মোঃ জয়নাল আবেদীন টুক্কু নাইক্ষ্যংছড়ি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২০১৯-০৩-০৭ ২১:২৮:০৮ || আপডেট: ২০১৯-০৩-০৭ ২১:২৮:০৮
মোঃ জয়নাল আবেদীন টু্ক্কুঃ ৭ মার্চ ২০১৯ ইং নির্বাচন কমিশনের তপশীল অনুযায়ী আসন্ন উপজেলা নির্বাচন আগামী ১৮ মার্চ দ্বিতীয় ধাপে পার্বত্য বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে অনুষ্ঠিত হইবে। এতে দলীয় প্রতীক নৌকা নিয়ে লড়ছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ত্যাগী নেতা অধ্যাপক মোঃ শফিউল্লাহ। এই উপজেলায় বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি আবু তাহের কোম্পানী ও সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি চুচু মং মার্মা। অপর প্রার্থী নাইক্ষ্যংছড়ির প্রবীণ আওয়ামীলীগের নেতা ও পার্বত্য মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এর প্রতিনিধি হিসেবে উপজেলায় কর্মরত ঘুমধুমের সাবেক চেয়ারম্যান খাইরুল বশরের আপন ছোট ভাই অধ্যক্ষ মোঃ ফরিদ। তিনিও আওয়ামীলীগ নেতা হিসাবে পরিচিত।
সেও দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে ভোট প্রার্থনা করে নির্বাচনী মাঠে চষে বেড়াচ্ছেন। আওয়ামীলীগের মনোনীত অধ্যাপক মোঃ শফিউল্লাহ হচ্ছেন পার্বত্য বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুরের আস্থাভাজন ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লার ঘনিষ্ট জন হিসেবে পরিচিত। এই জন্য তিনি দলীয় মনোনয়ন পান। অপর তিন প্রার্থী ও মন্ত্রীর মহোদয়ের খুবই কাছের লোক। যদিও বা শফিউল্লাহ শেখ হাসিনা ও বীর বাহাদুর তথা দলীয় প্রতীক নৌকা নিয়ে লড়ছে। অপর তিন জনই আওয়ামীলীগের নেতা তবে তারা এখন নৌকার প্রতিপক্ষ। এদের মধ্যে তাহের (মোটর বাইক)ফরিদ (আনারস) চুচু মং মার্মা (উড়োজাহাজ) প্রতীক নিয়েছেন। সরেজমিনে ঘুরে জানা গেছে গেল জাতীয় সংসদ নির্বাচন এক তরফা হয়েছে এবং গ্রহণ যোগ্য নির্বাচন হয়নি দাবী করে দেশের শীর্ষ রাজনৈতিক দল বিএনপি তথা ঐক্যফ্রন্ট এবারে উপজেলা নির্বাচনে অংশ গ্রহণ না করায় আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগের মধ্যে চলছে নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতা। এদের মধ্যে তিন প্রার্থী অবিরাম প্রচারনা চালাছে। আর শেষ পর্যন্ত এক প্রার্থী চুচু মং মার্মা প্রচারনায় নামেননি। বাকি তিন প্রার্থী এক জন আর এক জনকে ছাড় না দিয়ে নৌকা প্রতীকের বিজয় ঠেকাতে মাঠে নেমেছে দুই প্রার্থী।
তাই এখন প্রধানমন্ত্রী ও পার্বত্য মন্ত্রী তথা আওয়ামীলীগের দলীয় প্রতীক নৌকার বিরুদ্ধে অপর দুই আওয়ামীলীগ প্রার্থী। নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা বিএনপির প্রভাবশালী নেতা নুর কাশেম এ প্রতিবেদককে জানান দীর্ঘদিন যাবৎ বিএনপি সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি করে আসছিলেন। কিন্তু আওয়ামীলীগ সুষ্ঠু নির্বাচন না করায় তাদের দল উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন না। এই জন্য তারা ভোট কেন্দ্রেও যাবেন না। কিন্তু অপর বিএনপি নেতা ঘুমধুম ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক সভাপতি মোঃ শাহাজানের ভিন্ন কথা। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন গেল নির্বাচনে তিনি তার দল বিএনপির ধানের শীর্ষের পক্ষে কাজ করায় স্থানীয় চেয়ারম্যান কর্তৃক হয়রানির স্বীকার হন।
এজন্য এবার তাদের দলীয় প্রার্থী না থাকায় একজন ভাল মানুষ ও এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে শফিউল্লাহকে ভোট দিবেন। তবে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী জামায়াত ও বিএনপি নেতারা চাচ্ছেন নাইক্ষ্যংছড়ির মানুষ আওয়ামীলীগকে পছন্দ করেনা এই জন্য নৌকার ভরা ডুবি করে জাতীয় নির্বাচনের প্রতিশোধ নিতে চায়। নির্বাচন বিষয়ে জানতে চাইলে ঘুমধুম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন- নির্বাচনে যেই জিতুক তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী। তবে তিনি কারো নাম না বলে সাংবাদিকদের জানান জনগণ সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে যোগ্য প্রার্থী বেচে নিবেন বলে তিনি মনে করেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সদর ইউপি চেয়ারম্যান তসলিম ইকবাল চৌধুরী বলেন- নৌকা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ও পার্বত্য মন্ত্রী বীর বাহাদুরের প্রতীক। তাই ইনশাআল্লাহ উপজেলাতেও নৌকার বিজয় কেউ ঠেকাতে পারবে না। আর নৌকার বিরোধীরাও কেউ সফল হবে না। উপজেলা যুবলীগ সভাপতি জসিম উদ্দিন বলেন- পাঁচ ইউনিয়নের মানুষ মোটরসাইকেল প্রতীকের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। পাহাড়ি-বাঙ্গালী জনগণকে তাহের ভাইকে বিজয়ী করার জন্য আহ্বান জানান। উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি বদুর উল্লাহ বিধু বলেন- শান্তি, সম্প্রীতি ও উন্নয়নের জন্য নৌকা প্রতীকের কোন বিকল্প নেই। তাই নাইক্ষ্যংছড়ির রূপকার মরহুম ছালেহ আহমদের সুযোগ্য সন্তান শফিউল্লাহ ভাইকে আধুনিক নাইক্ষ্যংছড়ি গঠনের জন্য একবার সুযোগ করে দিতে ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানান।
অন্যদিকে আনারস প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী অধ্যাপক মো. ফরিদ নির্বাচন প্রসঙ্গে বলেন- অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তার প্রতীক আনারস বিজয়ী হবে বলে তিনি আশাবাদী। আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী অধ্যাপক শফিউল্লাহ তিনি এবার জনগণের ভোটে নির্বাচিত হবেন বলে আশা ব্যক্ত করে বলেন নাইক্ষ্যংছড়ি বাসীর কাছে আমার শেষ চাওয়া। আমার চলার পথে ভুল হতে পারে সব ভুল ক্ষমা করে একটিবার আমাকে জনগণের সেবা করার জন্য সুযোগ করে দিন। আমি আগামী ৫ বছর আপনাদের গোলামী করে যাব ইনশাআল্লাহ। বিদ্রোহী প্রার্থী আবু তাহের কোম্পানী বলেন সৎ ও সাদা মনের মানুষ হিসাবে এলাকাবাসী আমাকে বিজয়ী করবে এই জন্য তিনি প্রশাসনের কাছে সুষ্ঠু নির্বাচন দাবী করেন। নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান ছাড়াও পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে মওলানা শাহাজান কবির (টিয়া পাখী) মোহাম্মদ ইমরান (তালা), মোঃ জহির উদ্দিন (চশমা), মংলাওয়াই মারমা (টিউবওয়েল), এবং নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে মোছাম্মৎ ওজিফা খাতুন রুবি (কলস) বিএপির বহিষ্কৃত নেত্রী হামিদা চৌধুরী (ফুটবল) ও শামীমা আক্তার (প্রজাপতি)। মুলত ভাইস-চেয়ারম্যান পথে আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগের মধ্যে লড়াই হওয়ায় ভাইস চেয়ারম্যান পদের এসব প্রার্থীরা বেকায়দায় পড়েছেন। নিজেদের বিজয় নিশ্চিতের জন্য কৌশলী হয়েই মাঠে ভোট চাইতে হচ্ছে তাদের। এলাকার সাধারণ ভোটারদের মতে চেয়ারম্যান পদে এই পর্যন্ত জনপ্রিয়তায় এগিয়ে শফিউলাহ। পুরুষ ও মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যাান পথে ইমরান মেম্বার ও হামিদা চৌধুরী এগিয়ে রয়েছে।