চট্টগ্রাম, , শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

কাইছার হামিদ

আজ বিশ্ব শিক্ষক দিবস

প্রকাশ: ২০১৯-১০-০৫ ১০:২৭:৩৭ || আপডেট: ২০১৯-১০-০৫ ১০:২৭:৪৫

কাইছার হামিদ: বাড়িতে অ, আ, ক,খ বা ইংরাজি বর্ণমালা, ১ থেকে ১০, ছড়া, রং চেনা, পশু পাখিদের ছবি দেখে চিনতে শেখা, গল্প; আরও কত কি শিখি বাবা মায়ের কাছ থেকে। হামাগুড়ি বয়স থেকেই হাঁটতে শেখা, কথা বলতে শেখা সবই তাদের কাছেই। এক্কেবারে কচি বয়স থেকে আমাদের শিক্ষার হাতেখড়ি তাদের হাত ধরেই। আমাদের বাবা ও মা-ই আমাদের প্রথম ও পরম গুরু। জীবনযাপনের অন্যতম শিক্ষক।

আজ বিশ্ব শিক্ষক দিবস। ১৯৯৫ সাল থেকে প্রতি বছর ৫ সেপ্টেম্বর তারিখ বিশ্ব ব্যাপী পালিত হয়ে থাকে বিশ্ব শিক্ষক দিবস। এই দিবসটি শিক্ষকদের অবদানকে স্মরণ করার জন্য পালন করা হয়।

ইউনেস্কোর মতে, বিশ্ব শিক্ষক দিবস শিক্ষা ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে শিক্ষকদের অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ পালন করা হয়।
বিশ্বের ১০০টি দেশে এই দিবসটি পালিত হয়ে থাকে। এই দিবসটি পালনে এডুকেশন ইন্টারন্যাশনাল (Education International – EI) ও তার সহযোগী ৪০১টি সদস্য সংগঠন মূল ভূমিকা রাখে। দিবসটি উপলক্ষে ইআই প্রতি বছর একটি প্রতিপাদ্য বিষয় নির্ধারণ করে থাকে যা জনসচেতনতা বৃদ্ধির সাথে সাথে শিক্ষকতা পেশার অবদানকেও স্মরণ করিয়ে দেয়।

দিবসটি পালনের জন্য সরকারী-বেসরকারী পর্যায়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে দিবসটি পালন করবে।

ভারতের মহান শিক্ষক সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণ’র জন্মদিনকে (৫ সেপ্টেম্বর) শিক্ষক দিবস হিসেবে পালন করা হয়। তিনি ছিলেন স্বাধীন ভারতের প্রথম উপরাষ্ট্রপতি এবং দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি ।আজ ৫ সেপ্টেম্বর, ভারতে শিক্ষক দিবসরূপে পালিত হচ্ছে। 

একজন আদর্শ শিক্ষক ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ [৫ সেপ্টেম্বর, ১৮৮৮ – ১৭ এপ্রিল,১৯৭৫] আজকের দিনে তামিলনাডুর তিরুট্টানিতে এক দরিদ্র ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।

একাধারে রাজনীতিবিদ, দার্শনিক ও অধ্যাপক এই শান্ত মানুষটি ছাত্রজীবনে অতি মেধাবী ছিলেন। জীবনে কোন পরীক্ষায় দ্বিতীয় হননি। বিভিন্ন বৃত্তির মাধ্যমে তার ছাত্র জীবন এগিয়ে চলে। ১৯০৫ সালে তিনি মাদ্রাজ খ্রিস্টান কলেজ থেকে দর্শনে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। তার বিষয়টি ছিল ‘বেদান্ত দর্শনের বিমূর্ত পূর্বকল্পনা’(The Ethics of the Vedanta and its Metaphysical Presuppositions)।

বিশ্বের দরবারে তিনি অতি জনপ্রিয় দার্শনিক অধ্যাপক হিসাবেও পরিচিত ছিলেন। ১৯৩১ সালে তাঁকে British knighthood-এ সম্মানিত করা হয়। ১৯৫৪তে ভারতরত্ন উপাধি পান।

প্রথম জীবনে তিনি মাইসোর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপনা করেন (১৯১৮)। এসময় তিনি বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য পত্রিকায় লিখতেন। সে সময়েই তিনি লেখেন তাঁর প্রথম গ্রন্থ ‘The Philosophy of Rabindranath Tagore’। দ্বিতীয় গ্রন্থ ‘The Reign of Religion in Contemporary Philosophy’প্রকাশিত হয় ১৯২০সালে। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়েও অধ্যাপনা করেন। দেশ–বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি বারবার অধ্যাপনার জন্য আমন্ত্রিত হয়েছেন।

রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর তার গুণমুগ্ধ ছাত্র ও বন্ধুরা তাঁর জন্মদিন পালন করতে চাইলে তিনি বলেন ‘জন্মদিনের পরিবর্তে ৫ সেপ্টেম্বর যদি শিক্ষক দিবস উদ্‌যাপিত হয় তবে আমি বিশেষরূপে অনুগ্রহ লাভ করবো।’ তাই ৫ সেপ্টেম্বর শিক্ষক দিবস।

ধর্মতত্ত্ববিদ ও প্রচারক উইলিয়াম এলারারি চ্যানিং বলেছেন, একটি শিশুকে শিক্ষিত করে তোলা একটি বড় কাজ- এবং সঠিকভাবে বলতে গেলে, একটি রাষ্ট্র শাসনের চেয়েও বড় কাজ।

সাংবাদিক এ্যান্ডি রনি বলেছেন, বেশিরভাগ লোককে বড়জোর ৫ থেকে ৬ জনের বেশি স্মরণ করে না, কিন্তু একজন শিক্ষককে হাজার হাজার মানুষ আজীবন স্মরণ করে।

শিক্ষকদের নিয়ে এমন অনুপ্রেরণীয় উদ্ধৃতি অনেক রয়েছে। মোট কথা, শিক্ষকতা একটি মহান পেশা।

আমাদের শিক্ষানবিশী চলতেই থাকে। জীবনভর। আমরা প্রতিদিন শিখি। যাপন ও জীবনে প্রায় প্রতিদিনের অভিজ্ঞতায় কত কিছু যে শিখতে বা শিখে নিতে বাধ্য করে। আমরা ঠেকে শিখি। ঠকে শিখি। ভুল করি বিস্তর। আবারও ঠিক করে ফেলি। পরবর্তী অভিজ্ঞতালব্ধ জীবনে ছাত্রাবস্থায় শেখা অনেক ভাল জিনিস কাজে লাগে। অনেক কিছু কিন্তু আবার লাগেও না। আমাদের ছাত্রাবস্থায় সেই শেখাটা কিন্তু ঠিক ছিল—কিন্তু নানা প্রতিকুলতা ও চাপের কাছে হয়তো সে আদর্শের কাছে নতিস্বীকার করতে হয়েছে। দেওয়ালে কখনও পিঠ ঠেকে গেলে এও মনে হয়েছে, ধ্যুস জীবনে কিছুই শেখা হল না আজও।

প্রিয় শিক্ষক মা-বাবা। তাঁদের স্নেহে, প্রশ্রয়ে, শিক্ষায়, সহমর্মিতায়, মরমী সমালোচনায়, চরিত্র গঠনের দৃঢ় শিক্ষায় আমরা ঋদ্ধ হতে থাকি ক্রমশ। আমাদের প্রতিটি আচরণের বহির্প্রকাশ ঠিক কী হবে, শিশুবয়স থেকেই উচিত-অনুচিতের বোধ আমরা শিখতে থাকি তাদের কাছেই।

আমাদের নিজস্ব পছন্দ-অপছন্দ, আমাদের দায়বদ্ধতা বিশ্বাস, অন্যকে মাণ্যতা দেওয়া, গুরুজনকে সম্মান জানানো, নিজেদের পারিবারিক রীতিকে মর্যাদা দেওয়া, রক্ষণশীলতাকে টিকিয়ে রাখা এই সমস্ত কিছুই শিখি বাড়ির গুরুজন অভিভাবকদের থেকেই।

আমাদের আদর্শ, আমাদের চরিত্র গঠন সব কিছুর প্রাপ্তি তাঁদের থেকেই। শিক্ষক দিবসের প্রাক্কালে বাবা-মা-কেই অন্যতম প্রারম্ভিক শিক্ষক তথা গুরু হিসেবে স্মরণ করে প্রণতি জানাতেই পারি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *