চট্টগ্রাম, , বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪

শফকত হোসাইন চাটগামী বাঁশখালী প্রতিনিধি

বাঁশখালীতে সোনালী ব্যাংকে ৬০ লক্ষাধিক টাকার গরমিল : পাল্টাপাল্টি মামলা!

প্রকাশ: ২০১৯-০৭-১১ ০১:২১:০৩ || আপডেট: ২০১৯-০৭-১১ ০১:২১:০৩

 

শফকত হোসাইন চাটগামী, বাঁশখালী :

সোনালী ব্যাংক বাঁশখালী শাখায় ৬০ লক্ষাধিক টাকার হিসেব গরমিলের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এনিয়ে এক পক্ষ অপরপক্ষকে দোষারোপ করে পাল্টাপাল্টি মামলার ঘটনাও ঘটেছে। সোনালী ব্যাংকে কর্মরত অফিসার স্টাফরা ইতিমধ্যেই নিজের পকেট থেকে টাকা ভর্তুকি দিয়ে চাকরি বাঁচিয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। ব্যাংকের বিশাল এই ঘাপলায় বর্তমান ও বিদায়ী একাধিক ম্যানেজার, ব্যাংক কর্মকর্তা, স্টাফ এমনকি খোদ উপজেলা সমাজসেবা অফিসের কর্মকর্তারা জড়িত থাকলেও ব্যাংকের মুফিজুর রহমান নামে এক ঝাড়ুদারের উপর সব দোষ চাপানো হয়েছে। ইতিমধ্যই ওই ঝাড়ুদার ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে দিলেও বাকিরা রয়ে গেছেন অধরা। তাছাড়া ৬০ লক্ষাধিক টাকার ঘাপলায় ব্যাংক ও সমাজসেবা অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীসহ প্রায় ২০ জনের অধিক ব্যক্তি জড়িত থাকলেও ব্যাংকের আরেক সাবেক কর্মকর্তা বর্তমানে অবসরে যাওয়া জেবর মুল্লুক বাদী হয়ে ঝাড়ুদার মুফিজের বিরুদ্ধে ৬০ লাখ টাকার চেক ডিজঅনারের মামলা করে দেন। ওদিকে মুফিজও ব্যাংক ঋণের বিপরীতে ব্যাংকের কাছে বন্ধক থাকা তার স্বাক্ষরিত চেক ম্যানেজারসহ ব্যাংক কর্মকর্তাদের জোগসাজশে আত্মসাৎ করে তাতে ৬০ লাখ টাকা কর্জ নেয়ার অভিযোগ তুলে জেবর মুল্লুকের করা মামলার চ্যালেন্জ করে পাল্টা মামলা করেন। মুফিজের করা মামলাটি আদালত আমলে নিয়ে সিআইডিকে ঘটনা তদন্তের নির্দেশ দেন। একই সাথে জেবর মুল্লুকের ৬০ লাখ টাকা চেক ডিজঅনার মামলায় মুফিজকে জামিন দেন আদালত। এনিয়ে বাঁশখালীতে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা চলছে।

জানা গেছে, দীর্ঘ ৩ বছরেরও বেশী সময় ধরে বাঁশখালীতে সোনালী ব্যাংকের বাঁশখালী শাখার মাধ্যমে পরিচালিত বিভিন্ন ভাতা বিতরণের ভাতাভোগীদের টাকা আত্মসাৎ করা হয়। ঝাড়ুদার মুফিজের অফিযোগ তার হাত দিয়ে ওই সব উপকারভোগীদের ভাতা বিতরণ হলেও ম্যানেজার, সমাজসেবা কর্মকর্তাসহ সমাজসেবা অফিস ও ব্যাংকের কতিপয় কর্মকর্তা কর্মচারীরা প্রতিটি চেক ইস্যুর বিপরীতে বিভিন্ন অংকে উৎকোচ নিতেন। ৩ বছরেরও বেশী সময় এভাবে লাখ লাখ টাকা উৎকোচ নেয়া অব্যাহত থাকলেও বছর শেষে ওই টাকা ব্যাংকের হিসেবে উত্তোলন করে দেন মুফিজ। ফলে কর্মকর্তা কর্মচারীরা যে টাকা এতদিন ঘুষ হিসেবে নিয়েছেন সেই টাকার পাইটু পাই হিসেবে জমা দিয়ে মুফিজ ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে দেন। ফলে বিশাল ঘাপলা মাথায় নিয়ে বিপাকে পড়ে ব্যাংকের কর্মকর্তা কর্মচারীরা। সুত্র জানায়, সোনালী ব্যাংকের এহেন সংকট ও ঘাপলার মুখে ব্যাংকের কর্মকর্তা কর্মচারীরা চাকরি বাঁচাতে ভর্তুকি দিয়ে ঘাপলা পুরণ করেন। সে সময় তারা মুখে মুখে মুফিজ ক্যাংকের ৬০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে চলে গেছে বলে প্রচার করলেও সাংবাদিক কিংবা আইনশৃংখলা বাহিনীর কাউকেই তারা মোটা অংকের ঘাপলার বিষয়টি স্বীকার করেনি। এমনকি এই প্রতিবেদক ম্যানেজার রাশেদ নুরের কাছে ঘটনা জানতে চাইলে তিনি জানান, সোনালী ব্যাংকে কোন ধরণের অনিয়ম কিংবা ঘাপলার ঘটনা ঘটেনি। মুফিজ ব্যাংকের মোট কত টাকা মেরে চলে গেছে জানতে চাইলে ম্যানেজার জানান, না সেই ধরণের কোন ঘটনাই ঘটেনি। এখানে কোন অনিয়ম হয়নি। পরে সাবেক কর্মকর্তা জেবর মুল্লুক ৬০ লাখ টাকা আদায়ে মুফিজের বিরুদ্ধে মামলার বিষয়ে ম্যানেজার বলেন, এটি তাদের ব্যক্তিগত বিষয়। এর সাথে ব্যাংকের কোন সংশ্লিষ্টতা নেই।
এই বিষয়ে সোনালী ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা জেবর মুল্লুক জানান, মুফিজ আমার কাছে ৬০ লাখ টাকা চেকের বিপরীতে কর্জ নেন। ওই কর্জ যথা সময়ে পরিশোধ না করা এবং তার দেয়া চেক ডিজঅনার হওয়ায় আদালতে মামলা করেছি।
অভিযুক্ত মুফিজুর রহমান বলেন, আমি ব্যাংকের স্রেফ একজন ঝাড়ুদার ছিলাম। আমার পক্ষে ৬০ লাখ টাকা আত্মসাৎ হস্যকর। ব্যাংক থেকে আমার তানিশা স্টোর নামক দোকানের নামে ৮ লাখ টাকা লোনের বিপরীতে স্বাক্ষরিত চেক জামানত ছিল। ব্যাংকের কর্মকর্তা জেবর মুল্লুক ম্যানেজারের যোগসাজশে ওই চেক হাতিয়ে নিয়ে আমার বিরুদ্ধে মামলা সাজান।
এদিকে সোনালী ব্যাংকের পাল্টাপাল্টি মামলার ঘটনায় বাঁশখালীতে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *