আবদুল হাকিম রানা পটিয়া প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২০১৯-০৩-২৪ ২৩:০৬:৪৮ || আপডেট: ২০১৯-০৩-২৪ ২৩:০৬:৪৮
আবদুল হাকিম রানা, বীর কন্ঠ : পটিয়ায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। সকাল ৮ টা থেকে ভোট গ্রহণ শুরু হলে বিভিন্ন কেন্দ্রে লাইন ধরে ভোটারদেরকে ভোট প্রদান করতে দেখা যায়। তবে বেলা বাড়তে শুরু করলে ভোটার উপস্থিতিও কমতে থাকে। এছাড়াও বিভিন্ন কেন্দ্রে জাল ভোটের অভিযোগে বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়। পরে অবশ্য তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এছাড়াও বিভিন্ন কেন্দ্রে ব্যালেটে সীল মারা নিয়ে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটলেও পটিয়ার চরকানাই হাই স্কুল কেন্দ্রে জোর পূর্বক দুস্কৃতিকারী কর্তৃক ব্যালেটে সীল মারার চেষ্টা করলে নির্বাচন কমিশন এ কেন্দ্রের নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করেন। বেলা ২ টা নাগাদ এ কেন্দ্র থেকে সব মালামাল সহ দায়িত্বরতদের প্রত্যাহার করে নেওয়া হয় বলে সহকারী রিটার্নিং অফিসার ইউএনও হাবিবুল হাসান জানান। এছাড়াও বিভিন্ন কেন্দ্রে জাল ভোটের অভিযোগে প্রায় ১৫ জনকে আটক করা হলেও বিকেলে তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হয়। বর্তমানে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ভোট গণনা চলছিল।
এসময় একাধিক কেন্দ্রে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী (নৌকা) ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে ডা. তিমির বরণ চৌধুরী উড়োজাহাজ এগিয়ে রয়েছেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। ইতিপূর্বে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মাজেদা বেগম শিরু বিনা প্রতিদ্বন্ধীতায় নির্বাচিত হন। সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, সকাল সাড়ে ৮ টায় পৌর সদরের উত্তর গোবিন্দারখীল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে লাইন ধরে ভোটাররা ভোট দিচ্ছেন। এতে নারী পুরুষের দীর্ঘ লাইন দেখা যায়। প্রিজাইডিং অফিসার পীযুষ কান্তি শীল জানান, এ কেন্দ্রে মোট ভোটার ৪৫১২। সকাল ১০ টা নাগাদ ভোট কাস্ট হয় প্রায় ৩০০। এ কেন্দ্রে দক্ষিণ জেলা যুবলীগ সভাপতি আ.ম.ম টিপু সুলতান চৌধুরী বলেন, সকাল থেকেই নারী পুরুষ দীর্ঘ লাইন ধরে তাদের ভোট প্রদান করে। এর পরেই কেলিশহর ইউনিয়ন পরিষদ কেন্দ্রে সকাল ১০ টায় গিয়ে দেখা যায় ৩২৭৮ ভোটের মধ্যে ২৫০ ভোট কাস্ট হয় বলে প্রিজাইডিং অফিসার অধ্যাপক প্রণব কুমার দাশ জানান। এ কেন্দ্রে পটিয়া উপজেলা আ’লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বিজন চক্রবর্ত্তী জানান, সকাল থেকে ভোটাররা ভোট দিচ্ছেন। এখানে কেউ কারো উপর প্রভাব বিস্তার করছে না। সকাল ১১ টায় কেচিয়া পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় জাল ভোট নিয়ে পুলিশের সাথে ভোটারদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া নিয়ে ভোট গ্রহণ সাময়িক বন্ধ হয়ে যায়।
এসময় প্রিজাইডিং অফিসার বিশ্বজিৎ দত্ত জানান, আইন শৃঙ্খলা রক্ষা করতে গিয়ে দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তা মাহফুজ আহমদের নেতৃত্বে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ধাওয়া করলে কিছুটা আতংক ছড়াই। তবে এ কেন্দ্রেরই ভোটার উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ডা. তিমির বরণ চৌধুরী কেন্দ্রে এসে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য অনুরোধ জানালে পরিস্থিতি শান্ত হয় এবং পুনরায় ভোট গ্রহণ শুরু হয়। এসময় পর্যন্ত এ কেন্দ্রে ২৮০৪ ভোটের মধ্যে ৭০০ ভোট কাস্ট হয় প্রিজাইডিং অফিসার জানান। সাড়ে ১১ টায় পৌর সদরের আল্লই ওখাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, মাঝে মাঝে কয়েকজন ভোটার এসে ভোট দিচ্ছেন। প্রিজাইডিং অফিসার ফারুক আহমদের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, ৩৮০০ ভোটের মধ্যে ১২০০ ভোট কাস্ট হয়েছে। সাড়ে ১১ টা নাগাদ পৌর সদরের আবদুর রহমান সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোটারদের উপর পুলিশ জাল ভোটের অভিযোগ চড়াও হয়। এসময় বেশ কয়েকজন ভোটার আহত হয়।
স্থানীয় আ’লীগ নেতা অভিযোগ করেন পুলিশ বেপরোয়া ভাবে সাধারণ ভোটারদের উপর লাঠি সার্জ করেছে। আমি এর নিন্দা জানাচ্ছি এবং তদন্ত করার মাধ্যমে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনের সুদৃষ্টি কামনা করছি। এরপরেই বেলা ১২ টায় বড়লিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, তরুণ ভোটারদের উপস্থিতি। জানতে চাইলে তরুণ ভোটার লিটন জানান, জীবনে প্রথম ভোট দিলাম। খুব ভাল লাগছে। এ কেন্দ্রে প্রিজাইডিং অফিসার পুলিন বিহারী জানান, ৩৪৬৮ ভোটের মধ্যে ১৬০০ ভোট কাস্ট হয়েছে। এ কেন্দ্রে দেখা হয় বড়লিয়া ইউপি চেয়ারম্যান শাহীনুল ইসলাম সানুর সাথে। তিনি বলেন, এখানে ভোটাররা পছন্দের প্রার্থীকে বিনা বাধায় ভোট দিচ্ছেন। কেউ কারো উপর প্রভাব বিস্তার করছে না। এরপরেই ১২ টা ২০ মিনিটে কর্তালা বেল খাইন প্রাইমারী স্কুলে গিয়ে দেখা যায়, হালকা ভোটারের উপস্থিতি। জানতে চাইলে প্রিজাইডিং অফিসার সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা সানা উল্লাহ জানান, ২৪৩৮ ভোটারের মধ্যে ৪৭০ ভোট কাস্ট হয়েছে। সেখানে ভোটার ও ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি সুপ্রিয় বড়ুয়া রূপম বলেন, সকালেই ভোটাররা নিজ উদ্যোগে এসে ভোট দিয়েছে। এখন মাঝে মাঝে আসছে। পরে পৌনে ১ টা নাগাদ জিরি আমানিয়া লোকমান হাকিম সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, ভোটার উপস্থিতির হার নগন্য। জানতে চাইলে এ স্কুলের সভাপতি লোকমান হাকিম বলেন, এখানে সকালেই অধিকাংশ ভোটার ভোট দিয়েছে। এখন মাঝে মাঝে আসছে। প্রিজাইডিং অফিসার শ্রীকান্ত দাশ জানান, ৪৩১১ ভোটের মধ্যে প্রায় ১০০০ ভোট কাস্ট হয়েছে।
এরপরে জিরি বিবেকানন্দ প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, ২০৫৪ ভোটের মধ্যে প্রায় ৩০০ ভোট কাস্ট হয়েছে। ভোট কম কাস্ট হওয়ার কারণ জানতে চাইলে স্থানীয়রা জানান, এ কেন্দ্র থেকে বিজিবি কৃষ্ণ নাথ মাষ্টার ও জাহাঙ্গীর আলমকে আটক করে নিয়ে যাওয়ার পর ভোটার উপস্থিতি কমে যায়। পরে অবশ্য তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হয় বলে জানা গেছে। এছাড়াও ১টা ১৫ মিনিটে পশ্চিম মালিয়ারা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, ২২৯৯ ভোটের মধ্যে ১১৫০ ভোট কাস্ট হয় বলে প্রিজাইডিং অফিসার সবুজ কান্তি দে জানান। এরপরে দক্ষিণ মালিয়ারা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, ১৮৯১ ভোটের মধ্যে ৮৫০ ভোট কাস্ট হয় বলে প্রিজাইডিং অফিসার সুজন দাশ জানান। পরে মহিরা জে.বি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, ২৯৪০ ভোটের মধ্যে ১৬০০ ভোট কাস্ট হয় বলে প্রিজাইডিং অফিসার অঞ্জন কান্তি চৌধুরী জানান। এ কেন্দ্রে কথা হয় চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ প্যানেল চেয়ারম্যান দেবব্রত দাশ ও দক্ষিণ জেলা আ’লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রদীপ দাশের সাথে। তারা বলেন, পটিয়ায় হুইপ সামশুল হক চৌধুরীর যে উন্নয়ন হয়েছে তার ধারাবাহিকতা রক্ষা করার জন্য পটিয়ার মানুষ নৌকা ও উড়োজাহাজকে বেছে নেবেন। যা প্রত্যেক ভোটারের মানসপটে ভেসে উঠেছে। আমাদের বিশ্বাস সন্ধ্যায় শেখ হাসিনার মনোনীত প্রার্থীরাই জয়ের মালা পড়বেন। চাপড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, প্রিজাইডিং অফিসার অধ্যক্ষ নুরুল আলম ফারুকী বলেন, ২৬১৮ ভোটের মধ্যে ৯৫০ ভোট কাস্ট হয়েছে। এ কেন্দ্রে যুবলীগ সাধারণ সম্পদাক এম.এ রহিম বলেন, ভোটাররা নিজ উদ্যোগেই ভোট দিতে আসছেন। আমরা কাউকে জোর করে কোনো প্রতিকে ভোট দেওয়ার জন্য বলছি না। লাখেরা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৪৭৪৪ ভোটের মধ্যে সাড়ে ৩ টা নাগাদ ২২০০ ভোট কাস্ট হয় বলে প্রিজাইডিং অফিসার সামশুল আলম সিদ্দিক জানান। কোলাগাঁও সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, ভোট কেন্দ্রে ভোটর শূন্য অবস্থা। জানতে চাইলে প্রিজাইডিং অফিসার আবদুল গণি জানান, কিছু দুস্কৃতিকারী লাঠিসোটা নিয়ে কেন্দ্রে প্রবেশের চেষ্ঠা করে। এতে পুলিশ ধাওয়া করলে তারা পুলিশের উপর চড়াও হয়। পরে পুলিশ একশনে গেলে তার লাঠি ফেলে পালিয়ে যায়। এতে প্রায় ৩০টি মত লাঠি পুলিশ উদ্ধার করে। এ কেন্দ্রে ৪৭০৩ ভোটের মাধ্য ৫০০ ভোট কাস্ট হয়।
এ কেন্দ্রে স্কুল কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ হারুন বলেন, কিছু দুস্কৃতিকারী নৌকার বিজয় ঠেকাতে লাঠিসোটা নিয়ে নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করেছিল। প্রশাসন কঠোর হস্তে তাদের প্রতিরোধ করেছে এবং ব্যবহৃত লাঠি উদ্ধা করেছে। হাইদগাঁও হ্যান্ডস সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পৌনে ৪টায় দিয়ে দেখা যায়, ১৯১৫ ভোটের মধ্যে ৫৫৩ ভোট কাস্ট হয় বলে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার শাহ আমিরী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এসএমএকে জাহাঙ্গীর জানান। দক্ষিণ গোবিন্দারখীল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৪৩২০ ভোটের মধ্যে নৌকা প্রতিকের মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী ১৮৩০ ভোট, ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী ডা. তিমির বরণ চৌধুরী (উড়োজাহাজ) প্রতিকে ১৩০৬ ভোট পান বলে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার থাপা বড়ুয়া জানান। এছাড়াও পটিয়ায় কিছু কিছু জাল ভোট এবং কয়েকটি কেন্দ্রে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ছাড়া বিনা রক্তপাতে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন শেষ হয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার হাবিবুল হাসান জানান, পর্যাপ্ত আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন সহ প্রশাসনের কড়া সতর্কতার কারণে কোনো ধরণের অঘটন ছাড়াই নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত আ’লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী (নৌকা), ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ডা. তিমির বরণ চৌধুরী (উড়োজাহাজ) এগিয়ে রয়েছেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।