চট্টগ্রাম, , মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪

হিল্লোল দত্ত আলীকদম, বান্দরবান প্রতিনিধি

আলীকদমে উজাড় হচ্ছে বনাঞ্চল, নিরব ভূমিকায় বনবিভাগ

প্রকাশ: ২০২০-০১-২২ ১৭:৫৭:৫৬ || আপডেট: ২০২০-০১-২২ ১৮:০০:১৫



হিল্লোল দত্ত, আলীকদম (বান্দরবান) প্রতিনিধি :
বান্দরবানের আলীকদম-থানচি সড়কের দু-ধারে ও মাংগু মৌজার বিস্তির্ণ বনভূমিতে চলছে বনখেকোদের রামরাজত্ব। অবৈধভাবে কাঠ পাচার হচ্ছে দেখেও বনবিভাগ নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। দীর্ঘদিন ধরে আলীকদমে বৃক্ষনিধনকারীদের দাপটে পাহাড়গুলো বৃক্ষশুণ্য হয়ে পড়ছে। প্রতিদিন হাজার হাজার মন কাঠ পাচার হচ্ছে এসব পাহাড় থেকে, অথচ সরকারও পাচ্ছেনা কোন প্রকার রাজস্ব।

একসময় এসব এলাকায় বনভূমির বিস্তার ছিল আমাজনের আদলে। কিন্তু কতিপয় কাঠ ব্যবসায়ী দীর্ঘদিন ধরে উজাড় করে আসছে এসব বনাঞ্চল। ছাড় দেয়া হচ্ছেনা রাস্তার পাশে থাকা বৃক্ষগুলোকেও। দেদারছে কাটা হচ্ছে কাঠ আর পর্যটন স্থানের সৌন্দর্য নষ্ট করে ন্যাড়া করে ফেলা হচ্ছে পাহাড়ের পর পাহাড়।


সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পর্যটন নির্ভর এলাকা আলীকদম-থানচি সড়কের ১৩ কিলোমিটার থেকে ২৩ কিলোমিটারের মধ্যে ত্রিপুরা পাড়া, লাংড়ি পাড়া, দিরি পাড়া, ছালা পাড়া, আদুপাড়া, মাংগু মৌজার মেনপা পাড়া, রেংইয়া পাড়া, রুইপা পাড়া, কলার ঝিরির আগাসহ তৈনফা মৌজার বিভিন্ন এলাকার অজস্র পাহাড় থেকে গাছ কেটে স্তুপ করে রেখেছে গাছ পাচারকারী এসব সিন্ডিকেট।

মুষ্টিমেয় কিছু অসাধু কর্মকর্তাকে পকেটস্থ করে অবাদে বন নিধন করে আসছে এসব বনখেকোরা। দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এপাহাড় থেকে ওপাহাড়ে। কয়েকজন কাঠ শ্রমিকের সাথে কথা বলে জানা যায়, এসব কাঠ জনৈক মোঃ আলী সওদাগর, মোঃ ইসমাইল, মোঃ বেলাল, মোঃ ইমাম হোসেন, মোঃ হাবিব, মোঃ আলম, মোঃ শহিদুর রহমান, মোঃ আবুহান, শুক্কুর মৌলভী, মোঃ ওসমান, আব্দুছ ছবুরসহ অনেকেই আছে যারা পাহাড় থেকে এসব গাছ নিধন করে আসছে। আমরা দিনমজুর, দিন শেষে শুধুমাত্র পারিশ্রমিকটাই পাই।

এসময় গাছ কাটার জন্য বেশ কিছু আধুনিক মেশিন দেখা যায় শ্রমিকদের কাছে। দ্রুত বেশি মাত্রায় গাছ কাটার জন্য এসব মেশিন ব্যবহার হয় বলে জানান শ্রমিকরা।


নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ব্যবসায়ী বলেন, আমাদের একটি সমিতি আছে। সমিতি মণ প্রতি আমাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে বিভিন্ন প্রশাসনকে ম্যানেজ করে। তারপরও আমরা সংশ্লিষ্ঠ বনবিভাগকে গাড়ি প্রতি টাকা দিয়ে থাকি। অপর এক ব্যবসায়ী মোঃ আলী সওদাগর বলেন, আমরা ছোটখাট ব্যবসায়ী। ব্যবসা করে পরিবারের খরচ চালাই। এসব নিয়ে না লিখে অনেক কিছুইতো আছে লিখার মত। সেসব বিষয় নিয়ে লিখার পরামর্শ দেন সংবাদিকদেরকে।


জানতে চাইলে ১নং আলীকদম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাছির উদ্দিন হতাশা প্রকাশ করে বলেন, বন ও পরিবেশ রক্ষায় আমরা আন্তরিক। কিন্তু আমাদের ক্ষমতা নেই, আমরা নিরুপায়। অপরদিকে আলীকদম উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি সমরঞ্জন বড়ুয়া বলেন, বর্তমান সরকার পরিবেশ রক্ষায় বদ্ধপরিকর। অপরদিকে সরকার কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন ভাতা পর্যাপ্ত পরিমানে বৃদ্ধি করেছে।

তথাপিও বন বিভাগের কর্মকর্তারা কাঠ পাচারকারীদের সাথে আঁতাত করে প্রকৃতিকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। আমি পরিবেশ রক্ষায় সংশ্লিষ্ঠ প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করি। সেই সাথে বিষয়গুলো গণমাধ্যমে তুলে ধরার জন্য কর্মরত সংবাদকর্মীদেরকে আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।


এবিষয়ে জানতে চাইলে লামা বন বিভাগের অধিনস্ত তৈন রেঞ্জ কর্মকর্তা শামসুল হুদা বলেন উর্দ্ধোতন কর্মকর্তাদের অনুমতি ছাড়া আমরা মিডিয়াতে কোন প্রকার বক্তব্য দিতে পারিনা। তবে সাংবাদিকের কৌশলী প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন বিষয়টি আমরা দেখবো। অপরদিকে লামা বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এস এম কাইছার এর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে এবিষয়ে কিছু বলতে পারবো না বলে তিনিও উর্দ্ধোতন কর্মকর্তার দোহাই দিয়ে বিষয়টি এড়িয়ে যান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *