চট্টগ্রাম, , রোববার, ১৪ এপ্রিল ২০২৪

আব্দুল্লাহ মনির, টেকনাফ(কক্সবাজার) প্রতিনিধি

দালালরা ফের সক্রিয় ১৯ জনের বিরুদ্ধেে মামলা আটক-৮

প্রকাশ: ২০২০-০২-১২ ২০:৫৫:২১ || আপডেট: ২০২০-০২-১২ ২০:৫৫:২৯


আব্দুল্লাহ মনির,টেকনাফ :

শীত মৌসুমে সাগর শান্ত থাকে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে মানব পাচারে জড়িত দালাল চক্রের সদস্যরা আবারও সক্রিয় হয়ে তাদের অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে।
অবৈধ পথে মালয়েশিয়া নিয়ে যাওয়ার জন্য দালালরা এখন টার্গেট করছে উখিয়া ও টেকনাফে ক্যাম্প ভিত্তিক রোহিঙ্গাদেরকে।

জানা যায়,প্রতিটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সক্রিয় রয়েছে দালাল চক্রের সদস্যরা। তারা অসহায় রোহিঙ্গাদেরকে বিভিন্ন মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে ট্রলারে চেপে সাগরপথে মালয়েশিয়া পাড়ি জমাতে আগ্রহী করে তুলছে। এর আগে একাধিক সময় টেকনাফ উপকুল ব্যবহার করে সাগর উপকূল দিয়ে মালয়েশিয়া মানবপাচার হয়েছিল।

প্রশাসনের কঠোর প্রতিরোধে তাদের সেই অপচেষ্টা বন্ধ হয়ে যায়। এই পথে দীর্ঘদিন মানবপাচার বন্ধ থাকার পর দালাল চক্রের সদস্যরা আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তারা স্থানীয় প্রশাসনের চোঁখ ফাঁকি দিয়ে আবারও চালিয়ে যাচ্ছে অবৈধ পথে মানব পাচার।
১১ ফেব্রুয়ারি (মঙ্গলবার) সাগরপথে মালয়েশিয়া যাওয়ার সময় সেন্টমার্টিনের অদূরে দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে ১৪৮ জন রোহিঙ্গা বোঝাই যাত্রীসহ ট্রলার সাগরে ডুবে যায়। এসময় ১৫জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।

টলার ডুবির ঘটনার পর থেকে স্থানীয় প্রশাসন নড়েচড়ে বসেছে ।রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ও উপকূলীয় এলাকায় নজরদারি বৃদ্ধি করেছে স্থানীয় প্রশাসন । এ সময় কোস্টগার্ড ও পুলিশ অভিযান চালিয়ে পাচারের সাথে জড়িত ৮ দালালকে আটক করেছে।


আটক দালাল এরা হচ্ছে, ফয়েজ আহমদ (৪৮) আঃ আজিজ (৩০) মোঃ উসমান (১৭) মোঃ সৈয়দ আলম (২৭) সাদ্দাম (২৫) আইয়ুব (৩৫) হুমায়ুন (৩৭)ও রফিক(২৮)।

টেকনাফ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ বলেন, ট্রলার ডুবির ঘটনায় কোস্টগার্ড বাদী হয়ে ১৯ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। ঘটনার সাথে জড়িত ৮ দালালকে আটক করা হয়েছে। এবং আটকের পাশাপাশি এর সাথে আরও কারা জড়িত তাদেরকে বের করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।


তিনি আরো বলেন রোহিঙ্গা ভিত্তিক কিছু দালাল রোহিঙ্গাদেরকে মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে অল্প খরচে সাগরপথে মালয়েশিয়া পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে একটি চক্র কাজ করছে। এই চক্রটি ধরার জন্য আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে।

খবর পেয়ে টেকনাফে দায়িত্বরত কোস্টগার্ডের স্টেশন কমান্ডার লেফট্যানেন্ট এম সোহের রানা বলেন, সেন্টমার্টিনের অদূরে গভীর বঙ্গোপসাগরে একটি ট্রলারডুবির ঘটনা ঘটে।

খবর পেয়ে বাংলাদেশের জলসীমায় দায়িত্বরত নৌ-বাহিনী ও কোস্টগার্ড সদস্যরা ১৫টি মৃতদেহ এবং এই পর্যন্ত ৭৩ জন মালয়েশিয়াগামীকে জীবিত উদ্ধার করতে সক্ষম হয়।
তিনি আরো বলেন মানব পাচারের সাথে জড়িত ৪ দালালকে আটক করেছি। এবং আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে।

জীবিত উদ্ধার হওয়া রোহিঙ্গারা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বলেন দালালদের খপ্পরে পড়ে তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মালয়েশিয়া পাড়ি দিচ্ছিল।
প্রানে রক্ষা পাওয়া উদ্ধার হওয়া রোহিঙ্গা নারী ‘ইসমতআরা’ বলেন, মালয়েশিয়াতে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছিল।

পরিবার সদস্যরা মিলে আমাকে স্বামীর কাছে পাঠানোর জন্য ট্রলারে তুলে দিয়েছেন। আমাকে বলা হয়েছিল জাহাজে করে নেয়া হবে, তবে এখানে এসে দেখি কাঠের ট্রলারে করে পাঠানো হচ্ছে।

উল্লেখ্যঃ-গত কয়েক মাসের মধ্যে সাগর পথে ট্রলারে চেপে মালয়েশিয়া যাওয়ার সময় এ পর্যন্ত প্রায় ৭শতাধিক মালয়েশিয়াগামীকে উদ্ধার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। তারা সবাই বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা।

টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্প রোহিঙ্গাদের সাথে কথা বলে জানা যায়,অবৈধ ভাবে সাগরপথে মালয়েশিয়া পাড়ি দেওয়া বেশির ভাগ যাত্রী হচ্ছে নারী। কারন দালালরা টার্গেট করছে এই সুন্দরী যুবতীরা মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত রোহিঙ্গা যুবকদের সাথে মোবাইল এর মাধ্যমে তাদের বিয়ের কথাবার্তা ঠিক করে মালয়েশিয়া থেকে দালালদের সাথে যোগাযোগ করে ।

দালাল চক্রের সহযোগীতা নিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া অনেক বিবাহিত নারীও তাদের শিশু সন্তানসহ সেখানে স্বামীর কাছে যাওয়ার জন্য দালালদের কাছে ধর্না দিচ্ছে।

নয়াপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা কবির হোসেন বলেন, যারা দালালদের মাধ্যমে বাংলাদেশী পাসপোর্ট করাতে পেরেছেন তারা বাংলাদেশী সেজে আকাশপথে মালয়েশিয়াসহ মধ্যপাচ্যের
বিভিন্ন দেশে পাড়ি দিচ্ছে।


কিন্তু সম্প্রতি সময়ে রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট করা নিয়ে সরকার কঠোর নজরদারী থাকার কারনে অবৈধ ভাবে সাগরপথে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মালয়েশিয়া যেতে রাজি হচ্ছে। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দালাল চক্রের সদস্যরা পুনরায় সক্রিয় হয়ে চালিয়ে যাচ্ছে মানব পাচার। এ চক্রের সদস্যরা প্রথমে কম টাকায় মালয়েশিয়া পৌঁছে দেয়ার কথা বললেও পরে সেখানে গিয়ে স্বজনদের হাতে পৌঁছিয়ে দেয়ার আগে মোটা অংকের টাকা দাবি করেন। টাকা দিতে ব্যর্থ হলে
বিভিন্ন ধরনের নির্যাতনের পথ বেচে নেয়।

টেকনাফের লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা ছালামত উল্লাহ জানান, সাগরপথে মালয়েশিয়া পাচারকারী দালাল চক্রের সদস্যদের সাথে এদেশের স্থানীয় কিছু ব্যক্তিও সম্পৃক্ত রয়েছে। শীত মৌসুমে সাগর অনেকটা শান্ত থাকে, তাই দালালরা মানবপাচার করার জন্য শীত মৌসুমকে কাজে লাগাতে তৎপর হয়ে উঠে।

টেকনাফ র‌্যাব-১৫ সিপিসি-১ এর কেম্পানি কমান্ডার লেফট্যানেন্ট কমান্ডার মির্জা শাহেদ মাহতাব বলেন, মানবপাচারকারী দালালরা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অসহায় নাগরিকদের টার্গেট করে নতুন করে সাগরপথে মানবপাচারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের সেই অপচেষ্টা প্রতিরোধ করার জন্য অভিযান অব্যাহত থাকবে।


তিনি আরো বলেন টেকনাফ উপকুল ব্যবহার করে যারা আবারও মানব পাচারের অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সেই সমস্ত দালালদের নির্মুল করার জন্য র‍্যাব সদস্যরা সদা প্রস্তুত রয়েছে। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *