চট্টগ্রাম, , শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

আব্দুল্লাহ মনির, টেকনাফ(কক্সবাজার) প্রতিনিধি

মালয়েশিয়াগামী ট্রলার ডুবি: লাশ উদ্ধার: ১৫ আটক-৪

প্রকাশ: ২০২০-০২-১১ ১৯:৩৪:০৭ || আপডেট: ২০২০-০২-১১ ১৯:৪৯:১৮

আব্দুল্লাহ মনির, টেকনাফ:

সেন্টমাটিন বঙ্গোপসাগর থেকে মালেশিয়াগামী ট্রলার ডুবির ঘটনায় ১৫ জনের মৃতদেহ ও ৭২ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানায় কোস্টগাড। এ ঘটনায় পাচারে জড়িত টেকনাফ বাহারছড়া নোয়াখালী পাড়ার ফয়েজ আহম্মদ(৪৮),  টেকনাফ সদরের সৈয়দ আলম (২৭),  উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আজিম(৩০) ও বালুখালীর ওসমান(১৭)কে আটক করেছে কোস্টগার্ড।

কোস্টগার্ড টেকনাফ স্টেশন কমান্ডার লে: সোহেল রানা জানায়, মঙ্গলবার (১১ ফ্রেব্রুয়ারি) সকালে সেন্টমাটিন বঙ্গোপসাগরের অদূরে মালেশিয়াগামি একটি বোট সাগরে ডুবে যাওয়ার খবর দেয় সেন্টমার্টিন কোস্টগাড ।

এ খবরে সিজি স্টেশন টেকনাফ ও সেন্টমার্টিন উদ্ধার কাজ শুরু করি। এই উদ্ধারে কোস্টর্গাডের মেটালসার্ক, একটি কাটের ও ৮ টি স্পিড বোট নিয়ে সেন্টমার্টিন বঙ্গোপসাগরে উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করে এ পর্যন্ত ভাষমান অবস্থায় ৭২ জনকে জীবিত এবং ১৫ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।

এসব মৃতদেহের মধ্যে ১২ জন নারী ও ৩ জন শিশু রয়েছে। জীবিতদের মধ্যে ৪৭ জন নারী, ৪ জন শিশু ও ২১ জর পুুুুরুষ। তবে এখনো উদ্ধার তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায় বঙ্গোপসাগরে ট্রলার ডুবির ঘটনায় প্রায় অর্ধশতাধিক নিখোঁজ রয়েছে।মৃতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। নিখোঁজদের খোঁজে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর দুটি হেলিকপ্টার সাগরে টহল দিচ্ছে। উদ্ধার মালয়েশিয়াগামীদের কে সেন্টমার্টিনে প্রাথমিক চিকিৎসা দিচ্ছে কোস্টগার্ড সদস্যরা । নিখোঁজদের উদ্ধার করার জন্য অভিযান এখনো অব্যাহত রয়েছে।

উদ্ধার বালুখালীর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মো: জুবাইর জানায়, টেকনাফের বাহারছড়া নোয়াখালী পাড়ার সৈয়দ আলম ও নুরুল আলম নামের দুই ব্যাক্তি আমাদেরকে ক্যাম্প থেকে নিয়ে আসে।

রাতে ওই এলাকা থেকে একটি ট্রলারে ১৪৮ জনকে তুলে দেয়। সকালের দিকে সেন্টমাটিন থেকে প্রায় ৮/১০ কিলোমিটার পশ্চিমে একটি পাথরে ধাক্কা লাগে সাথে সাথে ট্রলারটি সাগরে ডুবে যায়।

তখন কে কোথায় চলে যায়। তবে এ ঘটনাটি সকালের দিকে হওয়ায় আমরা রক্ষা পেয়েছি। যদি রাতের বেলায় হলে সবাইকে মৃত্যু ছাড়া কোন উপায় ছিলনা বলে জানায়।
তিনি বলেন, পরিবারের কথা চিন্তা করে উন্নত জীবনের আশায় এ পথে যেতে চাইলাম মালয়েশিয়া, কিন্তু আজ সব শেষ হয়ে যেত।

উদ্ধার হওয়া নারীদের মধ্যে উখিয়ার কুতুপালং-৪ শিবিরের রোজিনা আক্তার। তিনি জানান, তাঁদের মিয়ানমারের রাখাইনে বাড়ি ঘর ও সংসার নিয়ে খুব ভাল ছিল। সেই সব ঘরবাড়ি রেখে এখন ঠাঁই হয়েছে উখিয়ায় পাহাড়ের ঝুপড়ি ঘরে। এনজিও দেওয়া ত্রাণে চলছে পরিবার।


তিনি বলেন, ‘এর মধ্যে বয়সটাও বাড়ছে। বিয়ে তো করতে হবে। অনেক চিন্তা করে পরিবারের সিদ্ধান্তে মালয়েশিয়া যাওয়ার চিন্তা করি।’
এই নারী জানান, মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত এক রোহিঙ্গা যুবকের সঙ্গে তাঁর বিয়ে ঠিক হয়েছে।

ওই ছেলের সাথে সংসারের আশায় তার কাছে যাচিছলাম। কিন্তু বিয়ের স্বপ্ন পূরণ দূরে থাক আল্লাহ প্রাণে রক্ষা করেছেন।

উদ্ধার কয়েকজন নারী একই ক্যাম্পের সেলিনা বেগম জানিয়েছেন, শিবিরে বিয়ে করতে চাইলে বর পক্ষকে টাকা দিতে হয়। তাছাড়া ভাল ছেলে পাওয়াই যায়না। তাই মালয়েশিয়ায় এক আত্মীয়ের মাধ্যমে রোহিঙ্গা ছেলের সাথে বিয়ের সব কাজ সম্পন্ন করেছি। তার কথা মত এ পথে মালয়েশিয়া পাড়ি দিতে এসেছি। এত বড় দূঘটনা থেক আল্লাহ বাচিয়েছেন।

তবে সমুদ্রপথে মানব পাচারকারী চক্র এবার পাচারের জন্য উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা শিবিরকে বেছে নিয়েছে। বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের টার্গেট করে সক্রিয় হয়ে উঠেছে তারা।

এসব পাচারের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে রোহিঙ্গাদেরই একটি দালাল চক্র। এ সব পাচারকারী চক্রের সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থার দাবী করছেন এলাকাবাসী।


এদিকে জেলা আইন-শৃঙ্খলা সভায় জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন জানান, সাগরে ট্রলার ডুবির ঘটনায় নিখোঁজ হওয়া ব্যক্তিদের উদ্ধার করার জন্য বিমান বাহিনীর দুটি হেলিকপ্টার, নৌবাহিনী ডুবুরি, ও কোস্টগার্ডের প্রশিক্ষিত টিমের সদস্যরা উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রেখেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *