কাইছার হামিদ
প্রকাশ: ২০১৯-১০-০১ ১০:৪৮:৪১ || আপডেট: ২০১৯-১০-০১ ১০:৪৮:৫১
কাইছার হামিদ: পার্বত্য চট্টগ্রামে কাজু বাদাম চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। পার্বত্য অঞ্চলে স্বল্প পরিসরে বেসরকারি ভাবে কাজু বাদামের চাষ হচ্ছে। কোনো ধরনের প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তিগত সহায়তা ছাড়াই চলছে এ চাষবাদ। এ খাতের উন্নয়নে চাষীরা সরকারের কাছ থেকে কোন উৎসাহ, প্রণোদনা, সাহায্য ও সহযোগিতা পাননি এ পর্যন্ত। সম্ভাবনাময়ী খাতটি দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত।
স্বল্প পরিসরে কাজু বাদাম চাষ হলেও অপার সম্ভাবনা রয়েছে এ চাষে। সরকারী সহযোগিতা পেলে বেসরকারীভাবে উৎপাদন করে বিশ্বের কাজু বাদাম রফতানির শীর্ষ তালিকায় নাম লেখাতে পারে বাংলাদেশ। এমন অভিমত কৃষিবিদদের। একই সঙ্গে এ পেশায় প্রায় ৫ লাখ লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে। উৎপাদিত কাজু বাদামের ৭৫ শতাংশ রফতানির মাধ্যমে বাংলাদেশ বছরে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা রফতানি আয় করবে বলে মনে করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
সূত্রে প্রকাশ, বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলে(বান্দরবান, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি) এক লাখ হেক্টরের বেশি পতিত জমি রয়েছে। সরকারী সহযোগিতা পেলে ওই জমিতেই ন্যূনতম এক লাখ মেট্রিক টন উন্নতমানের কাজু বাদাম ফলন করা সম্ভব। সরকার এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা পেলে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে দেশেই সহজলভ্য হয়ে উঠবে তা।
পার্বত্য বান্দরবান জেলার আজিজনগর হর্টিকালচারের ডি.কৃষিবিদ সালাহ উদ্দিনের সাথে এ প্রসঙ্গে কথা হয়। তিনি জানান,
কাজু বাদাম চাষ সম্প্রসারণের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে আমাদের দেশে। ধান চাষের চেয়ে বাদাম চাষ সহজ ও পরিশ্রম কম হওয়ায় এবং কম দামে বীজ পাওয়ায় অনেক কৃষকেরা এর চাষ করে। আমাদের দেশে একটি অর্থকরী ফসল হিসেবে কাজু বাদাম চাষ হতে পারে সমৃদ্ধির নতুন দিগন্ত।
তিনি আরো বলেন, পাহাড়ী ঢালুতে এ চাষ সহজেই করা যায়। জুমভিত্তিক চাষাবাদ নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে এসে পাহাড়িরা এ চাষ করতে পারে। প্রচুর লাভবান হবে চাষীরা। কারণ আন্তর্জাতিক বাজারে কাজু বাদামের ব্যাপক চাহিদা বাড়ছে। সরকারী নির্দেশনানুযায়ী আমরা চাষীদের কাজু বাদাম চাষে উৎসাহ, অনুপ্রেরণা যোগায়। পাশাপাশি প্রশিক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণে সহযোগিতা করে যাচ্ছি।
গুগুলে চার্জ করে জানা যায়, বর্তমান বিশ্বে কাজু বাদাম রফতানির শীর্ষে অবস্থান করছে ভিয়েতনাম। পরবর্তী অবস্থানে রয়েছে ভারত। সম্প্রতি ভিয়েতনাম ভারতকে টপকে শীর্ষ অবস্থান দখল করে নিয়েছে। দেশটি আশা করছে, বছর শেষে প্রায় ৩ লাখ টন কাজু বাদাম বিক্রি করে ২.৭ বিনিয়ন ডলার (১৬ হাজার কোটি টাকা) রফতানি আয় করবে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কাজু বাদামের সবচেয়ে বড় আমদানিকারক এবং ক্রেতা। এছাড়াও প্রায় সব উন্নত দেশই কাজু বাদাম আমদানি করে। আর ভিয়েতনাম হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কাজু বাদাম উৎপাদনকারী এবং রফতানিকারক দেশ। দেশটি মাত্র ১১ বছর আগে কাজু বাদামের চাষ শুরু করে। এখন পৃথিবীর এক নম্বর রফতানিকারক দেশে পরিণত হয়েছে। আর এ সফলতার পেছনে রয়েছে সরকারের সরাসরি সহযোগিতা।
পার্বত্য অঞ্চলেই উন্নতমানের কাজু বাদাম চাষ করা সম্ভব। এখানকার মাটি ও আবহওয়া বাদাম ফলনের জন্য খুবই উপযুক্ত। কারণ কাজু বাদাম একটু উঁচু জায়গায় চাষ করতে হয়। কাজু বাদাম চাষে তেমন শ্রম দিতে হয় না। প্রতি হেক্টর কাজু বাদামের বাগান থেকে ১.৫ টন থেকে ১.৮ টন কাজু বাদাম পাওয়া যায়। যার বাজার মূল্য ১ লাখ থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত। কাজু বাদাম চাষে বেশ কিছু নিয়ম কানুন মেনে চলতে হয়। এসব নিয়ম কানুনের মধ্যে রয়েছে উন্নতজাতের বাদামের চারা লাগানো, আগাছা পরিষ্কার করা, সঠিক সময়ে কাজু বাদাম সংগ্রহ করা, সঠিকভাবে শুকানো এবং সঠিকভাবে কাজু বাদাম সংরক্ষণ করা, গাছকে রোগ বালাই থেকে রক্ষা করা।
আমাদের দেশে একটি অর্থকরী ফসল হিসেবে কাজু বাদাম চাষ হতে পারে সমৃদ্ধির নতুন দিগন্ত। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি, উৎপাদিত পণ্য বিক্রির বাজার তৈরি, লাভজনক ফল-ফসলের ব্যাপক ফলন, প্রাচীন বদ্ধমূল ধারণা থেকে বেরিয়ে এসে আধুনিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ হওয়ায় ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে পাহাড়ি এলাকায়। প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলো কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও যেখানে পরিবহন ব্যবস্থা তুলনামূলক সহজ হয়েছে, সেখানে বাড়ছে আম, কফি, কাজু বাদামসহ বিভিন্ন অর্থকরী ফসলের আবাদ।
আমদানি নির্ভর এ ফলটি নতুন স্বপ্ন দেখাচ্ছে পাহাড়ে। বাধা শুধু সংরক্ষণে সমস্যা আর পোস্ট প্রসেসিং বা উৎপাদনের পর খাওয়ার উপযোগী করে প্রস্তুতকরণে। উৎপাদন ও চাষাবাদ যে হারে বাড়ছে তাতে খুব শিগগিরই পাহাড়ে “কাজু ইন্ডাস্ট্রি” গড়ে তোলা সম্ভব বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।