চট্টগ্রাম, , শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

admin

চকরিয়ায় সওজের জায়গায় বিলাস বহুল বাড়ি : সড়ক নির্মাণে ভবনের অবৈধ অংশ ভাঙ্গতে বাঁধা দিচ্ছেন বাড়ির মালিক !

প্রকাশ: ২০২০-০৩-১৫ ০১:১০:০১ || আপডেট: ২০২০-০৩-১৫ ০১:১১:২২


চকরিয়া অফিস :
কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার লক্ষ্যারচর ইউনিয়নের জিদ্দাবাজার এলাকায় সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) জায়গা অবৈধ দখলে নিয়ে বিলাস বহুতল ভবন নির্মাণের পর এবার নতুন করে সড়ক প্রশস্থকরণের সময় ওই ভবন ভাঙ্গতে বাঁধা দেয়ার অভিযোগ উঠেছে বাড়ির মালিক আবুল কাশেমের বিরুদ্ধে। ফলে ৫৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন ইয়াংছা, সুরাজপুর-মানিকপুর, কাকারা-মাঝের ফাঁড়ি, কৈয়ারবিল ও বরইতলী শান্তিরবাজার পর্যন্ত প্রায় ৩০কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের কাজ থমকে আছে গত একমাস ধরে।

সওজের জায়গা দখল করে নির্মাণ করা বিলাস বহুতল বাড়ি রক্ষায় ভবন মালিক আবুল কাশেম টাকার থলে নিয়ে বিভিন্ন প্রভাবশালী মহলের কাছে ধর্ণা দিচ্ছেন। পাশাপাশি ভবন রক্ষায় মোটা অংকের টাকা দিয়ে সওজ কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করার চেষ্ঠা অব্যাহত রাখায় বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ ও মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।


জানা যায়, লামার উপজেলার সীমান্তবর্তী ইয়াংছা হতে সুরাজপুর-মানিকপুর, কাকারা-মাঝের ফাঁড়ি, কৈয়ারবিল ও বরইতলী ইউনিয়নের শান্তিবাজার পর্যন্ত প্রায় ৩০কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের টেন্ডার প্রদান করেন সড়ক ও জনপথ বিভাগ। ইতোমধ্যে টেন্ডার প্রক্রিয়া সমাপ্তির পর ৫৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ২৬ ফুট প্রস্থ ওই সড়কটির নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করছেন একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।

প্রায় ২০ টন ওজনের গাড়ি চলাচলের উপযোগী করে গড়ে তোলা নির্মাণাধীন সড়কটি লামার সীমান্তবর্তী ইয়াংছা থেকে চকরিয়া উপজেলার জিদ্দাবাজার আরকান মহাসড়কের পূর্বপাশ পর্যন্ত সড়কের দুইপাশ ২৬ফুট পর্যন্ত প্রশস্থ করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মাটি ভরাটের কাজ প্রায় শেষ করেন। কিন্তু জিদ্দাবাজারের পশ্চিম পার্শ্বের সড়ক প্রশস্থকরণের জন্য গত একমাস পূর্বে সওজ কর্তৃপক্ষকে নিয়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজ করতে গেলে তাদের বাঁধা দেন বিলাস বহুল ভবনের মালিক আবুল কাশেম।

সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) জায়গা অবৈধ দখলে নিয়ে তিনি বহুতল ভবন নির্মাণ করলেও তা ভাঙ্গতে দিতে নারাজ ওই ভবন মালিক। ফলে গত একমাস থেকে ওই এলাকায় থমকে আছে নতুন সড়ক নির্মাণের কাজ।


স্থাণীয় লোকজনের অভিযোগ, পেকুয়া উপজেলার মগনামা ইউনিয়নের বাসিন্দা আবুল কাশেম চকরিয়া উপজেলার লক্ষ্যারচর ইউনিয়নের জিদ্দাবাজার এলাকায় প্রায় কোটি টাকা দিয়ে এক খন্ড জমি ক্রয় করেন। পরবর্তীতে ওই জমিতে বিলাস বহুল বাড়ি নির্মাণের সময় সওজের সড়কের বেশকিছু অংশ তার নির্মাণাধীন ভবনে ঢুকিয়ে নেন।

ওই সময় বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়ভাবে নানা গুঞ্জন শুরু হলে বিষয়টি প্রভাবশালী মহলকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে নেন জমির মালিক আবুল কাশেম। পরবর্তীতে সওজের জায়গা অবৈধ দখলে নিয়েই বিলাসবহুল বাড়ি নির্মাণ করেন প্রভাবশালী আবুল কাশেম।
স্থানীয়রা আরও অভিযোগ করেন, সড়কটি নির্মাণের পূর্বে সড়ক ও জনপথ বিভাগের পক্ষ থেকে পরিমাপ করে সওজের জমি চিহ্নিত করা হয়। ওইসময় সওজের জমি দখল করে গড়ে উঠা স্থাপনা সমুহ লাল দাগ দিয়ে চিহ্নিত করে তা ভেঙ্গে ফেলারও নির্দেশনা প্রদান করেন সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ)। কিšুÍ সওজের ওই নির্দেশনায় কর্ণপাত করেননি বিলাস বহুল ভবনের মালিক আবুল কাশেমসহ অবৈধ দখলদারা।

অবশেষে সওজের জমি উদ্ধারে গত ২২ ফেব্রুয়ারী জিদ্দাবাজার এলাকায় সড়কের দু’পাশে বেশিকিছু অবৈধ স্থাপনায় উচ্ছেদ অভিযান চালায় সওজ কর্তৃপক্ষ। পরবর্তীতে সওজের জমি দখল করে নির্মাণ করা বিলাস বহুল বাড়ির অবৈধ অংশটি ভাঙ্গতে গিয়ে ভবন মালিক আবুল কাশেম ও তার ভাড়াটে লাঠিয়াল বাহিনীর তোপের মুখে পড়েন সওজের লোকজন। অবশেষে বাধ্য হয়ে ফিরে আসেন তারা।

পরবর্তীতে বিলাস বহুল বাড়ি রক্ষায় ভবন মালিক আবুল কাশেম বিভিন্ন প্রভাবশালী মহলের কাছে টাকার থলে নিয়ে ধর্ণা দিচ্ছেন। পাশাপাশি ভবন রক্ষায় মোটা অংকের টাকা দিয়ে সওজ কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করার চেষ্ঠা অব্যাহত রেখেছেন। যার ফলে গত একমাস পর্যন্ত বন্ধ রয়েছে সড়কটি নির্মাণের কাজ। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসীর মধ্যে চরম ক্ষোভ ও মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।


এব্যাপারে সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) বক্তব্য জানতে তাদের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষ কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে ভবন মালিক আবুল কাশেমের দাবী, তার নির্মাণ করা ভবনটি সওজের তেমন কোন জায়গায় পড়েনি। সওজের সামান্য কিছু অংশ তার ভবনের মধ্যে পড়েছে স্বীকার তিনি ভবন মালিক আবুল কাশেম বলেন, বিষয়টি নিয়ে সওজের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা হয়েছে।

সড়ক নির্মাণের সময় ওই ভবনটি ভাঙ্গতে হবে না বলে সওজ কর্তৃপক্ষ কথা দিয়েছেন বলেও জানান ভবন মালিক আবুল কাশেম। এব্যাপারে সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) চকরিয়া শাখার উপ-সহকারী প্রকৌশলী আবু এহেছান মো. আজিজুল হক মোস্তফা বলেন, নতুন নির্মানাধীন সড়কে পূর্বের সড়কের বাইরে নতুন কোন জায়গা অধিগ্রহণ করা নাই। তারপরও যেহেতু ওই সড়কটি প্রশস্থ করে ২৬ ফুট করা হচ্ছে।

সেজন্য ভূমি আইন অনুসরণ করে বর্তমান সড়ক ১২ ফুটের বাইরে সড়কের দুইপাশে আরো ১৪ ফুট জায়গা অধিগ্রহণ করে দখলমুক্ত করা হবে। এক্ষেত্রে যত প্রভাবশালী ব্যক্তির বসতভিটা ও ভবন হউক না কেন তাদের কাউকেই ছাড় দেওয়া হবেনা। ##

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *