চট্টগ্রাম, , বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪

শংকর চৌধুরী খাগড়াছড়ি জেলা প্রতিনিধি

শান্তিচুক্তি পার্বত্যাঞ্চলে শান্তি ও উন্নয়নের দ্বার উন্মোচিত করেছে : কংজরী চৌধুরী

প্রকাশ: ২০১৯-১১-২৯ ১৯:৫৩:৩৫ || আপডেট: ২০১৯-১১-২৯ ১৯:৫৩:৪২

শংকর চৌধুরী,খাগড়াছড়ি :

আগামী খাগড়াছড়িতে ০২ ডিসেম্বর ঐতিহাসিক পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি (শান্তি চুক্তির) ২২ বছর পূর্তি উদযাপন উপলক্ষে প্রেস ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার ২৯ নভেম্বর বিকেলে পরিষদের সম্মেলন কক্ষে এ ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে চলা সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতির অবসানের জন্য তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার এবং জনসংহতি সমিতির মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। ১৯৯৬ সালে সুদীর্ঘ ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ তথা শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতা গ্রহনের পর পার্বত্য সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে শক্তিশালী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। তিনি এটিকে রাজনৈতিক সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রথম মেয়াদকালে ১৯৯৭ সালের ২রা ডিসেম্বর সরকার এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (পিসিজেএসএস) এর মধ্যে কোনো তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতা ছাড়াই এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

তিনি বলেন, এই চুক্তি স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে তিন পার্বত্য জেলায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের অবসান ঘটে। জনগণ শান্তি চুক্তি পূর্ববর্তী সেই রক্তাক্ত সংঘাতময় দিনগুলিতে ফিরে যেতে চায় না। তাই পার্বত্য জনজীবনে, জাতি-ধর্ম-বর্ণ, নির্বিশেষে সকল মানুষের কাছে ঐতিহাসিক পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির গুরুত্ব অনেক বেশি। এর মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামে বিবাদমান দুই দশকের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের অবসান হয় এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে উন্নয়নের দ্বার উন্মোচিত করেছে। সে প্রক্রিয়া এখনো চলমান।


খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ প্রতিবছরের ন্যায় এবছরও গুরুত্ব সহকারে দিনটিকে পালন করতে যাচ্ছে। দীর্ঘ দুই দশকের অধিক সময় ধরে চলা পাহাড়ের সশস্ত্র সংঘাত অবসানের লক্ষে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর স্বাক্ষরিত হওয়া ঐতিহাসিক পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরের বাইশ বর্ষপূর্তি।

এবারের গৃহিত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, ০২ ডিসেম্বর সোমবার সকাল ৮টায় পরিষদ প্রাঙ্গণে ঐতিহাসিক পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির বাইশ বছর পূর্তিতে ২২টি স¥ারক বৃক্ষরোপনের মধ্য দিয়ে শুরু হবে। সকাল সাড়ে ৮টায় বর্ণাঢ্য র‌্যালি খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ প্রাঙ্গন হতে শুরু হয়ে শাপলা চত্ত্বর হয়ে শহরের পৌর টাউন হলে গিয়ে শেষ হবে। র‌্যালি শেষে “শান্তিচুক্তি একটি ঐতিহাসিক অর্জন” হিসেবে উপলব্ধি করতঃ টাউন হল চত্ত্বরে স্থাপিত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সহ জাতীয় চার নেতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পন এবং বর্ণিল ডিসপ্লে প্রদর্শন। সকাল ১০টায় টাউন হল প্রাঙ্গণে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।

আর বিকেল ৩টায় খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ ও খাগড়াছড়ি রিজিয়ন যৌথ উদ্যোগে ঐতিহাসিক খাগড়াছড়ি স্টেডিয়ামে জমকালো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আয়োজিত হবে “সস্প্রীতি কনসার্ট”। যেখানে থাকবে স্বনামধন্য ব্যান্ড দল এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম ও স্থানীয় জনপ্রিয় শিল্পীদের মনমুগ্ধকর পরিবেশনা। স্টেডিয়ামে বাড়তি আকর্ষণ হিসেবে থাকবে সন্ধ্যায় মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্জলন এবং আকাশ রাঙানো আতসবাজী ও ফানুস উড়ানো। উক্ত অনুষ্ঠান উপভোগ করার জন্য সকলের জন্য উন্মুক্ত রাখা হবে। পাহাড়ি-বাঙালির মধ্যে আস্থা-বিশ্বাস ও সকলের মধ্যে সম্প্রীতির বন্ধন গড়ে তুলতেই এ ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান, পরিষদ চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী।

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি (শান্তিচুক্তির) আগে পরে শান্তি প্রক্রিয়ায় বিশেষ অবদানের স¦ীকৃতি হিসেবে সন্মাননা প্রদান করা হবে। স্বীকৃতি প্রাপ্ত সম্মানিত ব্যক্তিদের কনর্সাট চলকালীন সময় সম্মাননা প্রদান করা হবে।

২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২২ বছর পূর্তি উপলক্ষে সম্প্রীতি কনসার্ট-২০১৯ এর সম্বলিত পোস্টার খাগড়াছড়ি শহরের বিভিন্ন জায়গায় লাগানো শুরু হয়েছে।

এছাড়া শহর জুড়ে মাইকিংসহ বিভিন্ন স্থানে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ব্যানার, ফেস্টুুন ও আলোকসজ্জার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে । ঐতিহাসিক পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২২ বছর পূর্তি নির্বিঘেœ সম্পাদনের জন্য পুরো জেলা জুরে সর্ব্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে বলেও জানা গেছে।


গৃৃহিত এ অনুষ্ঠান মালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার সদয় সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন জনাব কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা,এমপি, মাননীয় চেয়ারম্যান (প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদা সম্পন্ন),ভারত প্রত্যাগত উপজাতীয় শরনার্থী প্রত্যাবাসন ও পুনর্বাসন এবং অভ্যন্তরীণ উদ্ভাস্তু নির্দিষ্টকরণ ও পুনর্বাসন স¤পর্কিত টাস্কফোর্স,খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা।

এছাড়াও, খাগড়াছড়ি রিজিয়নের ব্যবস্থাপনায় এ প্রথমবারের মত খাগড়াছড়ি টাউন হল প্রাঙ্গণে ০১ হতে ০৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি (শান্তিচুক্তি) উদযাপনের অংশ হিসেবে মেলার আয়োজন করা হয়েছে। মেলার প্রথম দিন বাচ্চাদের জন্য চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা ও মেলা আকর্ষনীয় করে তোলার জন্য স্থানীয় বিভিন্ন সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী এবং বিভিন্ন সম্প্রদায়ের নিজস্ব ঐতিহ্যবাহী নৃত্য পরিবেশনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। উল্লিখিত মেলায় সরকারি বিভিন্ন বিভাগ-দপ্তর মেলার ষ্টলে স্ব স্ব বিভাগের পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পরবর্তী অগ্রগতি ও সচিত্র উন্নয়ন কার্যক্রম প্রদর্শন করবে। মেলা উল্লিখিত প্রতিদিন বিকাল ৪টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত চলবে।

রিজিয়ন কর্তৃক পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির বাইশ বছর পূর্তি উদযাপনে জেলা ও জোন পর্যায়ে উদযাপন করা হবে। এ ব্যাপারে জোন আওতাধীন এলাকায় ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা, ফুটবল প্রীতিম্যাচসহ অন্যান্য বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে অতীতের মতো এখনও নিরলসভাবে কাজ করে চলেছেন। সরকারের আন্তরিক প্রয়াসের কারণে তিন পার্বত্য জেলার জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে ব্যাপক কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। পাশাপাশি সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় দেশি-বিদেশি এনজিও কাজ করে যাচ্ছে পার্বত্যবাসীর ভাগ্যোন্নয়নে।

এমতাবস্থায়, পাহাড়ে শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার্থে সর্বোপরি পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করার লক্ষে সকলের ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারকে সার্বিকভাবে সহযোগিতা প্রদান করব এ হোক আমাদের অঙ্গীকার। খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ ও খাগড়াছড়ি রিজিয়ন কর্তৃক উল্লিখিত গৃহিত কর্মসূচি এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পরবর্তী অগ্রগতি ও বর্তমান সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম প্রিন্ট/ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রচারের জন্য জেলায় কর্মরত সকল সংবাদকর্মীদের আন্তরিক সহযোগীতা কামনা করা হয় প্রেস ব্রিফিং থেকে।

এসময়, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির বাইশ বছর পূর্তি উদযাপনে গঠিত প্রচার উপ-কমিটির আহবায়ক ও সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো: শানে আলম, পরিষদ সদস্য খগেশ^র ত্রিপুরা ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ও পাজেপ সদস্য জুয়েল চাকমা এবং জেলায় কর্মরত প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *