চট্টগ্রাম, , বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪

মিজবাউল হক চকরিয়া অফিস

চকরিয়ায় ছাত্রলীগ নেতা আনাছ হত্যায় ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা, খুনিদের গ্রেফতার দাবী

প্রকাশ: ২০১৯-০৫-২৭ ০২:৪২:৪৭ || আপডেট: ২০১৯-০৫-২৭ ০২:৪২:৪৭

মিজবাউল হক, চকরিয়া : ছাত্রলীগ নেতা আনাছ ইব্রাহীম হত্যাকান্ডে জড়িত খুনিদের গ্রেফতারের দাবীতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে ছাত্রলীগ। রবিবার সকাল দশটায় চকরিয়া পৌরশহরে দফায় দফায় মিছিল করে চকরিয়া উপজেলা ও পৌর ছাত্রলীগ। পরিবার ও ছাত্রলীগ নেতাদের দাবী, দ্রুত সময়ে ছাত্রলীগ নেতা আনাছ হত্যাকান্ডে জড়িত খুনিদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে হবে। খুনিরা যত বড় শক্তিশালী হউক কেন, তাদের অবশ্যই গ্রেফতার করতে হবে। রবিবার বিকাল চারটায় মগবাজার কমিউনিটি সেন্টার মাঠে আনাছের নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় শোকাহত মানুষের ঢল নামে। জানাজায় বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ অংশ গ্রহণ করে। সেখানেও আনাছ হত্যার সুষ্ট তদন্তপূর্বক বিচার দাবী করা হয়। নিহত আনাছ ইব্রাহীম চকরিয়া পৌরসভা ৭নং ওয়ার্ডের বিনামারার হাফেজ নেছার উদ্দিনের ছেলে ও একই ওয়ার্ডের ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি।

এদিকে আনাছ হত্যার ঘটনায় তার পিতা হাফেজ নেছার আহমদ বাদী হয়ে ৬জনের নাম উল্লেখপূর্বক ১২ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেছে। তাৎক্ষণিক ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে রিয়াজ নামের এক আসামীকে গ্রেফতার করার কথা জানান চকরিয়া থানার ওসি হাবিবুর রহমান। মামলায় যাদেরকে আসামী করা হয়েছে তারা হলো, সোয়াইফুর রহমান রুবেল (২৮), সোহেল রানা (২৬), বাবু (২২), সালাহউদ্দিন (২৪) ও ইসমাইল (২৫)। এরা সবাই চকরিয়া পৌরসভা ৭নং ওয়ার্ডের পালাকাটা ও কাসেম মাষ্টারপাড়ার বাসিন্দা। স্থানীয় লোকজন জানায়, প্রায় দুইমাস পূর্বে ছাত্রলীগ নেতা আনাছ ইব্রাহীমের সাথে একই এলাকার সোয়াইফুর রহমান রুবেলের মধ্যে প্রেমঘটিত বিষয় নিয়ে বিরোধ চলে আসছিলো। এনিয়ে ক্রিকেট খেলায় প্রেমের জের ধরে দুইজনের মধ্যে হাতহাতি ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এরপর আরো দুইবার সংঘর্ষ হয় দুপক্ষের মধ্যে। দীর্ঘ একমাসের বেশী সময় তাদের আর দেখা সাক্ষাত হয়নি।

২৫মে শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ছাত্রলীগ নেতা আনাছ চকরিয়া পৌরশহরের ওয়েষ্টার্ন প্লাজায় ঈদের কেনাকাটা করতে আসে। ওইসময় ওয়েষ্টার্ন প্লাজার সামনে তার বন্ধুদের জন্য অপেক্ষা করেছিলো আনাছ। হঠাৎ পালাকাটাস্থ কাসেম মাষ্টার পাড়ার সোয়াইফুর রহমান রুবেল ও সোহেল রানার নেতৃত্বে ১০-১২জন সন্ত্রাসী ছাত্রলীগ নেতা আনাছকে ঘিরে ফেলে। একপর্যায়ে আনাছকে ক্ষুর দিয়ে পেটে আঘাত করে। এতে ক্ষুরের আঘাতে আনাছের পেটের ভুড়ি বের হয়ে যায়। ভয়ঙ্কর কর্মযজ্ঞ দেখে প্রত্যক্ষদর্শীরা এগিয়ে এলে খুনিরা পালিয়ে যায়। পরে মুমুর্ষ অবস্থায় পড়ে থাকা আনাছের দেহ স্থানীয় লোকজন উদ্ধার করে প্রথমে চকরিয়া সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করলে পথে চুনতি এলাকায় রাত সাড়ে দশটার দিকে তার মৃত্যু হয়। এদিকে সন্ত্রাসীদের কবল থেকে উদ্ধার করতে গিয়ে মারাত্মক আহত হন তার বন্ধু আবদুল্লাহ। তার অবস্থাও আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে। ঘটনার পরপরই জনতার সহায়তায় পুলিশ ইলিয়াছ উদ্দিন ও ইমরান উদ্দিন সাকিল নামের দুই তরুণকে আটক করেছে। তাদের কাছ থেকে একটি ক্ষুর উদ্ধার করে পুলিশ। পরে তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দেন।

এদিকে আনাছ ইব্রাহীমের খুনিদের গ্রেফতারে পুলিশ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়েছে। ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে রিয়াজ নামের এক খুনিকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারকৃত রিয়াজের স্বীকারোক্তীতে ঘটনার সাথে খুনিদের চিহিৃত করেছে পুলিশ। হামলার ঘটনায় আরো ৫জন জড়িত রয়েছে বলে পুলিশ তথ্য পেয়েছে। তাদেরকে ধরার জন্য ইতোমধ্যে সম্ভাব্য স্থানে অভিযান চলছে বলে জানিয়েছেন চকরিয়া থানার ওসি হাবিবুর রহমান। চকরিয়া থানার ওসি হাবিবুর রহমান জানান, আহতদের মধ্যে আনাছ মারা গেছে জানার পর হামলায় জড়িত পলাতকদের ধরতে পুলিশের দুটি টিম মাঠে নামানো হয়েছে। যে কোন সময় খুনিদের গ্রেফতার করা হবে বলে তিনি জানান। এ ঘটনায় আনাছের পিতা হাফেজ নেছার আহমদ বাদী হয়ে ৬জনের নাম উল্লেখ করে ১২জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *