চট্টগ্রাম, , বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪

কাইছার হামিদ

বিজয়ের গল্প গাথা-৪

প্রকাশ: ২০১৯-১২-০৪ ০৭:২৭:০৭ || আপডেট: ২০১৯-১২-০৪ ০৭:২৭:১৬

কাইছার হামিদ- ১৯৭১ সালের ৪ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধ এক ভিন্ন মাত্রা পেতে শুরু করে। বর্ষা, শরত আর হেমন্ত পেরিয়ে শুরু হয় শীতের মৌসুম। গ্রাম-বাংলাজুড়ে শীত নামে। কিন্তু শীত নেই মুক্তিকামী বীর বাঙালির। হানাদারবাহিনীকে পরাজিত করতে দেহের রক্ত যেন টগবগিয়ে ফুটছে। একাত্তরের রক্তঝরা এই দিনে চারিদিকে বীর বাঙালির বিজয়, আর পাকহানাদার বাহিনীর পরাজয়ের খবর।

দেশের বিভিন্ন স্থানে পর্যুদস্ত হতে থাকে উর্দুভাষী হানাদাররা। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল মুক্ত হতে থাকে। সেই খবর ছড়িয়ে পড়ে আকাশে, বাতাসে- সর্বত্র। সেই বিজয়ের বার্তা যুদ্ধরত মুক্তিযোদ্ধাদের করে তোলে আরো দুর্বার, অপ্রতিরোধ্য।

১৯৭১-এর এদিন থেকেই শুরু হয়ে যায় মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বাত্মক যুদ্ধ। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে তারা মরণপণ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। সঙ্গে রয়েছে ভারতীয় মিত্র বাহিনী। মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী চারদিক দিয়ে সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ে। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করতে থাকে। 

এই সময়ে আন্তর্জাতিক রাজনীতি অঙ্গনে বাংলাদেশের জন্য সময়টুকু ছিল অস্থির আর উদ্বেগের। এই দিনে জাতিসংঘে চলে চরম উত্তেজনা। কারণ পাকিস্তানের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি সিনিয়র জর্জ বুশ জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব উত্থাপন করেন। এই যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবের উদ্দেশ্য ছিল মুক্তিযুদ্ধকে পাক-ভারতের মধ্যেকার যুদ্ধ হিসেবে সবার সামনে উপস্থাপন করা। যুক্তরাষ্ট জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে দাবি করে যে, ‘এই মূহুর্তে ভারত ও পাকিস্তান নিজ নিজ সীমান্তের ভেতর সৈন্য প্রত্যাহার করে নিতে হবে।’উল্লেখ্য, জাতিসংঘে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব উত্থাপন করার জন্য, মুক্তিযুদ্ধকে পাক-ভারতের মধ্যেকার যুদ্ধ হিসেবে জাতিসংঘে উপস্থাপন করার জন্য পাকিস্তান বিমানবাহিনী ৭১ এর ৩ ডিসেম্বর ভারতের বেশ কয়েকটি জায়গায় বিমানহামলা চালায় এবং এরই পরিপ্রেক্ষিতে একই তারিখে রাতের বেলা ভারত পাকিস্তানের উপর হামলা চালায়।

সোভিয়েত ইউনিয়নের ভেটো প্রদানের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নিরাপত্তা পরিষদে ভেস্তে যায়। পোল্যান্ডও এই প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেয়। আর ফ্রান্স ও ইংল্যান্ডের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ভোটদানে বিরত থাকা। এই প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট হেরে যাওয়ায়, বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভ সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়।এরপর মুক্তিযোদ্ধা ও ভারতীয় বাহিনীর যৌথ তীব্র আক্রমণের মুখে বাংলাদেশের প্রতিটি জায়গা থেকে পালানোর পথ খুঁজতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী।

এই যখন উৎকণ্ঠাময় অবস্থায় প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম এবং প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ লিখিত এক পত্রে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর কাছে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদানের আহবান জানান।

এ সময়ে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী শক্তি জামাতে ইসলামীর আমীর আবুল আলা মওদুদী প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানকে জানান যে, ‘প্রতিটি দেশপ্রেমিক মুসলমান প্রেসিডেন্টের সাথে রয়েছে।’

এই দিনে লক্ষীপুর হানাদার মুক্ত হয়। উল্লেখ্য, যুদ্ধের পুরোটা সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসর রাজাকার, আল-বদর, আশ-শামস বাহিনীর হত্যা, নির্যাতন, ধর্ষনের ঘটনায় লক্ষীপুর ছিল বিপর্যস্ত।

একাত্তরের এই দিনে ৩নং সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধারা শমশেরনগর বিমান বন্দর এবং আখাউড়া রেল স্টেশন দখল করেন। ৮নং সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধারা দখল করেন মেহেরপুর। এছাড়া ১১নং সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধারা ব্যাপক আক্রমণ চালিয়ে কামালপুর নিজেদের আয়ত্তে আনেন।

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ গ্রন্থ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *