চট্টগ্রাম, , শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

Alauddin Lohagara

ডাবল স্ট্যান্ডার্ডদের সাথে প্রতিদিন

প্রকাশ: ২০১৯-০৭-০৫ ০১:৩৮:২৫ || আপডেট: ২০১৯-০৭-০৫ ০১:৩৮:২৫

ফারুক মাহমুদ:

আমাদের সমাজে এখন প্রচুর ডাবল স্ট্যান্ডার্ড মানুষের বসবাস। তাদের বচনের সাথে চলনের মিল নাই, চিন্তার সাথে প্রয়োগের বিস্তর ফারাক। বচন শুনে ভক্ত হয়ে পরে আচরণে শক্ত( তব্দা) হয়ে যেতে হয়।

নিজের ছেলে আকাম করলে, ইভটিজিং করলে সেটা দোষের না, এই বয়সে ছেলেরা টুকটাক এমন করতেই পারে বলে দাবি করে। পক্ষান্তরে অন্যের ছেলের বেলায় তিনি ষোলো আনায় কড়া। জিরাফের মতো গলা তুলে বলে, বাপ-মা আদবকায়দা না শেখালে তো ছেলে এমন হবেই। বিপ্রতীপ কোণের মতো বিপরীত অবস্থান হয়ে যায় তাদের।

নিজের মেয়ে সন্ধ্যার পর ঘরে ফিরলে সেটা দোষের না। কোচিং কিংবা জ্যামের দোহাই দিয়ে নিজের মেয়ের দেরিতে ফেরা হালাল হয়ে যায়। বিপরীতে অন্যের মেয়ের ঘরে ফিরতে বিকেল গড়িয়ে একটু সন্ধ্যা নামলেই মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যায়। পানের পিক ফেলতে ফেলতে বলে, নিশ্চয়ই কোন বেটামানুষের সাথে ঢলাঢলি করে ঘরে ফিরছে। একটা বারও ভাবে না তার ঘরেও একটা মেয়ে আছে।

অন্যের ছেলে চাকরি ফেলে তিনি খুশি হন না বরং জিজ্ঞেস করেন, কত লাগছে? সেই একই ব্যক্তি নিজের ছেলে কিংবা মেয়ের চাকরির জন্য দূরসম্পর্কের খালাতো ভাইয়ের ছোট শালাকে ফোন দিতে দিতে ত্যক্ত বিরক্ত করে ফেলে। অভয় দিয়ে বলে, মানি কোন ম্যাটার না।

গ্রামে জমি মাপের সময় অন্যের জমিতে যখন আমিনের ফিতা যায় তখন তিনি বলেন, মাপ রে মাপ। ইনসাফ প্রতিষ্ঠায় সুষ্ঠু মাপজোখের দরকার আছে বলে তিনি একুশ মিনিটের একটা লেকচার দিয়ে দেন। অন্যদিকে নিজের জমিতে যখন সার্ভেয়ারের ফিতা আসে তখন তার সুর পাল্টে যায়। বলে, বাপরে বাপ। ইনসাফ সেখানে বোবা হয়ে যায়।

অধস্তনের সাথে সর্বোচ্চ খারাপ ব্যবহার করা লোকটিও বসের কাছ থেকে ভালো ব্যবহার আশা করেন। খারাপ এসিআর দেওয়া কর্মকর্তাও নিজের ভালো এসিআর আশা করেন। অন্যথায় বসকে আড়ালে আবডালে গালি দিতে ছাড়েন না। দুর্নীতি নিয়ে সোচ্চার মানুষটি তদবিরে এগিয়ে থাকেন। মিথ্যার ভেলায় ভাসতে থাকা মানুষটি সমাজের নৈতিকতার ফেরিওয়ালা হয়ে আছে আজ।

এসব ডাবল স্ট্যান্ডার্ড মানুষদের সাথে আমাদের প্রতিদিন চলতে হয়। এবং নিজের ভিতরেও থাকা এমন ডাবল স্ট্যান্ডার্ড বৈশিষ্ট্য দেখে নিজেই অকারণে হেসে উঠি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *