চট্টগ্রাম, , বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪

কাইছার হামিদ

২০১৯ সালে বিব্রত ছিল প্রশাসন

প্রকাশ: ২০২০-০১-০১ ১০:৩৬:১৫ || আপডেট: ২০২০-০১-০১ ১০:৩৬:২৩

কাইছার হামিদ: নানা সমালোচনা আর কেলেঙ্কারিতে বিব্রতকর ছিল ২০১৯ সালে প্রশাসন। বালিশ কেলেঙ্কারিসহ নানা দুর্নীতিও গণমাধ্যমে উঠে আসে এ বছরেই। মাঠপর্যায়ে কর্মকর্তাদের নারী কেলেঙ্কারিসহ নানা নেতিবাচক ঘটনায় সারা বছর প্রশাসনে ছিল অস্বস্তি।

ডিসির আপত্তিকর ভিডিও ভাইরাল : গত আগস্ট মাসের শেষের দিকে জামালপুরের তৎকালীন জেলা প্রশাসক (ডিসি) আহমেদ কবীরের একটি আপত্তিকর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। ভিডিওটিতে ডিসি আহমেদ কবীরের সাথে তার অফিসের এক নারীকর্মীকে অন্তরঙ্গ অবস্থায় দেখা যায়। এতে সমালোচনার মুখে বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে প্রশাসন। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে ২৫ আগস্ট আহমেদ কবীরকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করে আদেশ জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। ওই দিনই মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের যুগ্মসচিব (জেলা ও মাঠ প্রশাসন অধিশাখা) মুশফিকুর রহমানকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটি ২২ সেপ্টেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন জমা দেয়। পরে ২৫ সেপ্টেম্বর আহমেদ কবীরকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

ইউএনওর নারী কেলেঙ্কারি : মাঠ প্রশাসনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আসিফ ইমতিয়াজের নারী কেলেঙ্কারির ঘটনাটি সামনে আসে। বছরের মাঝামাঝি সুনামগঞ্জের হাওর উপজেলা তাহিরপুরে যোগদান করা বিতর্কিত ইউএনও আসিফ ইমতিয়াজকে নিয়ে বিব্রত হয় প্রশাসন। চট্টগ্রামে কাজ করার সময় জেলা প্রশাসকের কাছে আসিফ ইমতিয়াজের বিরুদ্ধে বিচার চান তার বান্ধবী দাবি করা এক তরুণী।
পরে সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে উপজেলা ইউএনও হিসেবে তাকে বদলি করা হয়। তদন্তে ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় ৫ সেপ্টেম্বর তাকে ইউএনওর পদ থেকেও সরিয়ে দেয়া হয়। বর্তমানে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা চলমান রয়েছে।

ডিসির বিরুদ্ধে বান্ধবীর ভিডিও বার্তা : গত অক্টোবর মাসে এক নারীর সাথে দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মাহমুদুল আলমের অনৈতিক সম্পর্কে জড়ানোর অভিযোগ ওঠে। ওই সময় এক ভিডিও বার্তায় ডিসির সাথে নিজের অনৈতিক সম্পর্কের তথ্য ফাঁস করেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান একজন নারী। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে ভিডিওটি। ভিডিও বার্তায় ওই নারী জানান, নানা প্রলোভন দেখিয়ে তার সাথে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলেন ডিসি মাহমুদুল আলম। এতে তার সংসারও ভেঙে যায়।

ফেরি আটকে তিতাসের মৃত্যু : গত ২৫ জুলাই রাতে একজন ভিআইপির জন্য প্রায় ৩ ঘণ্টা অপেক্ষায় থাকায় আটকে পড়া অ্যাম্বুলেন্সে কিশোর তিতাসের মৃত্যুর অভিযোগ ওঠে। মাদারীপুরের জেলা প্রশাসকের বার্তার পরিপ্রেক্ষিতে ওই ভিআইপির (সরকারের এটুআই প্রকল্পের স্পেশালিস্ট যুগ্মসচিব আবদুস সবুর মণ্ডল) জন্য ফেরিটি আটকে রাখা হয়। কিশোর তিতাসের মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত করে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি)।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ভিআইপি কর্তৃক প্রদত্ত লোকেশন সঠিক ছিল না। ভিআইপি রওনা দেয়ার সময় থেকে ঘাট পর্যন্ত আসতে সময়ে সময়ে দেয়া লোকেশন অনুযায়ী যে সময় লাগার কথা তার চেয়ে বেশি বিলম্বে ঘাটে পৌঁছেন। ভিআইপি তার দেয়া লোকেশন অনুযায়ী সঠিক সময়ে ঘাটে পৌঁছলে অনেক আগেই ফেরি ঘাট ছেড়ে যেত। এতে মুমূর্ষু রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্সটি হয়তো নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছতে পারত। এর উল্টো প্রতিবেদন দিয়েছে মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের গঠিত তদন্ত কমিটি। তাদের প্রতিবেদনে মাদারীপুর কাঁঠালবাড়ি ফেরিঘাটে স্কুলছাত্র তিতাস ঘোষের মৃত্যুর ঘটনায় সেই যুগ্মসচিব আবদুস সবুর মণ্ডল ও মাদারীপুর জেলার ডিসিরও কোনো দায় খুঁজে পায়নি তদন্ত কমিটি।

ইউএনওর ফেসবুক স্ট্যাটাস ভাইরাল : চলতি বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হোসনে আরা বেগম বীনাকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করে আদেশ জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এরপর গত ৯ ফেব্রুয়ারি ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন হোসনে আরা। স্ট্যাটাসে তিনি সন্তানসম্ভবা হওয়ার পর একজন বিশেষ কর্মকর্তা তাকে অযোগ্য হিসেবে উপস্থাপন করে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা থেকে বদলির পাঁয়তারা করেন বলে দাবি করেন।
তার সন্তান প্রসবের সম্ভাব্য তারিখ ছিল এপ্রিলের ২০ তারিখ, কিন্তু ওএসডি হওয়ার খবর শুনে প্রচণ্ড মানসিক চাপে ফুসফুসে ব্লাড সার্কুলেশন অস্বাভাবিকভাবে কমে যায়, ফলে পেটের সন্তানের অক্সিজেন সাপ্লাই বন্ধ হয়ে যায়। ৫ ফেব্রুয়ারি তার ৩১ সপ্তাহ বয়সী প্রি-ম্যাচিউর সন্তান সিজার করে বের করে ফেলা হয়।
তার এই স্ট্যাটাস প্রশাসনসহ বিভিন্ন মহলে তুমুল আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেয়। পরে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, কাজের চাপে নারায়ণগঞ্জের সন্তানসম্ভবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হোসনে আরা বেগম বীনার অসুস্থতা আরো বাড়তে পারে সেজন্য তাকে ওএসডি করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *