কাইছার হামিদ
প্রকাশ: ২০১৯-০৯-৩০ ০৯:২৩:২৭ || আপডেট: ২০১৯-০৯-৩০ ০৯:২৩:৩৭
কাইছার হামিদ: এস আলম পরিবারের দখলে রয়েছে দেশের প্রভাবশালী ৭ ব্যাংক।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, দেশের অন্যতম শিল্পগ্রুপ এস আলম পরিবারের মালিকানায় রয়েছে ৭ ব্যাংক। এই পরিবারের সদস্যরা এসব ব্যাংকের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যানসহ ব্যাংকের পরিচালনা পরিচালনা পর্ষদের সদস্য। এস আলম পরিবারের আধিপত্যে থাকা ব্যাংকগুলো হলো- ইসলামী ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, এনআরি গ্লোবাল ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক। এছাড়া নতুন করে পদ্মা ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মালিকানায় এসেছে চট্টগ্রামভিত্তিক এই পরিবার। এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদ জন্ম চট্টগ্রামের পটিয়ায়। যার কারনে এসব ব্যাংকগুলোর সিংহভাগ কর্মকর্তা- কর্মচারী পটিয়ার লোকজন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ ক’জন জানান, পটিয়ার নাগরিক হলেই হলো, যোগ্যতার প্রয়োজন নেই। চাকরী নিশ্চিত ওই ব্যাংকগুলোতে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদ। তিনি ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান। তার স্ত্রী ফারজানা পারভীন রয়েছেন ব্যাংকটির পরিচালক পদে। শুধু এই ব্যাংকটিই নয়, আরও অন্তত ছয়টি ব্যাংকে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, পরিচালকসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে আছেন সাইফুল আলম মাসুদের পরিবারের সদস্যরা। এই ব্যাংকগুলোর মধ্য থেকে এস আলম গ্রুপের নামে বড় আকারের আর্থিক সুবিধাও দেয়া হচ্ছে।
সূত্র জানায়, ২০১৭ সালে ইসলামী বাংকের ১২ ভাগেরও বেশি শেয়ার বিভিন্ন কোম্পানির মাধ্যমে কিনে নেয় এস আলম গ্রুপ। এ নিয়ে গণমাধ্যমে বিভিন্ন খবর প্রকাশ পায়। এছাড়া ইউনিয়ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন শহিদুল আলম। তিনি সাইফুল আলম মাসুদের ভাই। এই ব্যাংকের ভাইস-চেয়ারম্যান পদে আছেন সাইফুল আলমের ছেলে আহসানুল আলম। এ ছাড়া ব্যাংকের শেয়ার হোল্ডার হিসেবে রয়েছেন সাইফুল আলমের ছেলে আহসানুল আলম ও স্ত্রী ফারজানা পারভীন।
বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকেরও মালিকানা এস আলম গ্রুপের হাতে। ব্যাংকটির ৪০ শতাংশ শেয়ারের মালিক চট্টগ্রামের এই ব্যবসায়ী গ্রুপ। ব্যাংকটির পরিচালক পদে আছেন এ এ এম জাকারিয়া। এর আগে তিনি এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে ৮ বছরের বেশি দায়িত্ব পালন করেন। সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের অনেক শেয়ার কিনেছে এস আলম গ্রুপ।
সম্প্রতি ব্যাংকটির ১৪ ভাগের বেশি শেয়ার চলে গেছে এই গ্রুপটির হাতে। এই ব্যাংকে ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন সাইফুল আলমের জামাতা বেলাল আহমেদ। আল আরাফা ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদের ভাই আবদুস সামাদ। সেই সঙ্গে এই ব্যাংকের স্পন্সর শেয়ার হোল্ডার হিসেবে রয়েছেন এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদ। এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকও রয়েছে এস আলম পরিবারের হাতে। সাইফুল আলমের বড় ভাই মোরশেদুল আলম এই ব্যাংকের পরিচালকের দায়িত্বে রয়েছেন।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ব্যাংকে পারিবারিক নিয়ন্ত্রণ কোনোভাবেই কাম্য নয়। তবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ আরোপ ছাড়াও সামাজিক মর্যাদা পাওয়ার জন্য তিনি এই কাজটি করেছেন। এ ছাড়া এর মাধ্যমে সরকারি মহলের নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধাও নেন। কিন্তু নিজেদের স্বার্থ পরিপন্থী সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়ায়। পরিবারের প্রভাব ব্যাংকিং খাতের সুশাসনের জন্য বড় ধরনের বাধা বলে মনে করেন দেশের অর্থনীতিবিদগণ।
অর্থনীতিবদগণ মনে করেন, ব্যাংকে পরিবারতন্ত্র একটি পুরনো ইস্যু। এই আধিপত্যের কারণে ব্যাংকে আপগ্রেড ও সংস্কারে উন্নতি হয় না। মোটকথা পরিবারতন্ত্রের কারণে ব্যাংকগুলোর অভ্যন্তরীণ সুশাসন ব্যাহত হয়। এছাড়া পরিচালকদের মেয়াদ ৯ বছর করার ফলে বিষয়টি আরো সহজ হয়েছে। এসব কারণে ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ সিদ্ধান্ত অধিপত্যের জোরেই হয়ে থাকে।