চট্টগ্রাম, , বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪

admin

শ্রম বেচাকেনার হাটে শ্রমিকের ভিড়

প্রকাশ: ২০১৯-১২-০২ ০১:০৬:০৮ || আপডেট: ২০১৯-১২-০২ ০১:০৬:১৫

আব্বাস হোসাইন আফতাব, রাঙ্গুনিয়া :

এক পাশে প্রচুর মানুষের জটলা। সবার হাতে ব্যাগ। নিজেদের শ্রম বিক্রি করতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসেন শ্রমিকরা। কাজ পেলে খুশি, না পেলে মলিন মুখে অপেক্ষা করতে হয় পরদিন অন্য কোনো হাটে।


রাঙ্গুনিয়ার রোয়াজারহাটে সম্প্রতি গেলে প্রচুর শ্রমিকের ভিড় দেখা গেছে। উপজেলার প্রতিটি সাপ্তাহিক হাটে এমনই চিত্র দেখা যাবে ধান কাটার এই মৌসুমে।


জমিতে পাকা আমন ধান । ধান কাটার মৌসুম শুরু। স্থানীয় চাষীরা কাজের জন্য তাদের নির্দিষ্ট দামে কিনে নিয়ে যান।


কথা হয় ওই হাটে শ্রমিক খোরশেদ আলম, মানিক মিয়া, মো. রুবেল , অয়ন দাশ ও দূর্লভ দাশের সঙ্গে। তাঁরা বলেন, “ প্রতিদিন কাজের নিশ্চয়তা নেই। কোনোদিন কাজ মেলে আবার কোনো দিন মেলে না। ”
নেত্রকোনার জেলার পূর্বধলা উপজেলা থেকে কয়েকদিন আগে এসেছেন খোরশেদ আলম (৫০)। তাঁর পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৮ জন। তিনি পদুয়া ইউনিয়নে এক গৃহস্থের বাড়িতে তিনদিনের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন।

নেত্রকোনা জেলার দূর্গাপুর উপজেলা থেকে এসেছেন মো. রুবেল (৪৩)। তিনি বলেন , বাবা-মায়ের অভাবের সংসারে তেমন বেশি পড়ালেখা করতে পারেননি। তাই হাটে শ্রম বিক্রি করতে হয় তাঁকে। ধান কাটার কাজে এখন দৈনিক মজুরী চলছে ৪০০ টাকা। কিন্তু বাজারে পিঁয়াজসহ নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে, কিন্তু মজুরি বাড়েনি। দৈনিক ৪০০ টাকা আয় দিয়ে সংসার চালানো কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে। ”


উপজেলা সদরের ইছাখালী থেকে হাটে শ্রমিক নিতে এসেছেন কবির আহমদ মেম্বার। তিনি বলেন, নেত্রকোনার এক লোক দৈনিক ৪০০ টাকা মজুরী হিসেবে ঠিক করেছেন।৩ কানি জমিতে ধান হয়েছে। তাই তার একজন শ্রমিক চলবে।


শিলক ইউনিয়ন থেকে সৈয়দুল আলম নামে এক ব্যক্তি শ্রমিক ঠিক করতে এসেছেন। তাঁর জমি রয়েছে ৩০ কানি। তিনি বলেন, “ ধান চাষাবাদে তেমন লাভ নেই। শ্রমিকের মজুরী , সারসহ কৃষি উপকরণের দাম বাড়তি। কিন্তু ধানের দাম তো তেমন নেই। ”


এই হাটে খোরশেদ, মানিক, রুবেল , অয়ন ও দূর্লভ নয়, তাঁদের মতো শত শত শ্রমিক জড়ো হন এ ‘মানুষ কেনা বেচার হাটে। নিদিষ্ট দামে দিনের কোনো এক সময় বিক্রি হন তাঁরা।


স্থানীয়রা বলেন, চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কের পাশেই রাঙ্গুনিয়ার রোয়াজারহাট ইছামতি নদীর পাড়ে সপ্তাহে দুইদিন শুক্র ও সোমবার বসে। দেশের বিভিন্ন জেলার বেকার ও দিনমজুররা এ হাটে শ্রম বিক্রি করতে আসছেন। টাকার বিনিময়ে শ্রম বিক্রি করছেন এসব অভাবি মানুষ। কৃষিকাজসহ গৃহস্থালি কাজেও শ্রম দিচ্ছেন এসব দিনমজুর। প্রায় দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে গড়ে উঠেছে রোয়াজারহাটে এই শ্রম বিক্রির হাট। যা দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত সচল থাকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *