চট্টগ্রাম, , বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪

আবদুল হাকিম রানা পটিয়া প্রতিনিধি

পটিয়ায় আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস পালিত

প্রকাশ: ২০১৮-১২-০৯ ২১:৪০:২৪ || আপডেট: ২০১৮-১২-০৯ ২১:৪০:২৪

আবদুল হাকিম রানা, বীর কন্ঠ :

পটিয়ার কয়েক’শ ছাত্র-ছাত্রী ও সাধারণ জনতা আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবসে দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য আসন্ন নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলো কর্তৃক তাদের ইশতেহারে দুর্নীতি দমনের অঙ্গীকার করার দাবী জানিয়েছে। ৯ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস উপলক্ষে দুর্নীতিবিরোধী সংগঠন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ(টিআইবি)’র  সহায়তায় পটিয়া উপজেলা প্রশাসন, সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) ও উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি (দুপ্রক) যৌথভাবে বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করে। ‘টেকসই উন্নয়ন, গণতন্ত্র, শান্তি ও সুশাসন: দুর্নীতির বিরুদ্ধে একসাথে’ এই প্রতিপাদ্য বিষয়কে ধারণ করে সকাল দশটায় ভূমি অফিসের সামনে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে অনুষ্ঠিত হয় বিশাল মানববন্ধন। মাববন্ধন উদ্বোধন করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার হাবিবুল হাসান। এসময় উপস্থিত ছিলেন সহকারি কমিশনার (ভূমি) মো: সাব্বির রহমান সানি, সনাক পটিয়ার সভাপতি অধ্যক্ষ মু. আবু তৈয়ব, সহ-সভাপতি নিত্যময় চৌধুরী ও শিলা দাশ, সদস্য অধ্যাপক অজিত কুমার মিত্র, দুপ্রকের সাধারণ সম্পাদক ড. সংঘপ্রিয় মহাথেরো প্রমুখ। মানববন্ধনে সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও শিক্ষার্থী ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার কয়েক’শ মানুষ অংশগ্রহণ করেন। মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা দুর্নীতি থামান এখনই, দুর্নীতি ভাই আর কত, বিবেক কর জাগ্রত, দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন প্রতিষ্ঠা করুন, দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গড়ুন, তারুণ্যের জোয়ারে ভেসে যাক দুর্নীতির কলঙ্ক, ঘুষখোর পিতার সন্তানের পরিচয়ে বাঁচতে চাইনা, গর্ব করে বলতে চাই- “আমার বাবা ঘুষখোর নয়”,  জাগ্রত বিবেক, দুর্জয় তারুণ্য, দুর্নীতি রুখবেই ইত্যাদি স্লোগান সম্বলিত ফেস্টুন ও প্লে-কার্ড বহন করে। মানববন্ধন শেষে সকাল সাড়ে দশটায় শুরু হয় বর্ণাঢ্য র‌্যালী। র‌্যালী ভূমি অফিস থেকে শুরু হয়ে উপজেলা পরিষদ চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। র‌্যালী শেষে উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় শিক্ষার্থী সমাবেশ ও আলোচনা সভা।  উপজেলা নির্বাহী অফিসার হাবিবুল হাসান এর সভাপতিত্বে ও টিআইবি’র এরিয়া ম্যানেজার মো: জসিম উদ্দিন এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সহকারি কমিশনার (ভূমি) মো: সাব্বির রহমান সানি, উপজেলা তথ্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামরুজ্জামান, দুদকের আইনজীবি অ্যাড. মু: বদিউল আলম, এফডিএসআর এর ক্লিনিক ম্যানেজার রুপস মুৎসুদ্দি প্রমুখ। অনুষ্ঠানে টিআইবি’র দুর্নীতিবিরোধী দিবসের ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন সনাক সহ-সভাপতি শীলা দাশ। এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সনাক সভাপতি অধ্যক্ষ মু. আবু তৈয়ব, সহ-সভাপতি নিত্যময় চৌধুরী, উপজেলা কৃষি অফিসার আবু জাফর মোহাম্মদ মঈন উদ্দিন, উপজেলা যুব উন্নয়ন অফিসার মো: আবদুল মতিন, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোতাহার বিল্লাহ, সনাক সদস্য মোহাম্মদ সোলায়মান প্রমুখ। আলোচনা সভা শেষে অনুষ্ঠিত হয় দুর্নীতিবিরোধী ভিডিও চিত্র প্রদর্শনী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সনাক পটিয়ার ইয়েস দল ‘পালাবার পথ নেই’ নাটিকা উপস্থাপন করে। এর আগে ৮ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় সনাকের ইয়েস দলের তরুণ সদস্যরা উপজেলা পরিষদ প্রবেশমুখে দুর্নীতিবিরোধী স্লোগান সম্বলিত ব্যানার প্রদর্শন করে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার হাবিবুল হাসান বলেন, দুর্নীতি বর্তমানে বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান সমস্যা। এ সমস্যা দূর করতে তরুণ প্রজন্মকে দেশ প্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে এগিয়ে আসতে হবে। তিনি বলেন, সবাই যদি নিজ নিজ পরিমন্ডলে সৎ থাকে তাহেলে এদেশ একদিন দুর্নীতিমুক্ত হবেই। তিনি সরকারি কর্মকর্তাদের সেবা প্রদানে আরো আন্তরিক হওয়ার আহবান জানান।

অনুষ্ঠানে সনাক-টিআইবি’র পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস ২০১৮ উপলক্ষ্যে দুর্নীতি প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে সংশ্লিষ্ট অংশীজনের বিবেচনার জন্য দশটি সুপারিশসমূহ প্রস্তাব করা হয়। ১. আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের প্রেক্ষিতে রাজনৈতিক দলগুলো কর্তৃক গণতন্ত্র ও সুশাসনের বিদ্যমান ঘাটতি পূরণে সুনির্দিষ্ট অঙ্গীকার থাকতে হবে, এবং অঙ্গীকারসমূহ কিভাবে বাস্তবায়িত হবে তার সুনির্দিষ্ট রূপরেখাও থাকতে হবে। ২. প্রতিটি রাজনৈতিক দলকে জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশলপত্র অনুসরণপূর্বক কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়ন ও প্রতিবছর অগ্রগতি পর্যালোচনা করতে হবে। ৩. নির্বাচনে কালো টাকার প্রভাব কমাতে প্রার্থীদের ব্যয়ের হিসেব পর্যবেক্ষণ করতে সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তা, সুশীল সমাজ ও বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে আসন ভিত্তিক কমিটি গঠন করতে হবে। ৪. আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবসে জনসম্পৃক্ততা অর্থবহ করার লক্ষ্যে এবং গণতান্ত্রিক জবাবদিহিতাসহ সকল নাগরিকের বাক্-স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও জাতীয় সম্প্রচার আইন এর বিতর্কিত ধারাসমূহ বাতিল করতে হবে। ৫. সরকারি খাতে অনিয়ম ও দুর্নীতি প্রতিরোধ করতে ‘সরকারি চাকরি আইন ২০১৮’ এর বিতর্কিত ধারাসমূহ বাতিল করতে হবে। ৬.  ঋণ খেলাপিতে জর্জরিত রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকিং খাতে দুর্নীতি ও জালিয়াতি এবং বেসরকারি ব্যাংকের নজিরবিহীন আর্থিক কেলেঙ্কারির সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তিবর্গকে বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। ৭. বিচার ব্যবস্থা, প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থায় পেশাদারি উৎকর্ষ ও কার্যকরতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে একটি সমন্বিত ও পরিপূরক কৌশল গ্রহণ করতে হবে। ৮. সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান ও সদস্যদের নিয়োগে যোগ্যতার মাপকাঠি নির্ধারণ এবং স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় নিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। ৯. তথ্য অধিকার আইনে ব্যবসায়, রাজনৈতিক দল ও গণমাধ্যমকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে এবং এই আইনের বাস্তবায়ন সম্প্রসারণের লক্ষ্যে তথ্য প্রকাশকারী এবং তথ্য চাহিদাকারী উভয় ক্ষেত্রে সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। একইসাথে, তথ্য প্রকাশকারী সুরক্ষা আইন দ্রুত বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে এবং ১০. দুর্নীতি প্রতিরোধে দুদককে শক্তিশালী করতে রাজনৈতিক সদিচ্ছার কার্যকর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। অন্যদিকে দুদকে নেতৃত্ব পর্যায়ে  অকুতোভয় সৎসাহস, দৃঢ়তা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে হবে। উল্লেখ্য, গতবছর থেকে সরকারিভাবে সারাদেশে একযোগে দুর্নীতিবিরোধী দিবস উদযাপিত হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *