নীরব জসীম ডেস্ক কন্ট্রিবিউটর
প্রকাশ: ২০১৯-০৮-১৪ ২৩:৫৫:৩২ || আপডেট: ২০১৯-০৮-১৪ ২৩:৫৫:৩২
মুহাম্মদ ফরিদুল ইসলাম : দেশে বিগত কয়েকবছর যাবত কোরবানির পশুর চামড়া নিয়ে একপ্রকার নোংরা খেলা চলছে। বিগত ৪/৫ বছর পূর্বেও ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা দামের গরুর চামড়া হাজার-দুয়েকেরও বেশি দামে বিক্রি হতো। একইভাবে লক্ষ টাকার পশুর চামড়া বিক্রি হতো সেই অনুপাত ভাল দামে। কিন্তু কয়েকবছর যাবত চামড়ার বাজার নিম্নগামী। এবার তা যেন আরো প্রকট আকার ধারণ করেছে। এবার কোরবানির পশুর চামড়ার দাম একেবারেই কম বলা চলে। ৫০ হাজার থেকে লক্ষাধিক টাকার গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছে মাত্র ২০ টাকা, ৫০ টাকা থেকে শুরু করে মাত্র ২৫০ টাকা পর্যন্ত। যাঁরা কোরবানি দিয়েছেন, তাঁরা যেমন চামড়ার দাম পাননি, তেমনি দাম পাচ্ছেন না মৌসুমি ব্যবসায়ীরাও।
অনেক মৌসুমি ব্যবসায়ী ও এতিমদের মাদ্রাসা সংগৃহিত চামড়া বিক্রি করতে না পেরে আবর্জনা-স্তুপে ফেলে দিয়েছে। অনেক জায়গায় গর্ত করে মাটিতে পুঁেত ফেলেছে। কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রয়লব্ধ টাকা কোরবানিদাতা খেতে পারেন না। তা গরীব-দুঃখীদের মাঝে বিতরণ করা দেয়া ইসলামী বিধান। তাই অভিভাবকহীন গরীবের হক লুন্ঠনের যেন প্রতিযোগিতা চলছে। অথচ, আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়ার ভাল দাম রয়েছে। চামড়াজাত পণ্যের দামও আকাশছোঁয়া। তবুও কাঙ্খিত দামে বিক্রি না হওয়ার পিছিনে নিশ্চয় বড় একটি দুষ্টচক্র কাজ করছে। তারা চামড়ার দাম নিয়ে অন্তরালে নোংরা খেলা খেলে নিজেরা লাভবান হওয়ার চেষ্টা করছেন। একথা নির্ধিদায় বলা যায়, যখন কোন বিষয়ে সিন্ডিকেট কাজ করে, তখন সেটি ধ্বংস হয়। নিশ্চয় চামড়ার বাজার ধসে যাওয়ার পিছনে কাজ করছে সিন্ডিকেট। রাঘব-বোয়ালদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে দিন দিন তা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। সরকার তা নিয়ন্ত্রণে পুরাপুরি ব্যর্থ। চামড়ার বাজার ঠিক রাখা যেমন সরকারের দায়িত্ব, তেমনি গরীব মানুষের হক চামড়ার পয়সা হাতিয়ে নেয়ার সিন্ডিকেটে উচ্চপদস্থ কর্তা-ব্যক্তিরা জড়িত কিনা তা বের করে শাস্তির মুখোমুখি করার দায়িত্ব সরকারের। দেশের জনগণকে বোকা বানিয়ে ধোঁকা দেয়ার চেষ্টা করাটা সরকারের জন্য মঙ্গল হবে না।
গরীব-দুঃখী-মজুর বাঁচলে, দেশ বাঁচবে। তাই চামড়ার মূল্যের এই সংকট থেকে বাঁচতে হলে ট্যানারি প্রতিষ্ঠা নয়, বরং জেলা-উপজেলা পর্যায়ে সরকারি-বেসরকারি সমন্বিত উদ্যোগে চামড়া লবণ দিয়ে রক্ষা করার জন্য আড়ত প্রতিষ্ঠা করা দরকার। এটা সংখ্যায় অনেক হতে পারে এবং তা তুলনামূলক সহজসাধ্য। প্রাথমিকভাবে কাঁচা চামড়া সংরক্ষণের এক দুই তিন মাস পর ভালো মূল্যের বিনিময়ে দেশের ট্যানারিকে দেওয় যাবে কিংবা দেশের বাইরে রপ্তানি করা যাবে। এভাবে কাঁচা চামড়া রপ্তানিতে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক বাজারে যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করতে পারবে। তাই কাঁচা চামড়া রপ্তানি করার সরকারি সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। সরকারের দেরিতে হলেও যে বোধোদয় হয়েছে, তা ভালো। আরো ভালো হবে যদি দুষ্টু-অসৎ সিন্ডিকেট ভাঙ্গতে সক্ষম হয়। অন্ততপক্ষে গরীবকে শোষণ করার ঘৃণ্য ও নিকৃষ্ট সিন্ডিকেটগুলো ধ্বংস হোক।
লেখক: মুহাম্মদ ফরিদুল ইসলাম
সদস্য সচিব, অর্কিড সামাজিক উন্নয়ন সংস্থা।