কাইছার হামিদ
প্রকাশ: ২০১৯-১২-০৯ ১০:৫০:৫৯ || আপডেট: ২০১৯-১২-০৯ ১০:৫১:০৭
কাইছার হামিদ: ৯ ডিসেম্বর, ১৯৭১ এদিনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সপ্তম নৌবহর বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা হেনরি কিসিঞ্জারের নির্দেশে নৌবহর তার যুদ্ধযাত্রা শুরু করে। ইয়াহিয়া খান ভেবেছিল, এতে মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল ভেঙ্গে যাবে। ঘটনার প্রতিক্রিয়া হয় উল্টো। মুক্তিযোদ্ধারা আরো বিপুল উদ্যমে ঝাঁপিয়ে পড়েন দেশমাতৃকাকে মুক্তি করার যুদ্ধে। অন্যদিকে, সোভিয়েত ইউনিয়ন যুক্তরাষ্ট্রের সপ্তম নৌবহর প্রতিরোধের জন্য নিজেদের যুদ্ধজাহাজ পাঠানোর হুমকি দিলে যুক্তরাষ্ট্র তাদের সিদ্ধান্ত স্থগিত করে।
একাত্তরের আজকের এই দিনে মুক্ত হয় কুমিল্লার দাউদকান্দি, গাইবান্ধা, গাজীপুরের শ্রীপুর, ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ ও নেত্রকোনা। মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় সেনাবাহিনী চারপাশ থেকে রাজধানী ঢাকাকে ঘিরে ফেলেছিল। প্রায় প্রতিদিনই যৌথবাহিনীর বিমান হামলায় পাকবাহিনীর ব্যাপক ক্ষতিসাধন হচ্ছিল।
মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর সামনে শুধু ঢাকা দখল লড়াই। সবদিকে দিয়ে মিত্রবাহিনী ঢাকার দিকে অগ্রসর হলো। বাইরে থেকে হানাদার বাহিনীর প্রবেশ রুদ্ধ হয়ে যায়।মিত্রবাহিনী একে একে আশুগঞ্জ, দাউদকান্দি, চাঁদপুর ময়মনসিংহ দখলে নিয়ে নেয়।
একাত্তরের এদিন সকালে হানাদার বাহিনীর ইস্টার্ন কমান্ডের সদর দফতর ঢাকা থেকে প্রথমবারের মতো জেনারেল নিয়াজী স্বীকার করেন, পরিস্থিতি নিদারুণ সংকটপূর্ণ। আকাশে শত্রু প্রভুত্বের কারণে পুনর্বিন্যাসকরণ সম্ভব নয় বলে একটি সংকেতবাণীও পাঠানো হয় রাওয়ালপিন্ডিতে। দ্রুত মুক্ত হতে থাকে একের পর এক জায়গা। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধকে নস্যাৎ করে দেয়ার জন্য পাকিস্তানের সহযোগী যুক্তরাষ্ট্রের প্রচেষ্টা থেমে থাকেনি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এ সময় পাকিস্তানকে সহযোগিতা করার পদক্ষেপ নেয়।
আজকের এই দিনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নিক্সন তার সপ্তম নৌবহরকে বঙ্গোপসাগরের দিকে রওনা হতে আদেশ দেন। উদ্দেশ্য, মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল ভেঙে দেয়া। কিন্তু উদ্দেশ্য সফল হয়নি। কারণ বীর সন্তানদের মনোবল ভেঙে দেয়া মোটেও সহজ কাজ নয়। মুক্তিযুদ্ধের এই দিনে যে জায়গাগুলো শত্র“মুক্ত হয়, তাদের অন্যতম হলো দাউদকান্দি, গাইবান্ধা, কপিলমুনি, ত্রিশাল, নকলা, ঈশ্বরগঞ্জ, নেত্রকোণা, পাইকগাছা, কুমারখালী, শ্রীপুর, অভয়নগর, পূর্বধলা, চট্টগ্রামের নাজিরহাটসহ বিভিন্ন এলাকা। দাউদকান্দি শত্র“মুক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে মূলত মেঘনার সম্পূর্ণ পূর্বাঞ্চল মুক্তিবাহিনীর দখলে আসে।
এর আগে কুমিল্লা মুক্ত হওয়ার খবর চারিদিকে ছড়িয়ে পড়লে দাউদকান্দির মুক্তিযোদ্ধারা দ্বিগুণ উৎসাহ নিয়ে হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। মুক্তিবাহিনীর হামলায় টিকতে না পেরে পাক হানাদার বাহিনী ঢাকার দিকে পালিয়ে যায়।
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ