নীরব জসীম ডেস্ক কন্ট্রিবিউটর
প্রকাশ: ২০১৯-০৮-১০ ১৫:০০:০৪ || আপডেট: ২০১৯-০৮-১০ ১৫:০০:০৪
নিউজ ডেস্ক : মুসলমানদের জন্য ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় উৎসব। কোরবানি শব্দের অর্থ হলো উৎসর্গ, নৈকট্য লাভ, ত্যাগ, বিসর্জন ইত্যাদি। একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য আল্লাহর নামে নির্দিষ্ট নিয়মে নির্দিষ্ট পশু জবাই করাকে কোরবানি বলে। সামর্থ্যবানদের জন্য এটি ওয়াজিব ইবাদত।
ইসলাম ধর্মের অনুসারীরা বিশ্বাস করেন, নবী হজরত ইব্রাহীম (আ.)-কে মহান আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছিলেন, তাঁর সবচেয়ে প্রিয় বস্তু কোরবানি দিতে। আল্লাহ এর মধ্য দিয়ে তাঁর নবীকে পরীক্ষা করতে চেয়েছিলেন। স্নেহের ছেলে হজরত ইসমাইল (আ.) ছিলেন হজরত ইব্রাহীম (আ.)-এর সবচেয়ে প্রিয়। বাবা হয়ে ছেলেকে কোরবানি দেওয়া অসম্ভব কাজ। কিন্তু আল্লাহর নির্দেশপ্রাপ্ত হয়ে হজরত ইব্রাহীম (আ.) বিনা দ্বিধায় নিজ ছেলেকে কোরবানি দিতে উদ্যত হয়েই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। মহান আল্লাহর নির্দেশে তাঁর ছুরির নিচে হজরত ইসমাইল (আ.)-এর স্থলে কোরবানি হয়ে যায় একটি দুম্বা। স্রষ্টার প্রতি পরিপূর্ণ আনুগত্য ও ত্যাগ স্বীকারের বাণীই এ ঘটনার মাধ্যমে প্রতিফলিত হয়েছে। এ ঘটনার পর থেকে সারা বিশ্বের ধর্মপ্রাণ মুসলমান জিলহজ মাসের ১০ তারিখে স্রষ্টার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য প্রিয় পশু কোরবানি দিয়ে থাকেন। কোরবানির পশু-সংক্রান্ত জরুরি কয়েকটি বিষয় উঠে এসেছে বার্তা সংস্থা ইউএনবির এক প্রতিবেদনে।
কোরবানির পশু-সংক্রান্ত জরুরি বিষয়
নবী হজরত মুসার (আ.) যুগের একটি হত্যারহস্য উন্মোচনে গরু কোরবানির বর্ণনার কারণে আল কোরআনের সর্ববৃহৎ সুরার নামকরণ করা হয়েছে ‘বাকারা’ বা গরু। এ সুরার ৬৭ থেকে ৭১ আয়াতে গরুর কয়েকটি বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করা হয়েছে। যা কোরবানির পশু নির্বাচনের আদর্শ মানদণ্ড হিসেবে বিবেচ্য। যেমন— (১) মধ্যম বয়সী হওয়া, (২) হলুদ উজ্জ্বল গাঢ় বর্ণের হওয়া, (৩) আকর্ষণীয় হওয়া, (৪) পরিশ্রমক্লান্ত না হওয়া, (৫) সুস্থ ও নিখুঁত হওয়া।
কোরবানির পশু মহান আল্লাহর অনুগ্রহ এবং অনুপম সৃষ্টি নৈপুণ্যের নিদর্শন। পরিবেশ ও প্রতিবেশগত কারণে কোনো কোনো বন্যপ্রাণী বিলুপ্ত এবং বিপুল উৎসাহে প্রতিবছর অসংখ্য উট, গরু ইত্যাদি কোরবানি হলেও এগুলো টিকে আছে আপন অস্তিত্বে। এ জন্যই পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘কোরবানির উট-গরুকে তোমাদের জন্য আল্লাহর নিদর্শনস্বরূপ বানিয়েছি’ (হজ : ৩৬)।
কোরবানির পশু হতে হবে দোষমুক্ত
প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (স.) নির্দেশনা হলো, ‘কোরবানির পশুতে চারটি দোষ সহনীয় নয়—(১) স্পষ্টত অন্ধ, (২) মারাত্মক অসুস্থ, (৩) দুর্বল-হাড্ডিসার, (৪) চার পায়ে চলতে পারে না এমন অক্ষম বা খোঁড়া’ (তিরমিজি)।
অন্য এক বর্ণনায় আছে, ইবনু ওমর (রা.) এমন পশু কোরবানি করতে নিষেধ করেছেন, যার দাঁত নেই এবং যা সৃষ্টিগতভাবেই পঙ্গু (মুওয়াত্তা ইমাম মুহাম্মদ)।
অন্যদিকে পশুগুলোর জন্মের পবিত্রতা নিশ্চিত হওয়াও জরুরি। এ জন্যই কৃত্রিম প্রজননের প্রাণী, বন্যপ্রাণী, চারণভূমিতে অবাধ বিচরণশীল প্রাণী কোরবানির ক্ষেত্রে পরিহার করা উচিত।
ফিকহগ্রন্থে ত্রুটিমুক্ত পশু প্রসঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। যাতে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো স্পষ্ট হয় :
১. দুই চোখ বা এক চোখ এক-তৃতীয়াংশের বেশি অন্ধ পশু কোরবানি চলবে না।
২. তিন পায়ে চলে বা চার পায়ে ভর দিতে পারে না এমন পশু কোরবানি করা বৈধ নয়।
৩. পশুর কান বা লেজ এক-তৃতীয়াংশের বেশি কাটা থাকলে কোরবানি হবে না।
৪. মজ্জা শুকিয়ে গেছে এমন হাড্ডিসার পশুতে কোরবানি হবে না।
৫. শিং ওঠেইনি অথবা শিং অগ্রভাগ বা সামান্য ভাঙা হলে চলবে, তবে শিং যদি মূল থেকে ভেঙে থাকে, তাতেও কোরবানি শুদ্ধ হবে না।
৬. যে পশুর চামড়া, পশম নষ্ট বা চর্মরোগের কারণে গোশত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এমন পশু কোরবানি করা যাবে না। গর্ভবতী পশু কোরবানি করা বৈধ। কিন্তু বাচ্চা প্রসবের সময় অত্যাসন্ন এমন পশু কোরবানি করা মাকরুহ। কেননা ইবাদত ত্রুটিমুক্ত হওয়া জরুরি।
ইসলাম ধর্মের বিধান অনুযায়ী, কোরবানি একটি উচ্চমর্যাদার ইবাদত। হাদিসের বিবরণে রয়েছে, কোরবানির পশু হাশরের ময়দানে শিং, কান, চোখ, লেজ ইত্যাদিসহ হাজির করা হবে। কিন্তু ঈদের আনন্দে বিমোহিত হয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কথা ভুলে যান অনেকে। হাদিস শরিফে আছে ‘পবিত্রতা ঈমানের অঙ্গ’- সহিহ মুসলিম : ৪২৭। তাই প্রত্যেককে পশু কোরবানির শেষে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে।