়ালে থেকে যায়, নাকি চোরে চোরে মাসতুত ভাই ? এই স্বপ্ন’র শেষ কোথায় জানেনা সে পরিবার । জানেনা শিক্ষিত মেধাবী অসচ্ছল পরিবারগুলো ।

পরিবারের দরিদ্রতা গুছাতে অনেকে প্রাইভেট জবের দিকে ছুটে যায় । প্রতিষ্ঠানগুলো আবেদনকারীর কাছ থেকে ৫০০/১০০০ টাকা করে বিকাশ বা ব্যাংক ড্রাফটে আদায় করে । ১ লক্ষ আবেদনকারীর কাছ থেকে ১০ কোটি টাকা ( আনুমানিক) আদায় করে । নিয়োগও দেয় । কয়েকমাসের বেতন এবং আনুসাঙ্গিক মিলিয়ে ২/৪ কোটি টাকা খরচ করেই লাপাত্তা বা নানা অযুহাতে চাকরীচ্যুত করে কর্মীদের । বেকারেরা আবারও বেকারতে¦ ফিরে যায় ।

অনেক প্রতিষ্ঠান আছে, যারা ডাক-ঢোল পিটিয়ে বাজারে আসে । তৎসময়ের এমপি/মন্ত্রী মহোদয়গণ উদ্ভোদন করে উৎসাহিত করে অনুৎসাহীদের । কিছুসময় পর তারাই আবার বলে উঠেন অমুক প্রতিষ্ঠানটি ধোঁকাবাজ, আমাদের আরো সচেতন হওয়া উচিৎ । তাহলে, পর্যবেক্ষণ না করে উদ্ভোদন করলেন কিসের বিনিময়ে । গরীবের শেষ সম্বল দিয়ে কিনা মোটর রিক্সাটি বন্ধ করার আগে প্রবেশের সময় কেন যাচাই করা হলনা, এই যানবাহনটি দেশের জন্য ক্ষতিকর বা দেশের বিদ্যুৎ অপচয় হবে ।

জনসচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি শাষক সমাজের আবেগকে আশ্রয় না দিয়ে শোষক সমাজের বিবেগকে জাগ্রত করা এখন সময়ের দাবী ।

লিখক: এইচ. এম. সাইফুল ইসলাম ।

বিবিএ (অনার্স), এমবিএ (ব্যবস্থাপনা), সরকারী কমার্স কলেজ, চট্টগ্রাম ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *