চট্টগ্রাম, , বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪

আবদুল হাকিম রানা পটিয়া প্রতিনিধি

সনাক-টিআইবি’র উদ্যোগে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে পটিয়ায় বিশ্ব পানি দিবস উদযাপন

প্রকাশ: ২০১৯-০৩-৩০ ০১:১৩:৪৮ || আপডেট: ২০১৯-০৩-৩০ ০১:১৩:৪৮

আবদুল হাকিম রানা, বীর কন্ঠ : ‘সকলের জন্য সুপেয় পানির প্রাপ্যতা নিশ্চিতে চাই পানি খাতে সুশাসন ও দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ’ এই শ্লোগানকে প্রতিপাদ্য করে দুর্নীতিবিরোধী সংগঠন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবি’র সহায়তায় সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক), পটিয়ার উদ্যোগে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে ২৮ মার্চ পটিয়ায় বিশ্ব পানি দিবস উদযাপন করা হয়েছে। এ উপলক্ষে পটিয়া পৌর শহরে অবস্থিত আবদুর রহমান সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ওরিয়েন্টেশন, কুইজ, শপথ ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। সনাকের শিক্ষা উপ-কমিটির আহবায়ক অধ্যাপক অজিত কুমার মিত্রের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত অনুষ্ঠানের শুরুতে ওরিয়েন্টেশন পরিচালনা করেন টিআইবি’র এরিয়া ম্যানেজার মো: জসিম উদ্দিন। ওরিয়েন্টেশনে দেশপ্রেম, টিআই, টিআইবি, দুর্নীতিবিরোধী সামাজিক আন্দোলনের প্রয়োজনীয়তা, দুর্নীতির ধারণা সূচক অনুযায়ি বাংলাদেশের অবস্থান, দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র সমাজের ভ‚মিকা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়। ওরিয়েন্টেশন শেষে বিশ্ব পানি দিবস উপলক্ষে টিআইবি’র ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী ইসমত আরা মিতু।

এর পর ধারণাপত্রের উপর ভিত্তি করে পরিচালনা করা হয় পানি দিবসের কুইজ প্রতিযোগিতা। কুইজ প্রতিযোগিতা পরিচালনা করেন ইয়েস সদস্য প্রান্ত নাথ। কুইজ প্রতিযোগিতায় বিজয়ী ১০ জন শিক্ষার্থীকে পুরষ্কৃত করা হয়। কুইজ শেষে পানি দিবসের তাৎপর্য শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন সনাক সহ-সভাপতি শীলা দাশ, সনাক সদস্য আবদুর রাজ্জাক, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিলন কান্তি দাশ, স্বজন সদস্য মদিনা বেগম প্রমুখ। উপস্থিত ছিলেন ইয়েস দলনেতা দীপ্ত বড়ুয়া, সহ-দলনেতা জিন্নাত আরা বেগম এবং ইয়েস ও ইয়েস ফ্রেন্ডস সদস্যবৃন্দ। আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, পানির প্রাপ্যতায় সার্বজনীন অভিগম্যতা নিশ্চিতের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অর্জন বিশ্ব স্বীকৃত। কিন্তু বাংলাদেশের প্রায় ৯৮ শতাংশ মানুষের পানির উৎসে অভিগম্যতা থাকলেও বাস্তবে নিরাপদ সুপেয় পানির ক্ষেত্রে এই হার মাত্র ৩৪.৬%।

বাংলাদেশের পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনায় দুর্নীতি, অনিয়ম তথা সুশাসনের অভাবে এখনও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ নিরাপদ পানির অভিগম্যতা থেকে বঞ্চিত। বক্তারা আরো বলেন, একসময় বলা হতো পানিই জীবন, কিন্তু একথা সঠিক নয়, সঠিক কথা হচ্ছে নিরাপদ পানিই জীবন। তাই সকলের জন্য নিরাপদ পানির ব্যবস্থা যাতে নিশ্চিত করা যায় এবং পানি খাতে দুর্নীতিরোধ করে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা যায় সেজন্য সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। আলোচনা সভায় সনাকের পক্ষ থেকে বিশ্ব পানি দিবস উপলক্ষে সরকারের কাছে কতিপয় দাবী জানানো হয়।

উল্লেখযোগ্য দাবীগুলো হলো: সংবিধান ও পানি খাত সম্পর্কিত সংশ্লিষ্ট সকল নীতি ও আইনে পানিকে বাংলাদেশের সকল জনগণের একটি মৌলিক ও মানবিক অধিকার হিসাবে সুস্পষ্টভাবে স্বীকৃতি দিতে হবে; নারী-পুরুষ, ধর্ম, বর্ণ, ভাষা, জাতীয়তা, শারীরিক অক্ষমতা, বয়স, স্বাস্থ্য, সম্পদ, বাসস্থান, অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থান ইত্যাদি বিবেচনার ঊর্ধ্বে উঠে বাংলাদেশের সকল জনগণ, বিশেষ করে প্রান্তিক ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য নিরাপদ সুপেয় পানির অভিগম্যতা নিশ্চিত করতে হবে; ক্ষমতাবান ব্যক্তি, ব্যবসায়ী বা সংশ্লিষ্ট সরকারি, বেসরকারি ও ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান কর্তৃক অবৈধভাবে দখলকৃত নদী, জলাশয় ও জলাভূমিসমূহ দখলমুক্ত করে দোষীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে এবং প্রাকৃতিক জলাধারসমূহ সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে; পানিসম্পদ খাত সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে শুদ্ধাচার ব্যবস্থাপনার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ ও সকল কার্যক্রমে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ নিরসনে কার্যকর জবাবদিহি পদ্ধতি প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি অবাধ তথ্য প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে। অনুষ্ঠানের শেষে শিক্ষার্থীরা দুর্নীতিকে ‘না’ বলার শপথ গ্রহণ করেন। উপস্থিত শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের দুর্নীতিবিরোধী শপথবাক্য পাঠ করান সনাক সদস্য অধ্যাপক অজিত কুমার মিত্র।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *