এম মাঈন উদ্দিন মিরসরাই প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২০১৯-০৯-১০ ১১:৫৫:২১ || আপডেট: ২০১৯-০৯-১০ ১১:৫৫:৩০
এম মাঈন উদ্দিন, মিরসরাই (চট্টগ্রাম) :
যেখানে সিনেমা হল তৈরির কাজ শুরু হয়েছিলো সেখানে আজ ইসলামী শিক্ষার দ্যুতি ছড়াচ্ছে কোরআন মহল। ১৯৮২ সালে মিরসরাই সদর ইউনিয়নের ওয়ার্লেস নামক এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক সংলগ্ন এক একর জমির উপর সিনেমা হলের নির্মান কাজ শুরু হয়। সে সময় অলি আউলিয়ার পুর্নভুমি মিরসরাইয়ে সিনেমা হলের বিরুদ্ধে পাশ্ববর্তী মিরসরাই লতিফিয়া মাদ্রাসা ও মিঠাছড়া মাদ্রাসার শতশত ছাত্র-শিক্ষক ও স্থানীয় ধর্মপ্রাণ ইসলাম প্রিয় তৌহিদী জনতা প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। সিনেমা হলের মালিক ব্যর্থ হয়ে জমি বিক্রি করে দেন। স্থানীয় একজন ব্যবসায়ী সমাজ সেবক জমিটি ক্রয় করে কিছু অংশ মসজিদ কমপ্লেক্স নির্মানের জন্য দান করেন। পরবর্তীতে সেখানে ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় মসজিদ কমপ্লেক্স ও কোরআনে হাফেজ তৈরির প্রতিষ্ঠান “দারুল উলুম মাদরাসা”। মাত্র ১ জন ছাত্র দিয়ে প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু হলেও বর্তমানে মাদরাসার ছাত্র সংখ্যা প্রায় ৩ শতাধিক। প্রতিষ্ঠার পর থেকে শতাধিক হাফেজ এ মাদ্রাসা থেকে পবিত্র কুরআন শরীফ হেফয করে কোরআনের আলোয় নিজের জীবনকে রাঙ্গিয়ে তুলেছেন।
জানা গেছে, ২০১০ সালরে ১লা জানুয়ারী ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক সংলগ্ন উপজেলার মিরসরাই সদর ইউনিয়নের ওয়ার্লেস নামক এলাকায় দারুল উলুম মাদরাসা প্রতিষ্ঠিত হয়। শুরুতে মাত্র ১ জন ছাত্র দিয়ে প্রতিষ্ঠানটির শ্রেণী কার্যক্রম শুরু হয়। বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজ সেবক এ কে এস এম মোস্তফা ২৪ শতক জমি বায়তুছ সোবহান মসজিদ কমপ্লেক্স প্রতিষ্ঠার জন্য দান করেন। পরবর্তীতে আরেকজন বিশিষ্ঠ ব্যবসায়ী ও দানবীর নাসির উদ্দিন মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক হাফেজ মাওলানা শোয়াইব সাহেব এর মাধ্যমে নিজস্ব অর্থায়নের পাশাপাশি এলাকাবাসীর সহযোগীতায় মসজিদ কমপ্লেক্স এর নির্মান কাজ শুরু করেন। সাথে সাথে মাওলানা শোয়াইব পাশ্ববর্তী প্রতিটি গ্রামে গিয়ে শিক্ষার্থী সংগ্রহ করে পাঠদানের কাজ শুরু করেন। এ মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে জনাব নাসির উদ্দিন দ্বীন শিক্ষার আলোকিত এ প্রতিষ্ঠানের সম্পূর্ন খরচ বহন করে নিয়মিত আর্থিক সহায়তা দিয়ে যান। কয়েক বছর পর নাছির উদ্দিনের নিয়তিম আর্থিক সহায়তা বন্ধ হয়ে গেলে আর্থিক সংকটে যখন মাদ্রাসা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয় তখন মাদ্রাসার পরিচালক যথেষ্ট পরিশ্রম ও মেহনতের মাধ্যমে এলাকাবসীর সহায়তায় উক্ত কমেপ্লেক্স এর কাজ দিন দিন সম্প্রসারনের মাধ্যমে আজ অবধি যোগ্যতা ও দক্ষতার সাথে পরিচালনা করে আসছেন। দিন দিন পড়ালেখার মানন্নোয়নের ফলে মাদরাসার সুনাম চারদকি ছড়িয়ে পড়লে মিরসরাই উপজলোর বিভিন্ন এলাকা ছাড়াও পাশ্ববর্তী উপজলোগুলো থেকে ছাত্র ভর্তি করানোর জন্য সন্তানদের নিয়ে আসেন অভিভাবকরা। মাদরাসায় বর্তমানে ৩ তলা একটি মসজিদ কমপ্লক্সে ও ২টি টিন সেটের পাঠদানের ঘর রয়েছে। সরকারী ভাবে কোন বরাদ্ধ না থাকায় স্থানীয় দানশীল ব্যক্তিদের অর্থায়নে পরিচালিত হচ্ছে মাদরাসাটি। এখানে ৩ শতাধকি শিক্ষার্থীর পড়ালেখা, থাকা-খাওয়া ও রান্নার কাজ হচ্ছে প্রতিদিন। বর্তমানে শ্রেণী কক্ষ ও আবাসন সংকটের কারণে নতুন করে শিক্ষার্থী ভর্তি নেওয়া সম্ভব হচ্ছ না। মাদরাসার জন্য সীমানা প্রাচীর নির্মান, নতুন করে জমি ক্রয়, নতুন ভবন নির্মান,আসবাবপত্র সংকট দেখা দিয়েছে চরম আকারে।
বাংলাদেশ কাওমী মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের অধিনে পরিচালিত মাদরাসাটিতে বর্তমানে নবম শ্রেণী পর্যন্ত ক্লাশ রয়েছে। মাদরাসায় কিতাব বিভাগ, হিফযুল কুরআন বিভাগ, নাজেরাা বিভাগ ও নুরানী বিভাগে পাঠদান চালু রয়েছে। এছাড়া মাদরাসার এতিম ফান্ড থেকে ৮২ জন এতিম শিক্ষার্থীর থাকা- খাওয়া ও পড়ালখোর খরচ বহন করা হয়। দারুল উলূম হাটহাজারী মাদরাসার সিনিয়র মুফতী ও মুহাদ্দিস মাওলানা জসিম উদ্দিন সাহেবের তত্ত্বাবধানে মাদরাসা পরিচালনার জন্য মিরসরাই এর বিশিষ্ঠ ওলামায়ে কেরামদের সমন্বয়ে একটি সূরা কমিটি রয়েছে। এছাড়া মাননীয় সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী জনাব ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন সাহেবকে প্রধান করে উপদেষ্ঠা কমিটি ও আলহাজ্ব আজহারুল হক চৌধুরী নওশা মিয়াকে সভাপতি করে একটি উন্নয়ন কমিটি রয়েছে।
মাদ্রার লেখা পড়ার মান ও সুযোগ সুবিধার ব্যাপারে হিফজ বিভাগের শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান এর অভিভাবক মাওলানা মাহবুবুল হক সাহেব জানান, দারুল উলুম মাদরাসায় পড়ালখোর মান অন্যান্য মাদরাসা থেকে ভিন্ন। এখানে শিক্ষকরা অভিভাবকের মতো আন্তরিকিতার সহিত পড়ালখো করান। মাদরাসার মনোরম পরিবেশে শিক্ষার্থীরা আনন্দ উপভোগের মাধ্যমে লেখাপড়া করে। নাজেরা বিভাগের শিক্ষার্থী মাহমুদুর রহমানরে পিতা নুরুল আবছার বলেন, অত্র মাদরাসায় দক্ষ শিক্ষকগণ পড়ালেখার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের খেলাধুলার ব্যাপারেও বেশ মনোযোগী। শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের সাথে অভিভাবকসুলভ আচরণ করেন। ফলে শিক্ষার্থীরা দ্রæত সময়ে পড়ালেখা আয়ত্ব করতে সক্ষম হয়। অপর দ্ইুজন শিক্ষার্থী আতাউল্লাহ ও শেফায়েতুল্লাহ‘র পিতা জনাব এমদাদ উল্লাহ , মাদ্রাসার অভ্যন্তরীন পরিবেশ ও শিক্ষকদের পাঠদান পদ্বতিতে সন্তোষ প্রকাাশ করেন। মাদরাসার পরিচালক ও উন্নয়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ শোয়াইব বলেন, মাদরাসায় ৪টি বিভাগে ৩ শতাধিক আবাসিক ও অনাবাসিক শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত আছে। বিগত ৯ বছরে শতাধিক হাফেজ কুরআন শরীফ হেফয করে বের হয়েছেন। এছাড়া চলতি বছর ৩০ জন হাফেজ উপজেলার বিভিন্ন মসজিদে খতম তারাবীহ নামাজ পড়িয়েছেন। আগামী বছর থেকে মাদরাসায় ছাত্রীদের জন্য নতুন বিভাগ চালু করা হবে। যেখানে মহিলা শিক্ষক দারা মহিলা হাফেজ তৈরী হবে। এছাড়া অন্ধ ও বাকপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য হিফজ বিভাগ চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে মাদরাসায় শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকটের পাশাপাশি শ্রেণীকক্ষ সংকট দেখা দিয়েছে। তিনি মাদ্রাসার ভবিষ্যত পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সকলের দোয়া কামনা করেন। মাদরাসার উন্নয়ন কমিটির সভাপতি ও সাবকে মিরসরাই পৌর প্রশাসক আলহাজ্ব আজহারুল হক চৌধুরী নওশা মিয়া বলেন, কুরআন-হাদীস তথা ইসলামী শক্ষিার প্রসারের ক্ষেত্রে দারুল উলুম মাদরাসা ব্যাপক ভূমকিা রাখছে। স্থানীয় বিত্তশালীদের সহায়তায় মাদরাসার অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি দরিদ্র-এতিম শিক্ষিার্থীদের পড়ালেখার ব্যয় বহন করা হয়। বর্তমানে জমি ও আবাসন সংকটের কারণে নতুন করে শিক্ষার্থী ভর্তি করানো সম্ভব হচ্ছে না। তাই তিনি সমাজের বিত্তশালী ও সরকাররে সহায়তা কামনা করনে।
মিরসরাই উপজেলা চেয়ারম্যান ও মাদ্রাসার উপদেষ্টা আলহাজ¦ জসিম উদ্দিন বলেন, অল্প সময়ের মধ্যে এ মাদ্রাসা মানুষের মন জয় করে ব্যাপক সুনাম অর্জন করেছে। মাদ্রাসার পরিচ্ছন্ন পরিবেশ, ছোট ছোট নিষ্পাপ শিশুদের কোরআন তেলাওয়াত যেন জান্নাতের সুবাস ছড়াচ্ছে। মনে হচ্ছে এটি একটি জান্নাতের বাগান।
সাবেক গনপূর্তমন্ত্রী মাদ্রাসার প্রধান উপদেষ্টা, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি মাদ্রাসায় মনোরম পরিবেশ, ছাত্রদের শৃংখলা দেখে মাদ্রাসার ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং মাদ্রাসার অবকাঠামো উন্নয়নে পাশে থাকার আশ্বাস দেন। তিনি তাৎক্ষনিক কিছু উন্নয়ন কাজের দিকনির্দেশনা দেন।